ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু টিকা টিভি-০০৫ অধিক কার্যকর, আইসিডিডিআরবি-এর যৌথ গবেষণা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
ডেঙ্গু টিকা টিভি-০০৫ অধিক কার্যকর, আইসিডিডিআরবি-এর যৌথ গবেষণা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ। ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: টিভি-০০৫ টিকা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অধিক কার্যকর। যেকোনো বয়সের মানুষের শরীরে এ টিকা বাজারের অন্যান্য টিকার তুলনায় দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে বলে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), ইউনিভার্সিটি অব ভেরমন্ট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

বুধবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত নিবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ডা. রাশিদুল হক।  

উপস্থাপনায় তিনি এ টিকার কার্যকারিতা, প্রায়োগিক ক্ষমতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি জানান, টিভি-০০৫ বাংলাদেশে এটি প্রথম ডেঙ্গু টিকা হিসেবে ট্রায়াল হলো। ২০১৫ সালে এটি ট্রায়ালের অনুমোদন পায়। ২০১৬ সাল থেকে এর এনরোলমেন্ট কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় ১৯২ জনকে এনরোল করা হলেও, এর মধ্যে ১৪৪ জন এ ভ্যাকসিন পেয়েছেন। এক বছর থেকে ৭০ বছর বয়সের জন্য এ ভ্যাকসিন কাজ করবে। অর্থাৎ, যেকোনো বয়সের জন্যই উপযোগী হবে এটি। অন্যদিকে, এর একটি ডোজই ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথেষ্ট।

তিনি আরও জানান, ডেঙ্গুর যে চারটি ধরণ রয়েছে, সবগুলো ধরণেই এ টিকা সামান্য কম-বেশি ভালো কাজ করেছে। এ টিকা এখন পর্যন্ত প্রায় ৪২টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়ে গেছে।

ডা. রাশিদুল হক আরও জানান, টিকা প্রয়োগের ১৮০ দিন পরে শরীরে ভালোভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যাদের আগে ডেঙ্গু ভাইরাস হয়েছে, তাদের শরীরে এ টিকা দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা যেটা পেয়েছি, শতকরা ২৬ শতাংশের ক্ষেত্রে র‍্যাশ হয়। তবে, দুই-তিন দিনের মধ্যে সেটি আবার সেরে যায়। যাদের ক্ষেত্রে র‍্যাশ হয়, বুঝতে হবে তাদের শরীরে টিকা ভালো কাজ করছে।

আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, গবেষণা নিয়ে আইসিডিডিআরবি অনেক কাজ করছে। তারা শুধু গবেষণাই করছে না, তারা সরকারের সঙ্গেও কাজ করছে। কি করে তাদের গবেষণাটা পলিসির অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

তিনি বলেন, ২০ বছর আগে আমাদের হাসপাতালের নিচে আমি কালাজ্বরের রোগ শনাক্ত করে নিজেই চিকিৎসা করেছি। সেটি এখন আর দেখা যায় না। আমাদের একটা দলই আছে, যারা কালাজ্বর নিয়ে কাজ করছে। এর ফলে, বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশে এ চিকিৎসা ব্যবহৃত হচ্ছে। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে। পুষ্টিতে আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু আবিষ্কার করেছেন।

আশঙ্কা প্রকাশ করে তাহমিদ আহমেদ বলেন, এখনো আমাদের দেশে ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে। ডেঙ্গুর রোগতত্ত্ব মনে হয় পরিবর্তন হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে বছরের বড় একটা সময় ধরে এটা আমাদের ভোগাবে। এটার জন্য আমরা যেটা করতে পারি, এর ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে পারি।

তিনি বলেন, টিভি-০০৫ টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল করতে হলে কোনো কোম্পানিকে উৎপাদন করতে হবে। তারপরে অর্থায়ন করতে হবে। এটা আকারে অনেক বড় হবে। আমরা চেষ্টা করছি তৃতীয় ট্রায়ালে যাওয়ার। ভারতে প্যানোসিয়া বায়োটেক নামে একটা কোম্পানি ইতোমধ্যেই উৎপাদন করেছে। ওরা তৃতীয় ট্রায়ালে যাবে। ওদের সঙ্গে আমরা সমন্বয় করতে পারলে ভালো হতো। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু নির্ধারণ করা হয়নি।

তাহমিদ আহমেদ বলেন, আমরা এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা যদি উৎপাদন করতে চাই, লাইসেন্স লাগবে। এরপর আমরা লাইসেন্সিং এর জন্য কী কাজ রয়েছে তা নিয়ে আরও মনোযোগী হবো। এ টিকা আসতে হয়তো আরও দুই থেকে তিন বছর লাগবে। আমাদের আশা হচ্ছে সবাই যেন পায়। এ বিষয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ২/১টি প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করেছে।

কবে নাগাদ এ টিকা বাজারে আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ডা. ফিরদৌসী কাদরী বলেন, এ টিকা বাজারে আসতে আরও কয়েকবছর লাগবে। তিন বছর পর্যন্ত এ টিকা কার্যকর। আমরা পাঁচ বছর দেখব। আমাদের আরও বেশি সংখ্যক টিকা বাচ্চাদের ওপর প্রয়োগ করতে হবে। ব্রাজিল, ভারতে এ টিকা উৎপাদন হচ্ছে এবং তারা তৃতীয় ধাপ শুরু করছে। তৃতীয় ধাপে অনেক বড় ট্রায়াল হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব ভেরমন্ট এর গবেষক ডা. ব্যাথ ক্রিক প্যাট্রিক, আইসিডিডিআরবির গবেষক ডা. শফিউল আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২৩
এমকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।