ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩১, ৩০ জুলাই ২০২৪, ২৩ মহররম ১৪৪৬

ফুটবল

আলফনসো ডেভিস: শরণার্থী শিবির থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে

স্পোর্টস ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২০
আলফনসো ডেভিস: শরণার্থী শিবির থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে আলফনসো ডেভিস

জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন আলফোনসো ডেভিস।  

সোমবার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হবে বায়ার্ন মিউনিখ-প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)।

আর এই ম্যাচে বাভারিয়ানদের অন্যতম অস্ত্রের নাম ১৯ বছর বয়সী ডেভিস। যিনি কিনা কোয়ার্টার ফাইনারে বার্সেলোনার মতো পরাশক্তির বিপক্ষে দেখিয়েছিলেন প্রতিভার ঝলক।  

বিশ্বের সেরা একটি ক্লাবের হয়ে খেলা এই লেফ্ট-ব্যাকের এতদূর আসা সহজ ছিল না। লাইবেরিয়ান পিতামাতার সন্তান ডেভিসের জীবন কেটেছে ঘানার শরণার্থী শিবিরে।  

লাইবেরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় তার বাবা দেবাহ এবং মা ভিক্টোরিয়া পালিয়ে গিয়েছিলেন দেশটির রাজধানী মনরোভিয়া থেকে। সে সময়কার কথা স্মরণ করে ডেভিসের বাবা বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য, বন্দুক নিয়ে চলাফেরা করতে হতো এবং আমরা তা করতে চাইনি। ’ 

আর মা বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরে ছিল ভয়ঙ্কর অবস্থা। খেতে যেতে হলে লাশের ওপর দিয়ে যেতে হতো। ’ 

তারপর তাদের ঠাঁই হয় ঘানার রাজধানী আক্রার পশ্চিমে, বুদুবুরাম নামের এক শরণার্থী শিবিরি। পরে অবশ্য ভাগ্যন্বেষণে ডেভিসের পরিবার চলে আসেন কানাডায়।  

২০০৬ সালে এডমন্টনে স্কুল জীবন শুরু করেন ডেভিস। শিগগিরই তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ফুটবলের সঙ্গে। বল পায়ে তখন থেকে মেতে ওঠা ডেভিস অংশ হয়ে যান ফ্রি ফুটি নামে এক সংস্থার। যারা কিনা এডমন্টনে ৪ হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ফ্রি-তে ফুটবল খেলার সুযোগ করে দেয়।  

ডেভিসের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ফ্রি ‍ফুটি’র সিইও টিম অ্যাডামস বলেন, ‘যা কিছু ঘটেছে তার উদাহরণ হচ্ছে আলফনসো। সে ছোটবেলা থেকে ছিল স্পেশাল। ’

এই অ্যাডামসই সেন্ট নিকোলাস ক্যাথলিক স্কুলের শিক্ষক এবং ফুটবল একাডেমির ডিরেক্টর মার্কো বোসিও’র কাছে ডেভিসের ব্যাপারে সুপারিশ করেন। বোসিও কানাডার ক্লাব ভ্যানকুভার হোয়াইটক্যাপসের জন্য তরুণ প্রতিভার সন্ধানে ছিলেন।  

বোসিও বলেন, ‘শীর্ষে যাওয়ার জন্য ডেভিস মানসিকভাবে যথেষ্ঠ শক্তিশালী ছিল। আমি তাকে ফোনে হোয়াইটক্যাপের জন্য ট্রায়াল দিতে আমন্ত্রণ জানায় এবং তারা (ক্লাব কর্তৃপক্ষ) দেখে আমি কাকে নিয়ে এসেছি। ’ 

মাত্র ১৪ বছর বয়সে ডেভিস মুখোমুখি হয় ১ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ভ্যানকুভারে যাওয়ার চ্যালেঞ্চে। কিন্তু তার মা অনিশ্চিত ছিলেন, তার ছেলের ব্যাপারে। বিষয়টি নিয়ে ভীত ছিলেন ভিক্টোরিয়া। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ডেভিসের সময় লাগেনি।  

যেমন তার বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের সকার লিগ এমএলএসে হোয়াইক্যাপের জার্সিতে অভিষেকের জন্য। মাত্র ১৫ বছর ৮ মাস বয়সে ২১ শতকে জন্ম নেওয়া প্রথম ফুটবলার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ লিগে অভিষেক হয় ডেভিসের।  

২০১৭ সালে কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করেন তিনি এবং দেশটির জাতীয় দলে খেলার জন্যও নির্বাচিত হন। আর এক সপ্তাহ পরেই কানাডার জার্সি গাড়ে চড়ান ডেভিস। একই বছর গোল্ড কাপে, ফ্রেঞ্চ গায়ানার বিপক্ষে ম্যাচে উইঙ্গার হিসেবে খেলে কানাডার সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গোল করার রেকর্ড গড়েন তিনি।

ডেভিসের দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স নজর কাড়ে ইউরোপ ফুটবল দুনিয়ার। ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে বায়ার্নের চোখে পড়েন তিনি এবং ১৮ বছর বয়সে চলে আসেন জার্মানির ফুটবলে। ডেভিসের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে বায়ার্নের স্পোর্টিং ডিরেক্টর হাসান সালিহামিদজিক বলেন, ‘আমরা তার সঙ্গে চুক্তি করেছিলাম কারণ তাকে প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে দেখেছিলাম। ’ 

কথাটা যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ এখন হাতেনাতে পাচ্ছে জার্মান জায়ান্টরা। এবার বায়ার্নকে বুন্দেসলিগা জেতানো এবং চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তোলার ক্ষেত্রে দারুণ পারফর্ম্যান্স উপহার দিয়েছেন ডেভিস।  

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বায়ার্নের মূল দলে অভিষেক হয় তার। বুন্দেসলিগায় এখন পযর্ন্ত ৩৫ ম্যাচ খেলে ৪ গোল করেছেন তিনি। কানাডার জার্সিতে ১৭ ম্যাচে করেছেন ৫ গোল।  

খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতে উইঙ্গার হিসেবে খেলতেন ডেভিস। কিন্তু পরে হয়ে যান লেফ্ট-ব্যাক। তবে পেস এবং ড্রিবলিং দিয়ে প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোতে জুড়ি নেই তার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২০
ইউবি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।