ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দুটি মেশিনই নষ্ট থাকায় রোগীদের এমআরআই পরীক্ষা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। বহির্বিভাগের এমআরআই মেশিন করোনা মহামারির সময় নষ্ট হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেটা চালু হয়নি।
এছাড়া হাসপাতালে দুটি সিটি স্ক্যান মেশিন যেখানে প্রতিদিন ১৬০ থেকে ১৭০ রোগীর সিটি স্ক্যান করা হয়। এ দুটি সিটি স্ক্যান মেশিনের মধ্যে নতুন ভবনের নিচতলায় থাকা এমআরআই মেশিনের মতো সেটিও গত ১১ দিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে।
নতুন ভবনের নিচতলায় গিয়ে দেখা যায়, সিটি স্ক্যান মেশিন টেকনিশিয়ানরা মেরামত করার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে এমআরআই মেশিন। এছাড়া জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান মেশিন ২৪ ঘণ্টা অনবরত সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে রোগীদের। এদিকে সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট থাকার কারণে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত মা আমেনা বেগমকে ভর্তি করাতে পারছে না মেয়ে সুলতানা আক্তার সাদিয়া। কারণ সিটি স্ক্যানের পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে হাসপাতালে ভর্তি নেবে আমেনা বেগমকে চিকিৎসকরা।
তবে তারা জানেনা যে জরুরি বিভাগে অপর একটি সিটি স্ক্যান মেশিন চালু আছে। না জানার কারণে গত তিনদিন ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে নিয়ে হাসপাতালে ফ্লোরে অবস্থান করছেন।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলের দিকে হাসপাতালের ১০তলা নতুন ভবনের নিচতলায় গিয়ে সিটি স্ক্যান রুমটি বন্ধ থাকতে দেখা যায়। তবে ভেতরে কোম্পানির লোকজন সেটা মেরামতের কাজ করতে দেখা যায়। সেই একই রুমে আছে এমআরআই মেশিন। সেখানে সিটিস্ক্যানের অপেক্ষায় থাকা হাসপাতাল থেকে পরীক্ষার কাগজ নিয়ে সাদিয়া জানান, ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত শেরপুর সদর এলাকা থেকে মাকে নিয়ে গত পরশুদিন হাসপাতালে আসি। চিকিৎসকদের পরামর্শে কাগজ নিয়ে নতুন ভবনের নিচতলায় গিয়ে জানতে পারি সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট। কারণ রিপোর্ট দেখে তার মাকে ভর্তি নেওয়া হবে ও চিকিৎসা শুরু হবে।
গত তিনদিন যাবৎ সিটি স্ক্যান করার জন্য হাসপাতালে বসে আছি মাকে নিয়ে। আজকে জানতে পারলাম ইমারজেন্সিতে সিটি স্ক্যান হয়। অথচ নতুন ভবনের নিচতলার সিটি স্ক্যান রুমের দরজায় কোনো নির্দেশনা লেখা নেই। থাকলে জানতে পারতাম জরুরি বিভাগে সিটি স্ক্যান চালু রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে রেডিওলজি বিভাগের সিনিয়র টেকনোলজিস্ট মো. কামাল উদ্দিন জানান, নতুন ভবনের নিচতলার গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এমআরআই ও সিটি স্ক্যান মেশিনটি নষ্ট। গত ২০১৭ সালে মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির থেকে এটা কেনা হয়েছিল। এই মেশিন দুটি পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টির সময় অতিক্রম করেছে। তবে কোম্পানির লোকজন কাজ করছে শুধু সিটি স্ক্যান মেশিনটি সচল করার জন্য। এমআরআই মেশিন চালু করা সম্ভব না বলে ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন।
আর বহির্বিভাগে আগে আরও একটা এমআরআই মেশিন ছিল। সেটা করানোর সময় নষ্ট হয়েছে। এখনো সেরকমই আছে। হাসপাতালে বর্তমানে রোগীদের এমআরআই পরীক্ষা পুরোপুরি বন্ধ। আর জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান ২৪ ঘণ্টাই পুরোদমে চলছে।
হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, নতুন ভবনের নিচতলায় থাকা দুটি মেশিনের ওয়ারেন্টি শেষ। সিটি স্ক্যান মেশিনটি চালু করার জন্য ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করছে। তবে সেই ইঞ্জিনিয়াররা বলেছে, এমআরআই মেশিনটি আর চালু করা সম্ভব নয়। হাসপাতালে রোগীদের জন্য এমআরআই পরীক্ষা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি বিভাগে সিটি স্ক্যান মেশিন আছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় রোগীদের পরীক্ষা হচ্ছে।
নতুন এমআরআই মেশিনের জন্য ডিমান্ড দেওয়া হয়েছে। আর বহির্বিভাগের এমআরআই মেশিনটি করোনার সময় থেকে নষ্ট হয়ে রয়েছে।
তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, নতুন ভবনের নিচতলায় সিটি স্ক্যান রুমের দরজায় নির্দেশনা এখনই টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটি নষ্ট থাকলেও জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান চালু রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩
এজেডএস/এসএ