ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

ম্যারাডোনার উত্তরাধিকারী যারা

মো. আশরাফুল মাখলুকাত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২০
ম্যারাডোনার উত্তরাধিকারী যারা

দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। ছিলেন ফুটবলের জাদুকর, ফুটবলের শিল্পী।

পায়ের কারুকাজে, শৈলীতে তিনি ফুটবলের উথাল-পাতাল প্রেমে মজিয়েছিলেন গোটা দুনিয়াকে। ৬০ বছরের জীবনে উল্কার গতিতে ছুটেছেন, জীবনকে উপভোগ করেছেন প্রাণভরে। বিপথে গেছেন, বিতর্কে জড়িয়েছেন। কিন্তু মানুষ তাঁকে ভালোবেসেছে পাগলের মতো। সেই ম্যারাডোনা সবাইকে হতবাক করে দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কিংবদন্তির মৃত্যুতে কাঁদছে গোটা বিশ্ব।  

দশ নম্বর জার্সির জাদুকর ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এসব নিয়ে অনেক বিতর্কও হয়েছে। আবার ভালোবাসার বন্ধনেও জড়িয়েছেন তিনি। যেসব নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি, তাদের কয়েকজন তাকে সন্তানও উপহার দিয়েছেন। কিন্তু জীবদ্দশায় তাদের সবাইকে আপন করে নেননি তিনি। কয়েকজনকে তো সন্তানের স্বীকৃতি দিয়েছেন অনেক দেরিতে। তবে তার মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছে, তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের উত্তরাধিকারী কারা হবেন?

ক্লদিয়া ভিলাফানে
তিনি ম্যারাডোনার সবচেয়ে নিকটতম। ম্যারাডোনা ক্লদিয়ার প্রেমে পড়েন  যখন তারা দুজনেই বয়সে তরুণ-তরুণী।  ১৯৮৯ সালে ক্লদিয়াকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বেছে নেন ম্যারাডোনা। তিনিই সেই রমণী যিনি তাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে দেখেছিলেন, তবে পরবর্তিতে বিভিন্ন কারণে তাদের সম্পর্ক আর টেকেনি। ১৯৯৮ সালে এই জুটির বিচ্ছেদ ঘটে। এই জুটির দুইটি কন্যা সন্তান আছে দালমা এবং জিয়ানিন্না। ক্লদিয়া ম্যারাডোনার বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে উত্তারাধিকারের যোগ্য দাবিদার।

দালমা ও জিয়ানিন্না
এই দুই সন্তান তাদের বাবা ম্যারাডোনাকে খুব কাছ থেকে পেয়েছেন। ম্যারেডোনা তার এই দুই সন্তানকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। ম্যারেডোনাকে বলতে শোনা যেত, "দালমা এবং জিয়ানিন্না হলো আমার বৈধ সন্তান। বাকিরা আমার অর্থ এবং ভুলের ফসল। "

ম্যারাডোনার অন্য সন্তানরা
দেরিতে হলেও ম্যারাডোনা আরও তিনজনকে নিজের সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। প্রথমজন হচ্ছেন ১৯৯৬ সালে ভ্যালেরিয়া সাবালাইনের সঙ্গে সম্পর্কের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া জানা। দ্বিতীয়জন হচ্ছেন ক্রিস্তিনা সিনাগ্রার ছেলে দিয়েগো জুনিয়র এবং সর্বশেষ ভেরোনিকা ওজেদার পুত্র দিয়েগো ফার্নান্দো।

ম্যারাডোনার কাছের অন্য বান্ধবীরা
রোকিও অলিভার আগে ম্যারাডোনার সঙ্গে ভেরোনিকা ওজেদার স্বল্পস্থায়ী সম্পর্ক ছিল। অলিভার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলে ওজেদার সঙ্গে ফুটবল ঈশ্বর আবার ঘনিষ্ঠ হন। ওজেদা দিয়েগোর মতো, ভিলা ফিয়েরিতোর বাসিন্দা ছিলেন।

রোকিও অলিভা
ম্যারাডোনার সর্বশেষ বান্ধবী, এবং যার সঙ্গে তিনি দুবাই, বুয়েনস আইরেস এবং মেক্সিকোয় সুখের সময় কাটিয়েছিলেন। তবে শত সুখস্মৃতির মাঝেও এই জুটির সম্পর্কে কিছু তিক্ততাও ছিল। তবে তাদের একসঙ্গে কোনো সন্তান নেই।

মাতিয়াস মোরলা
তিনি ছিলেন ম্যারাডোনার আইনজীবী। ম্যারাডোনা তাকে খুব বিশ্বাস করতেন। তবে ম্যারাডোনাকে দাফনের আগেই গুরুত্বপূর্ণ এক অভিযোগ আনেন তার আইনজীবী। তার অভিযোগ, ম্যারাডোনার মৃত্যুর পেছনে দায় রয়েছে লা প্লাতা আইপেনসা ক্লিনিকের। এখানেই চিকিৎসা নিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। তার মৃত্যুর দিন এই ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্স আসতে প্রায় ৩০ মিনিট দেরি করে। ফলে এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলে মনে করেন মোরলা।

লিওপলদো লোকো
তিনি ছিলেন ম্যারাডোনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। যদিও ম্যারাডোনার শেষ অস্ত্রোপাচারের সময় সহযোগী হিসেবে অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তিনি অপারেশন করেননি। জীবিত ম্যারাডোনার শেষ ছবিটি তিনিই পোস্ট করেছেন বলে দাবি করে বিতর্কিত হয়েছেন, অবশ্য পরে ম্যারাডোনার পরিবারের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। বাবা ম্যারাডোনার সঙ্গে ছেলে দিয়েগো ফার্নান্দোর তোলা ছবিটিকে তার শেষ ছবি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।  

ম্যাক্সি (মাতিয়াস মোরলা'র শ্যালক)
তিনি ছিলেন ম্যারাডোনার সেবক। কোনো কিছুতে প্রভাবিত না হয়ে তিনি ম্যারাডোনার সেবার ভার নিয়েছিলেন। তিনি ম্যারাডোনার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত নিজেকে ক্যামেরা থেকে দূরে রেখে তার কাজ সুনিপুণভাবে করেছেন,  অবশ্য কাজটা কষ্টসাধ্য ছিল সন্দেহ নেই।  

জোনাথন এসপোসিতো (জনি)
ম্যারাডোনার ভাতিজা, মারিয়া রোসার ছেলে। মঙ্গলবার রাতে ম্যারাডোনাকে শেষবারের মতো জীবিত দেখা শেষ ব্যক্তিই হলেন জনি। তিনিই মৃত্যুর আগে ম্যারাডোনাকে শেষবারের মতো বলতে শুনেছিলেন, "আমার খারাপ লাগছে, খুব অসুস্থ বোধ করছি। "

ম্যারাডোনার পরিবারের বাকি সদস্যরা 
ম্যারাডোনা তার বাবার আট সন্তানের মধ্যে পঞ্চম এবং পরিবারের প্রথম পুত্র সন্তান। তিনি বাদে তার বাকি ভাই-বোনদের কাউকেই কোনো সময় খুব একটা আলোচনায় আসতে দেখা যায়নি, তারা বেশ প্রচারবিমুখ। 'তারকা' ম্যারাডোনা নয়, তারা তাদের প্রিয় দিয়েগোকে নিয়েই খুশি ছিলেন।

আপনজনদের ছেড়ে দুর অজানায় মিলিয়ে গেছেন ম্যারাডোনা। ফুটবলের উত্তেজনা, ভক্তদের চাপ, ব্যক্তিগত জীবনের উত্থান-পতন সব থেমে গেছে। এখন এক নিরুদ্বেগ জীবন। কিন্তু তার উত্তরাধিকাররা হয়তো তার নাম প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে বেড়াবেন।  

ওপারে ভালো থাকবেন, ম্যারাডোনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।