ঢাকা: বাংলাদেশের নারী ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতের লক্ষে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর গুলশান দুই নম্বরে হোটেল অ্যারিস্ট্রোক্র্যাটে এ স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট গ্লোবাল নিউট্রিশন ইনিশিয়েটিভ এবং আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় মা এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য টেকসই পুষ্টি নিশ্চিতকরণ” প্রকল্পের আওতায় পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্টের মধ্যে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবী।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আক্তারুজ্জামান, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর পরিচালক (কর্মসূচি) নাছিমা আক্তার জলি, ডাক্তার আওরঙ্গজেব আল হোসাইন ও দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সহকারী পরিচালক জমিরুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জাতীয় পুষ্টি সেবা, উপজেলা স্বাস্থ্য অফিস এবং বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তারা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দি হাঙ্গার প্রজেক্টের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবী সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
স্বাগত বক্ত্যবে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের পরিচালক (কর্মসূচি) নাছিমা আক্তার জলি বলেন, আজকের দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে চিহ্নিত হবে, ভবিষ্যতের জন্য উজ্জ্বল আলোর রেখা প্রদর্শন করবে। বাংলাদেশের নারী ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতের লক্ষ্যে আজকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হচ্ছে। বাংলাদেশে শিশু ও নারী মৃত্যুর হারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। কিন্তু নারী ও শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিগঠনের জন্য পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা আমরা খুব একটা নজর দেই না। এ প্রজেক্টের মাধ্যমে নারী ও শিশুর পুষ্টি আমরা সেই কাজটি করবো। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সবল ও সক্ষম জাতি হিসেবে পরিণত করতে এ প্রকল্প ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবী বলেন, এ প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য দি হাঙ্গার প্রজেক্টকে অভিনন্দন জানাই। সরকারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে এ প্রকল্পটি করা হবে, যা এ প্রকল্পে নতুনত্ব এনেছে। ভবিষ্যতে এ প্রকল্পটি আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, নারী ও শিশুর পুষ্টিমান উন্নয়নের অনেক প্রচেষ্টা চলছে। সরকার কাজ করছে, বেসরকারি সংস্থাগুলোও কাজ করছে। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, আবার কিছু কিছু সূচকে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। করণীয় আছে অনেক। আশা করি এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারী ও শিশুর পুষ্টি মানের উন্নয়ন ঘটবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা রাশেদা সুলতানা বলেন, মায়েদের নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। নইলে কোনো উন্নয়ন টেকসই হবে না। প্রকল্পটি আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া দরকার।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ৩০ বছর আগে পুষ্টি বিষয়ক কার্যক্রম দিয়েই আমি আমার উন্নয়ন বিষয়ক কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট অনেক দিন ধরে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে। অনেক দিন আগে এশিয়ান এনিগমা একটা লেখা পড়েছিলাম। ওই লেখাতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ আফ্রিকার চেয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও পুষ্টি মানের পিছিয়ে আছে। কারণ হলো নারীদের প্রতি অযত্ন ও অবহেলা। আমরা হাঙ্গার প্রজেক্টের মাধ্যমে পুষ্টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়ম নীতি মানার ক্ষেত্রে মানুষের অভ্যাস ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। ভবিষ্যতের জন্য একটি সুন্দর, মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য রেখে যাব সে প্রত্যাশা করছি।
'দি হাঙ্গার প্রজেক্ট গ্লোবাল নিউট্রিশন ইনিশিয়েটিভ এবং আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় মা এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য টেকসই পুষ্টি নিশ্চিতকরণ' প্রকল্পের আওতায় দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার ২টি ইউনিয়নে মার্চ ২০২৩ থেকে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করেছে।
খুলনা ছাড়াও রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি ফেব্রুয়ারি ২০২৮ পর্যন্ত পরিচালিত হবে।
প্রকল্পটি যে তিনটি ক্ষেত্রে কাজ করবে, সেগুলো হচ্ছে, গর্ভবতী মা ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ভিটামিন সম্পূরক উপাদানযুক্ত অণুপুষ্টি প্রদান, সাতটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি আচরণ ত্বরান্বিতকরণ এবং পানি, স্যানিটেশন, হাইজিন অবস্থার কৌশলগত উন্নয়ন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
আরকেআর/জেএইচ