২০ নভেম্বর, ২০২২। ফুটবল ইতিহাসে নিজেদের নাম স্থায়ীভাবে লিখতে চলেছে কাতার।
ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই ফুটবল আসর এখন পুরো বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আজ রাতেই দোহার আল বায়িত স্টেডিয়ামে কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'। এরপর প্রায় এক মাস চলবে এই মহারণ। কাতার পরের পর্বে না যেতে পারলেও দেশটির ওপর তীক্ষ্ণ নজর থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের।
২০১০ সালে আয়োজক স্বত্ব পাওয়ার পর থেকেই নানা বিতর্ক সঙ্গী হয়েছে কাতারের। প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু, অমানবিক পরিবেশে তাদের কাজ করানো এবং ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার মতো বহু অভিযোগ সঙ্গী করেই ১২ বছরের কঠোর পরিশ্রম ও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে স্বপ্ন সত্যি করেছে কাতারিরা। এবার মূল মঞ্চ পুরোপুরি প্রস্তুত। দলগুলো পৌঁছে গেছে। সমর্থকদের ভিড় উপচে পড়ছে কাতারের রাস্তাঘাটে। নানা রঙে ছেয়ে গেছে শহরতলি আর স্টেডিয়ামপাড়া। রক্ষণশীলতার বাঁধনে আটকে থাকা কাতারিরাও অস্থায়ীভাবে পাচ্ছে মুক্তির স্বাদ।
এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের। কারণ এটাই হতে যাচ্ছে ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং আধুনিক ফুটবলের দুই সেরা তারকা লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ। মেসির আর্জেন্টিনাকে এবার অন্যতম ফেভারিট ধরা হচ্ছে। অন্যদিকে রোনালদোর পর্তুগালও খুব একটা পিছিয়ে নেই। দুই মহাতারকাই এবার বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক দলীয় শিরোপাটি ছুঁয়ে দেখতে উন্মুখ থাকবেন। তাদের ভক্ত-সমর্থকরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন প্রিয় তারকার হাতে শিরোপা উঠতে দেখার।
কাতারের জন্য অবশ্য এত বিশাল আয়োজন মোটেই সহজ ছিল না। আরব-বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এই বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ১২ বছর ধরে প্রস্তুত হচ্ছে তারা। এর মাঝে তুমুল বিতর্ক আর অসংখ্য চ্যালেঞ্জ তো ছিলই। গত কয়েক বছরে এসব পেয়েছে অন্য মাত্রা। কাতার যখন ঘোষণা করলো তারা নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে- তখন থেকেই বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। যদিও আয়োজকদের দাবি, শীতকালে বিশ্বকাপ আয়োজন করলে মরুভূমি-প্রধান দেশটির তীব্র গরম থেকে কিছুটা মুক্তি পাবেন ফুটবলাররা।
গরমের ইস্যু থেকে বাঁচতে শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে কাতার। কিন্তু তারপরও খেলার পর বাকি সময়টা খেলোয়াড় ও সমর্থকদের বাইরে দিনের আলোয় খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। এ নিয়ে সেখানে খেলা দেখতে যাওয়া সমর্থকরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এরচেয়েও বড় কথা, কাতারের রক্ষণশীল আইন মেনেই আগামী এক মাস থাকতে হবে তাদের। আমুদে দর্শকদের জন্য যা মেনে নেওয়া একটু কঠিনই।
কাতারের ফুটবল-সংযোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। ফুটবল ঐতিহ্য দেশটিতে প্রায় অনুপস্থিত। বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে বাইরের দেশ থেকে খেলোয়াড় এনে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে জাতীয় দল বানিয়েছে তারা। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে তাদের আয়োজক স্বত্ব পাওয়া নিয়েই। অভিযোগ আছে, ফিফাকে ঘুষ দিয়ে আয়োজক হয়েছে কাতার। যদিও এই অভিযোগ পুরোপুরি প্রমাণিত নয়। কিন্তু ফিফার কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে এরইমধ্যে নিষিদ্ধ হয়েছেন।
বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর আরও এক বড় ধাক্কা খায় কাতার। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ কাতারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। প্রায় সাড়ে ৩ বছর এ কারণে বেশ ভুগতে হয়েছে কাতারিদের। যদিও পরে কূটনৈতিক দক্ষতায় সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় তারা। এরপর পুরোদমে বিশ্বকাপের কাজ শুরু করে কাতার। নির্মাণ করে বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক ৮টি বিশাল স্টেডিয়াম। এসব স্টেডিয়ামগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং ডিজাইন। এখন এসব মঞ্চ আলোকিত করার পালা। যে আলো ছড়াবেন বিশ্বের সেরা ফুটবল তারকারা।
সবমিলিয়ে আজ থেকে আগামী এক মাস স্বপ্নের দুনিয়ায় বসবাস করবে কাতারিরা। যে স্বপ্ন দেখার জন্য তারা ১২ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে, অঢেল অর্থ ঢেলেছে এবং কঠোর পরিশ্রম করেছে। কাতার এখন প্রস্তুত। কিন্তু শিগগিরই সব আলো কেড়ে নেবে ফুটবল। যেখানে বিতর্ক, রেকর্ড, ইতিহাস সবকিছু হবে ফুটবলকে ঘিরেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
এমএইচএম