ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মারবার্গ ভাইরাস কী ও কতটা ভয়ঙ্কর?

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
মারবার্গ ভাইরাস কী ও কতটা ভয়ঙ্কর?

পূর্ব আফ্রিকার দেশ তাঞ্জানিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। উচ্চ সংক্রামক ভাইরাসটি ইবোলার সমগোত্রীয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে।  

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি। তাদের প্রতিবেদন অনুসারে আসুন জেনে নেওয়া যাক- মারবার্গ ভাইরাস আসলে কী ও কতটা ভয়ঙ্কর?

উৎপত্তি ও নামকরণ
মারবার্গ ভাইরাস এর আগেও ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুসারে, ১৯৬৭ সালে জার্মানির মারবার্গ এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে মারবার্গ ছড়িয়েছিল। এছাড়া সার্বিয়ার বেলগ্রেডেও ছড়িয়েছিল ওই ভাইরাস। পরে মারবার্গের নামানুসারেই এর নামকরণ করা হয়।

যেভাবে ছড়ায়
আফ্রিকান সবুজ বানর এবং শূকর এর জীবাণু বহন করে। মিশরের রাওসেত ফলের বাদুড়ও ভাইরাসটি বহন করে। মানুষের দেহে মারবার্গ ভাইরাস প্রাণী থেকে ছড়ায় এবং শারীরিক তরলের মাধ্যমে একদেহ থেকে আরেক দেহে সংক্রমিত হয়।

এমনকি আক্রান্তরা সুস্থ হওয়ার পরেও তাদের রক্তে বা বীর্যে পরবর্তী বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত এ ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে।

আক্রান্তের লক্ষণ
মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা ও পেশি ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তিনদিন পর এসব উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত হয় পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, বমি ভাব ও বমি।  

অনেক সময় এ ভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণও হয়। অত্যধিক রক্তক্ষরণের মাধ্যমেও অনেকের মৃত্যু হয়ে থাকে। এগুলো ছাড়াও মারবার্গ ভাইরাসের অন্যান্য লক্ষণ হলো- ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, গায়ে-হাতে র‌্যাশ ও ফুসকুড়ি।  

ডব্লিউএইচও-এর মতে, এ ভাইরাসে আক্রান্তদের চেহারা দেখতে ‘ভূতের মতো’ টানা টানা লাগে, চোখকে গভীর স্থির মনে হয়, চেহারা দেখা যায় অভিব্যক্তিহীন ও চরম অলসতায় আচ্ছন্ন।

কোন কোন দেশে মারবার্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে
বিষুবীয় গিনি, ঘানা, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে- এসব দেশে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।

এছাড়াও ২০০৫ সালে অ্যাঙ্গোলায় এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। সে সময় দেশটিতে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। যদিও বিশ্বের বাকি অংশে গত ৪০ বছরে মারবার্গ ভাইরাসে মাত্র দু’জন মারা গেছে। এর মধ্যে একজন ইউরোপে ও একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের দু’জনই উগান্ডার গুহায় অভিযানে গিয়েছিলেন।

কী বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বক্তব্য, মারবার্গ আসলে ইবোলা ভাইরাস গোষ্ঠীর অন্তর্গত। গবেষণায় প্রমাণিত, মারবার্গ ইবোলার চেয়েও দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়। তাই এ ভাইরাস নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো মারবার্গ ভাইরাস প্রতিরোধের কোনো টিকা এখনও আবিষ্কার হয়নি। তাই কোনো রকম বিপদের ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। মারবার্গ ভাইরাস শরীরে বাসা বেঁধেছে, তা সব সময়ে বোঝা যায় না। তাই আগে থেকেই সুরক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ- জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। বাইরে থেকে এসে ভালো করে হাত-পা ধুয়ে নিন ও অবশ্যই মাস্ক পরুন।

প্রতিকার
মারবার্গ ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই বা এখন পর্যন্ত টিকা আবিষ্কার হয়নি। ডব্লিউএইচও বলছে, রক্তের বিভিন্ন প্রডাক্টস, ওষুধ ও রোগ প্রতিরোধক থেরাপি তৈরি করা হচ্ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রচুর পরিমাণে পানি পান এবং উপসর্গগুলোর চিকিৎসায় রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া রক্ত প্রতিস্থাপনের জন্য ট্রান্সফিউশন ব্যবহার করেও চিকিৎসা দেওয়া যায়।

মারবার্গ​ভাইরাসকে কীভাবে থামানো যায়?
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা ‘গাভি’র মতে, আফ্রিকার বাসিন্দাদের বন্যপ্রাণীর মাংস পরিহার করা উচিত।
ডব্লিউএইচও বলছে, প্রাদুর্ভাবের অঞ্চলে শূকরের সংস্পর্শ এড়ানো উচিত। ভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষদের উপসর্গ শুরু হওয়ার এক বছর পর বা তাদের বীর্য দুইবার নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করা উচিত। যারা ভাইরাসে আক্রান্ত মরদেহ দাফন করেন তাদের সংস্পর্শও এড়িয়ে চলা উচিত।
সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।