ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে স্তন ক্যানসার নিরাময় সম্ভব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে স্তন ক্যানসার নিরাময় সম্ভব

ঢাকা: প্রতি বছর দেশে ১২ থেকে ১৫ হাজার নারী স্তন  ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। শুধু তাই নয় এই রোগে বছরে প্রায় আট হাজারের মতো নারী মারা যাচ্ছেন।

তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ শনাক্ত হলে স্তন ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব। আর এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর কল্যাণপুরে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট আয়োজিত স্তন ক্যানসার সচেতনতায় গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা উঠে আসে। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআরের অতিরিক্ত কর কমিশনার আয়েশা সিদ্দিকা শেলী।

তিনি বলেন, দেশে প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজন নারী স্তন ক্যানসার বহন করেন। তবে এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে তা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোগ নির্ণয় হচ্ছে একেবারে শেষ স্তর বা চতুর্থ স্তরে গিয়ে। এর সঙ্গে নারীর জীবন, শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।  

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন ব্রেস্ট থেকে টিউমার সরিয়ে ফেলে নারীর সৌন্দর্য রক্ষা করা যায়। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। এই রোগ দেখা দিলে নারী মানসিক, সামাজিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে সমস্যায় পড়েন। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের রোগ নির্ণয় করতে পারলে এটি নিরাময় সম্ভব।  

আয়েশা সিদ্দিকা শেলী বলেন, নারীরা নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা করতে পারেন। দ্বিতীয় স্তরে ধরা পরলেও এই রোগ নিরাময় সম্ভব। ৩০ বছরের পর থেকে নারীরা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকেন। এজন্য আমাদের স্ক্যানিংটা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ জেড মাহমুদুল হাসান বলেন, মায়েরা এখনও স্তন শব্দটা উচ্চারণ করতেই লজ্জাবোধ করে। শুধু তাই নয়, নারীদের সংবাদ পড়া বা দেখার ক্ষেত্রেও তেমন আগ্রহী দেখা যায় না। প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা শুরু করবেন ২০ বছরের পর থেকে। এই তথ্য গণমাধ্যমকেই দিতে হবে। কোনো রকম চাকা পেলেই তা ক্যানসার নয়, এটি চর্বির জন্য হতে পারে। বুকের চামড়ায় কোন ধরনের পরিবর্তন দেখতে পেলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন। মাসিকের সময় এই রকম কোনো সমস্যা হলেও তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

মেমোগ্রাফি বা আলট্রাসাউন্ড করলে স্তন ক্যানসার ধরা পরে বলে মাহমুদুল হাসান উল্লেখ করেন। ৪০ বছরের পর থেকে রিস্কে থাকলে পরীক্ষা করবেন, আর রিস্ক না থাকলে তিন বছর পর পর পরীক্ষা করবেন। কোনো কোষ বিভাজনের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে বোঝা যাবে আপনি আক্রান্ত হয়ে গেছেন। পরিবারে ক্যানসার থাকলে ঝুঁকি থেকে যায় বলেও তিনি জানান।  

কর্মশালায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জুবায়দা বাহারুন খান বলেন, আমাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আমাদের যে চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে, গণমাধ্যম বারবার যদি তা প্রচার করে, তাহলে সমাজ উপকৃত হবে এবং স্তন ক্যানসার অনেকাংশে কমে আসবে।

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ফায়জুল হক বলেন, একটি স্বাস্থ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশে ২৭৩ জন প্রতিদিন মারা যান। এরমধ্যে স্তন ক্যানসার, জরায়ু ক্যানসারসহ নানা ধরনের ক্যানসার রয়েছে। একটি গবেষণা বলছে, প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ হাজার নারী আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যানসারে। এর মধ্যে আট হাজার নারী মারা যাচ্ছেন। তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর এক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা করি।  

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নূরুন নাহার হেনা বলেন, আমাদের নারী সমাজকে সচেতন করতে হবে। আমাদের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, এই নারীর বিপর্যয় আমরা মেনে নিতে পারি না। গ্রামের নারীরা জানেন না এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করতে তিনি নিজেই যথেষ্ট। এটা তিনি যদি অনুভব করেন, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। তবে এটা যেহেতু ব্যয়বহুল চিকিৎসা, সেজন্য নারীদের এই চিকিৎসার সহায়তা দিতে একটি সরকারি হাসপাতালের প্রয়োজন রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
এসএমএকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।