ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আঁখির চিকিৎসায় সংযুক্তা সাহা ও অন্য চিকিৎসকদের গাফিলতি ছিল: সেন্ট্রাল হসপিটাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
আঁখির চিকিৎসায় সংযুক্তা সাহা ও অন্য চিকিৎসকদের গাফিলতি ছিল: সেন্ট্রাল হসপিটাল

ঢাকা: নবজাতকসহ মারা যাওয়া মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসায় নিজেদের গাফিলতির কথা স্বীকার করেছে সেন্ট্রাল হসপিটাল। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হসপিটালের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে এ স্বীকারোক্তি করেন।

তিনি বলেন, আঁখির চিকিৎসায় হাসপাতালের অবশ্যই গাফিলতি ছিল। গাফিলতি ছিল প্রথমত ডা. সংযুক্তা সাহার, তারপর অপারেশন থিয়েটারের চিকিৎসকদের। কারণ সে সময় তারা সিনিয়র চিকিৎসকদের ডাকেননি। এ ঘটনায় আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাওয়ার কথা। আশা করছি, এই সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।  

হাসপাতাল থেকে কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের তদন্ত কার্যক্রম তো এখনও শেষ হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্ট এলেই আমরা অ্যাকশনে যাব।

একজন চিকিৎসকের পক্ষে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ রোগী দেখা কী সম্ভব, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে কোয়ালিটি সার্ভিস দিতে গেলে একজন চিকিৎসকের দৈনিক এত রোগী দেখা সম্ভব নয়, কিন্তু ডা. সংযুক্তা সাহা দেখতেন, কী বলবো আর এটি নিয়ে।

হাসপাতাল প্রশাসন এ বিষয়গুলো এত দিন জানতো কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। রোগী চিকিৎসকের কাছে এলে চিকিৎসা তো মূলত তারাই দেয়। তারপর কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটলেই সেটা আমাদের কাছে আসে। এজন্যই আমরা এই বিষয়গুলো জানতে পারিনি।

এর আগে অপারেশন থিয়েটার ও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সেবা মানসম্মত না হওয়ায় ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার স্থগিতের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শুক্রবার (১৬ জুন) অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের একটি দল হাসপাতালটি পরিদর্শনের পর এ নির্দেশনা জারি করা হয়।

এ তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. শেখ দাউদ আদনান জানান, সার্জারি স্থগিত রাখতে সেন্ট্রাল হসপিটালকে লিখিত আদেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিতে আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ডা. সংযুক্তাকে হাসপাতালে সেবা দেওয়া হতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।  

এছাড়া অন্যান্য নির্দেশের মধ্যে আছে, ভুক্তভোগীর চিকিৎসার সব ধরনের খরচ বহন করা, আইনানুযায়ী রোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সব নথিপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের কাছে পাঠায়।

রোববার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আঁখির।  

এর আগে ৯ জুন সেন্ট্রাল হসপিটালে সি-সেকশন সার্জারির সময় তার সন্তানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্লেখ করেন আঁখির এক বান্ধবী। ফলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সেন্ট্রাল হসপিটাল ও হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা।

গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই আঁখির সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।  

৯ জুন আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তার পরিবারের সঙ্গে ডা. সংযুক্তা সাহাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে। তাদের জানানো হয়, সংযুক্তা অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন। কিন্তু আদৌ তিনি হাসপাতালে ছিলেন না। হাসপাতালের এমন দ্বি-চারিতায় সিজারে সন্তান জন্ম দেওয়ার একদিন পর তার সদ্যজাত সন্তানের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন তিনি নিজেও। রোববার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন আঁখি।  পরে তাদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আঁখি ও নবজাতকের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

এ ঘটনায় বুধবার (১৪ জুন) ধানমন্ডি থানায় মোট ছয়জনের নামোল্লেখ করে এবং আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলা করেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী। মামলায় হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সংযুক্তার নামও রয়েছে। মামলার পর বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক শাহজাদী ও মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
আরকেআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।