ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কুষ্টিয়ায় ১৮০০ জনকে নিখরচায় চক্ষু চিকিৎসা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
কুষ্টিয়ায় ১৮০০ জনকে নিখরচায় চক্ষু চিকিৎসা

কুষ্টিয়া: বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে কুষ্টিয়ায় দিনব্যাপী চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পে ১৮০০ রোগীকে নিখরচায় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৬০ জনকে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।

যাদের ঢাকা নিয়ে এসে এ অপারেশন করা হবে।  

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিণায়নপুরে দোয়ারকা দাস আগারওয়ালা মহিলা কলেজে দোয়ারকা দাস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশন এবং বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী এ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আব্দালপুর এলাকার ষাটোর্ধ্ব আছিয়া বেগম বলেন, ছয়/সাত মাস ধরে চোখে ঝাপসা দেখি। এখন তো দূরের মানুষ দেখি কিন্তু কে তা চিনতে পারিনা। নাতি-নাতনিদের চিনতে হয় মুখের কথা শুনে। লোকে বলে ভালো ডাক্তার দিয়ে চোখ দেখাতে, তবে টাকা কোথায় পাবো? বড় ডাক্তারকে চোখ দেখাতে সে মেলা টাকা লাগে। গরিব মানুষ ঢাকায় গিয়ে চোখ দেখাবো এমনটা স্বপ্নেও আসে না।  

গ্রামের ডাক্তারদের কাছ থেকে ড্রপ কিনি চোখে দেই, একটু ভালো দেখি আবার আগের মতো হয়ে যায়। ভেবেই নিয়েছিলাম যে এভাবেই দিন কাটাতে হবে। পরিষ্কার কিছু আর হয়তো দেখা হবে না। কারণ দুনিয়া দেখার সম্বলই চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুনেছি এই কলেজে নাকি ঢাকা থেকে বড় ডাক্তাররা আসবে তাই সকাল থেকে এসেছি এখানে চোখ দেখাবো। টাকা নেয় না, আবার অপারেশনও নাকি এমনি করে দেয়।

আছিয়া বেগম বলেন, চোখের ডাক্তাররা মেলা টাকা নেয়। কিন্তু এখানে ফ্রি চোখ দেখে, ওষুধ দেয়, চশমা লাগলে চশমা দেয়, অপারেশনও করে দেয় তাই এখানে এসেছি।

চক্ষুসেবা নিতে আসা শান্তিডাঙ্গা এলাকার অনুতোষ বিশ্বাস বলেন, সকালে এখানে এসে বিনামূল্যে চোখ দেখালাম। ডাক্তার বললো ঢাকায় গিয়ে অপারেশন করতে হবে। অপারেশন করলে চোখে আবার হয়তো দেখতে পাবো। এখানকার লোকজন বলেছে যে, সব বিনামূল্যে করে দেবে। আমাদের গরিব মানুষের জন্য এরা এমন ভালো কাজ করছে।

পদ্মনগর এলাকার ৮২ বছর বয়সী কৃষক ফটিক আলী বলেন, আড়াই বছর ধরে চোখে ঝাপসা দেখি। এখানে এসে ডাক্তার দেখালাম। নানা মেশিন দিয়ে, চোখে লাইট দিয়ে দেখলো। বললো ছানি পড়েছে। ঢাকায় নিয়ে গিয়ে অপারেশন করে দেবে। যাতায়াত খরচও এরা দেবে। আমাদের গরিব মানুষের কথা যারা ভাবে তাদের আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখুক।
    
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম ডাবলু বলেন, বসুন্ধরা আর আগারওয়াল পরিবারের কাছে এলাকার মানুষ ঋণী। বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা করতে পারে সাধারণ মানুষরা। এই নিয়ে ৪বার হলো এই কার্যক্রম। মাইকিং করে তারা রোগীদের সেবা দেয়। সত্যিই এটা মহত কাজ।

মনির উদ্দিন নামের এক কৃষক জানান, আমার স্ত্রী আছিয়া খাতুনের চোখে দীর্ঘদিন ধরে পানি পড়ে। এখানে নিয়ে এসেছিলাম, ফ্রি চেকাপ করে ওষুধ দিয়ে দিল।

শান্তি ডাঙ্গা এলাকার রুসিয়া খাতুন বলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষের পাশে এসে যারা দাঁড়ায় আল্লাহ তাদের ভালো করবেন। এখান থেকে অনেকের অপারেশন করে চোখ ভালো হয়েছে।

দোয়ারকা দাস ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক পবন কুমার আগারওয়াল বলেন, ২০১৭ সাল থেকে দোয়ারকা দাস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশন এবং বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে আমরা এই অঞ্চলে নিখরচায় চক্ষু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। ইতোমধ্যে আমরা ১২শ জন রোগীর ছানি অপারেশনের মাধ্যমে সুস্থ করেছি। নিখরচে অপারেশন, ওষুধ, চশমা ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে থাকি। আগামীতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

দোয়ারকা দাস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী চলা নিখরচের এই চক্ষু ক্যাম্পে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৮০০ জন চক্ষু রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৬০ জন রোগীকে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ঢাকায় নেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এছাড়া ৭শ জন রোগীকে পরীক্ষার মাধ্যমে নিখরচায় চশমা, ৮শ জনকে ওষুধসহ ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে।

দিনব্যাপী এ চক্ষু ক্যাম্পে বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও ফ্যাকো অ্যান্ড রেটিনা স্পেশালিস্ট প্রফেসর ডা. মো. সালেক আহমেদের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম চিকিৎসাসেবা দেন। এর মধ্যে ছিলেন ডা. মুত্তাকিন মনির, ডা. জেরিন পারভীন, ডা. মজুমদার গোলাম রাব্বি। এছাড়াও ৪জন অপট্রোমিটেক ও ৬জন মেডিকেল সাপোর্ট।

বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও ফ্যাকো অ্যান্ড রেটিনা স্পেশালিস্ট প্রফেসর ডা. মো. সালেক আহমেদ বলেন, এ চক্ষু ক্যাম্পের মাধ্যমে আমরা চক্ষু রোগীদের নিখরচায় ব্যবস্থাপনা, চশমা ও ওষুধ দিয়েছি। সেই সঙ্গে যেসব রোগীদের চোখ অপারেশন করা প্রয়োজন তাদের নির্বাচন করেছি।

দিনব্যাপী চলা এ ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন দোয়ারকা দাস আগারওয়ালা মহিলা কলেজের ১২০জন শিক্ষার্থীসহ দোয়ারকা দাস ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।