বন, জার্মানি: শরণার্থী বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে জার্মান সরকার। এর মধ্যে এই কঠোরতার প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) ক্ষমতাসীন কোয়ালিশন সরকারের অন্যতম অংশীদার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসপিডি) নেতা গ্যাবরিয়েল এই কঠোর সিদ্ধান্তের কথা জানান।
কিছুদিন আগে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নারীদের যৌন-নিপীড়নের ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনা ও বিদেশিদের ওপর জার্মানদের চাপা ক্ষোভ প্রশমনে এই উদ্যোগ নিয়েছে মার্কেল সরকার। এরই অংশ হিসেবে সাব সাহারা, উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া, মিশর, লিবিয়া, সুদান, মরক্কো, তিউনিশিয়ার শরণার্থীদের জার্মানি থেকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।
সরকারের পক্ষ থেকে এসব দেশের শরণার্থীদের নিজেদের দেশে ফেরত গিয়ে নারীদের প্রতি সম্মানবোধসহ সব মানবিক গুণাবলীর চর্চ্চা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জার্মান টেলিভিশন জেডডিএফ।
টেলিভিশনটি বলছে, এরইমধ্যে ৫০ হাজার উত্তর আফ্রিকার শরণার্থীদের জার্মানি ছাড়তে নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং সোমবার বেশ কয়েক হাজার শরণার্থীকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়েছে।
জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থী হাজার হাজার ভুয়া সিরিয়ান নাগরিকদের ব্যবহৃত নকল পাসপোর্ট গ্রীস ও তুরস্কে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের তৈরি বলে অভিযোগ করেছে জার্মান সরকার। হাতে থাকা প্রমাণের ভিত্তিতে জার্মানদের অভিযোগ, পাসপোর্ট প্রতি তিন’শ থেকে ৩ হাজার ইউরো পর্যন্ত দাম নিচ্ছে বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানি দালাল চক্র। স্থানীয় পত্রিকা ডাস এর্স্টে জার্মান পুলিশের বরাত দিয়ে এমনই সংবাদ পরিবেশন করেছে।
অন্যদিকে, লাখ লাখ শরণার্থীকে স্থান দিয়ে জার্মানদের বিপদের সম্মুখিন করায় বিশ্বাসঘাতকের অপবাদ জুটেছে জার্মান চ্যাঞ্চেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের কপালে। জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসীবিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’র অভিযোগ এনেছে।
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেইনিস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন। অবশ্য এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার।
বাখমানের অভিযোগ, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না। এরপর আসবে তাদের স্ত্রী, আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এত সব লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
এদিকে, জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার। যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে।
উল্লেখ্য, বর্ষবরণ উৎসবের রাতে জার্মানির কোলন শহরের মূল স্টেশনে অসংখ্য নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পরের দিনই সাড়ে ৫’শর বেশি স্থানীয় জনতা থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। ঘটনার দিন বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব না দিলেও পরের দিনগুলিতে ধীরে ধীরে গোটা ঘটনার ভয়াবহতা স্পষ্ট হতে থাকে। ৮০ থেকে ১০০ মদ্যপ তরুণ ৩১ ডিসেম্বর রাতে যে মাত্রায় এমন অভূতপূর্ব ন্যক্কারজনক কাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটি সুপরিকল্পিত ছিলো বলেই পুলিশের ধারণা।
এরই জের ধরে গোটা জার্মানি অভিবাসীবিরোধী বিক্ষোভ এবং ক্ষোভের সঞ্চার হয়। কোথাও কোথাও বিদেশিদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। প্রথমে ঘটনার জন্য সিরিয়ান শরণার্থীদের দায়ী করা হলেও তদন্তে আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিশিয়া, সুদান ও লিবিয়ার নাগরিকদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। অবশ্য দুইজন সিরিয়ান এবং একজন পাকিস্থানিরও হামলার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা মেলে।
কোলন কাণ্ডের পর এমনিতেই জার্মান অভিমুখী শরণার্থীর ঢল কমতে শুরু করে। প্রতিদিন ১০ হাজার শরণার্থীর স্থানে তা ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজারে নেমে আসে। কিন্তু ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তে তা আড়াই হাজারে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ভলেন্টিয়ারি গ্রুপ।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
আরএম/টিআই