গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতার ৫ দিন পর সবাইকে হতবাক করে দিয়ে রিয়ালের প্রধান কোচের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান জিদান। কারণ হিসেবে তিনি ফুটবল থেকে বিরতি ও পরিবারকে সময় দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
রোনালদোকে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন জিদান। সোনার ডিম পাড়া হাঁস কি কেউ হাতছাড়া করতে চায়? কিন্তু ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের তাতে সায় ছিল না। তিনি বরং বেল-বেনজেমাদের নিয়েই স্বপ্ন দেখতে থাকেন। সেই সঙ্গে পিএসজি তারকা নেইমার, এমবাপ্পে কিংবা চেলসির বেলজিয়ান তারকা এডেন হ্যাজার্ডদের দিকেও হাত বাড়িয়েছিলেন। তাতে সফলতা আসেনি। উল্টো গোলখরা আর একের পর এক পরাজয় মিলিয়ে নিকট অতীতের হিসেবে সবচেয়ে বাজে সময় কাটাচ্ছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।
১১০ মিলিয়ন ইউরোতে জুভেন্টাসের কাছে পর্তুগিজ তারকাকে বেচে দিয়ে যে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মেরেছে রিয়াল, তা তো এখন জলের মতো পরিস্কার। এমনটা ঘটবে জেনেই আগেভাগেই বিপদ টের পেয়ে সরে যান জিদানও। দুই মহীরুহের বিদায়ে রিয়াল যেন তার ঐতিহ্যই হারাতে বসেছে। ইউরোপীয় ফুটবলের মহাশক্তি রিয়াল এখন রাজ্য হারানো রাজা যেন।
জিদানের পর দায়িত্ব নেওয়া হুলেন লোপেতেগি ১৪ ম্যাচে মাত্র ৬ জয় নিয়ে বরখাস্ত হন। ভারপ্রাপ্ত কোচ সোলারিও পারলেন না দুর্দশা ঠেকাতে। এখন তারও বিদায়ের পালা। জিদান-রোনালদোর অভাব কী আর এমনিতেই ঘোচানো সম্ভব?
জিদান-রোনালদো জুটি রিয়ালের জন্য কতটা ফলপ্রসূ ছিল তা পরিসংখ্যানেই পরিস্কার। রোনালদো আসার আগের ৫ মৌসুমে যেখানে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো ছিল রিয়ালের শেষ গন্তব্য, সেখানে রোনালদো আসার পর ৪ শিরোপা জয়, ৪ সেমিফাইনাল, মোটেই সহজ কথা নয়। এর মধ্যে জিদানের অধীনেই টানা তিন শিরোপা এসেছে।
গত এক সপ্তাহে ভয়ানক সময় কাটিয়েছে রিয়াল শিবির। বার্সেলোনার কাছে হেরে কোপা দেল রে’র নকআউট পর্ব থেকে বিদায়ের পর একই দলের কাছে হেরে লা লিগার শিরোপাও ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া এবং সর্বশেষ আয়াক্সের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে বিদায়।
দলের এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে ক্লাবের কিংবদন্তি জিদানকে ফেরত চাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী জিদানের তাতে সায় নেই। দলের এমন বাজে অবস্থার দায় তিনি যে নিতে চাইবেন না তা বোঝাই যাচ্ছে। তার কোচিং ক্যারিয়ারে তো মৌসুমের শেষ ভাগটা যোগ হবে। এই কলঙ্ক তিনি নিতেই চাইবেন কেন?
সাবেক রিয়াল প্রেসিডেন্ট র্যামন ক্যালদেরন অন্তত তাই বললেন। বিবিসি রেডিওতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যালদেরন বলেন, ‘জিদানকে ফিরতে বলেছেন পেরেজ, কিন্তু সে (জিদান) বলেছে, এখনই নয়। তবে সে আগামী জুনে (পরবর্তী মৌসুম) ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। ’
এদিকে রিয়ালে ফিরলেও কিছু শর্ত হয়তো যোগ করবেন জিদান। রোনালদোর বিদায়ে যে বিপদ হয়েছিল, এবার তেমন কিছু যেন না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে চাইবেন তিনি। বিশেষ করে দলবদলের সিদ্ধান্ত নিজের হাতে রাখার শর্ত তো অবশ্যই রাখতে চাইবেন ‘জিজু’।
তবে শুধু জিদান নন, রিয়ালের চোখ পড়েছে লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের দিকেও। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ‘অলরেডস’দের কোচকে নাকি গ্রীষ্মেই আনতে চায় রিয়াল, ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট অন্তত তাই দাবি করছে। এছাড়া টটেহ্যামের কোচ মাউরিসিও পোচেত্তিনোর দিকেও হাত বাড়ানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সবমিলিয়ে সোলারির হাতে যে রিয়ালের ব্যাটন আর নিরাপদ নয়, তা হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছেন রিয়াল প্রেসিডেন্ট পেরেজ। কিন্তু পেরেজের হাতে কতটা নিরাপদ রিয়াল, এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? এরইমধ্যে তার পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। নিজের গদি সামলাতেই এখন হিমশিম অবস্থা পেরেজের।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৯
এমএইচএম/এমএমএস