প্যারিস: ফ্রান্সে যে কয়জন বাংলাদেশি ট্যাক্সি চালক আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আরিফ আহমেদ খন্দকার। ট্যাক্সি চালক হিসেবে লাইসেন্স পাওয়া তিনিই প্যারিসের প্রথম বাংলাদেশি।
ট্যাক্সি চালকরা ফ্রান্সে প্রথম শ্রেণির কাজের মর্যাদা পেয়ে থাকেন। এদের সম্মান ও তাই অন্যান্য পেশার চেয়ে বেশি। সেই সাথে আয়ের পরিমাণও। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফরাসিরাই এ পেশায় জড়িত। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো ট্যাক্সির লাইসেন্স পাওয়া। আর লাইসেন্স পাওয়ার মূল শর্ত শতভাগ ফরাসি ভাষার দক্ষতা অর্জন এবং ৫ লাখ ইউরোর বিনিয়োগ সক্ষমতা এবং ট্যাক্সির কোটা বা নম্বর থাকা।
আরিফ খান বাংলানিজকে বলেন, ভাষা জানলে বা টাকা থাকলেই এদেশে কেউ ট্যাক্সির মালিক হতে পারবেন না। এজন্য নির্দিষ্ট শহরের নাম্বার থাকতে হয়। বাংলাদেশের মতো এখানে ইচ্ছামতো গাড়ি কেনার সুযোগ নেই। শহর কর্তৃপক্ষ’র আগে থেকেই ঠিক করা আছে, শহরে কতোটা গাড়ি চলতে পারে এবং কতোটা ট্যাক্সি চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে। সব কিছু মিললেই পাওয়া যাবে সরকারি অনুমতি।
তিনি জানান, এখানে একজন ট্যাক্সি চালক প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ থেকে হাজার ইউরো আয়ের সুযোগ পান। তবে রাতে আয়ের পরিমাণ বাড়ে বলেই তিনি কেবল রাতে ট্যাক্সি চালান, দিনে ঘুমান। এক সময়ে তার প্যারিসে ৩টা ফলের দোকান ও ২টা রেস্টুরেন্ট থাকলেও এখন সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে ট্যাক্সি চালনাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
আরিফ বলেন, বিয়ে করার পর আমার স্ত্রী জীবনের সব কিছু পরিবর্তন করে দিয়েছেন। পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য আবাসিক হোটেলের ব্যবসা করার ইচ্ছাও বাদ দিয়েছি। এখন কেবল ট্যাক্সি চালানো, সমাজসেবা এবং স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে আছি।
আরিফের বসবাস বাস প্যারিসের উপকণ্ঠ ইপিনি শহরে। সেখানেই ৫ লাখ ইউরো দিয়ে কিনেছেন ভিলা বাড়ি। এক ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার।
স্থানীয় ‘নোভা পক্তি অন্তি ক্যাপিটালিস্ট’ দল এই বাংলাদেশি তরুণকে এই শহরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছিল গত বছর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার দল ছোট শহরগুলোর নির্বাচনে অংশ গ্রহণ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলে আরিফের আর নির্বাচনে লড়া হয়নি। তবে এখানকার বর্তমান মেয়রকে নির্বাচিত হতে হয়েছে তারই সমর্থন নিয়ে। নির্বাচনের পর তাকে ডেপুটি মেয়র মনোনীত করা হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে।
আরিফ খান খিলগাঁও গভর্মেন্ট স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এখান থেকেই ১৯৮৬ সালে এসএসসি পাশ করেন। প্রিয়বন্ধু তুষার নিহত হওয়ার পর স্থানীয় রাজনীতির বলি হয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে প্রথম হাজতবাস হয়। উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা তাই লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। ফেনি পলিটেকনিকের প্রথমে জিএস এবং পরে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এরপরই প্রবাস জীবন।
প্রথমে আসেন সাইপ্রাসে ছাত্র হিসেবে। সেখানেও বিদেশি ছাত্রদের ভিপি নির্বাচিত হন। পরে প্যারিসে এসে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০০১ সালে তিনি ফ্রান্স বাংলা কমার্সের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং বিশ্বব্যাংকের সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে যোগ দেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচগাঁওয়ের জমিদার আহমদ উল্লাহ খন্দকারের নাতি।
আরিফ খান প্যারিসে আসা বাংলাদেশিদের অন্যতম আশ্রয়স্থল বলে বাংলা কমিউনিটিতে পরিচিত।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৬
আরএম/আরআই
** হাঁটা পথে ইউরোপে
** প্যালেস ডি সালভাদর দালি
** প্যারিসে মলিন আবহে বড়দিন
** গির্জাভিত্তিক পর্যটন
** এনভার্সে জাকিরের দেখা
** বাস্তিল ঘিরে পর্যটন
** প্যারিসের গণতন্ত্র ময়দান
** বাতাক্লঁয়ে প্রতিদিনই আসছে মানুষ