ঢাকা, শুক্রবার, ৫ পৌষ ১৪৩১, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঢামেকের নিউরো ইমারজেন্সি: ক্ষত নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোগীদের

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪
ঢামেকের নিউরো ইমারজেন্সি: ক্ষত নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোগীদের

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) পুরাতন ভবনের নিচতলায় নিউরো ইমারজেন্সি কক্ষটি এতটাই ছোট যে, জরুরি চিকিৎসার জন্য দুজন রোগী একসঙ্গে প্রবেশ করলেই বাকি রোগীদের সেখানে জায়গা দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।  

ক্ষত নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোগীদের।

অথচ প্রতিদিন ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে নিউরো সার্জারির ইমারজেন্সির কক্ষটিতে ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে দেড়শ রোগী চিকিৎসা নেয়।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালের দিকে নিউরো সার্জারি ইমারজেন্সি কক্ষে গিয়ে দেখা যায় জরুরি রোগীদের ভিড়। কক্ষের ভেতরে দু-একজন রোগী চিকিৎসারত থাকলেও জায়গা স্বল্পতার কারণে কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীদের চাপ বেশি দেখা যায়।

নিউরো ইমারজেন্সি কক্ষে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জরুরি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন রোগীদের। পরে এসব রোগীদের মধ্যে যারা ভর্তির যোগ্য তাদেরকে চিকিৎসকরা ভর্তি দিয়ে ওয়ার্ডের রেফার করেন।

নিউরো সার্জারির ৯৮ নম্বর কক্ষের দায়িত্বরত একটি সূত্র থেকে জানা যায়, প্রতিদিন ঢাকাসহ সমগ্র দেশ থেকে ২৪ ঘণ্টায় এক থেকে দেড়শ’ রোগীকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে হাসপাতালের একমাত্র নিউরো ইমার্জেন্সি এই কক্ষটিতে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ জন রোগী এমন থাকেন যারা মাথায় রক্তক্ষরণ নিয়ে এই কক্ষে চিকিৎসা নিতে আসেন। সেসব রোগীর একজনের পেছনে কম করে হলেও আধাঘণ্টা সময় ব্যয় হয় চিকিৎসকদের। আর এদিকে বাইরে রোগীদের চাপ বাড়তেই থাকে।  

এভাবে অপেক্ষায় থাকা বাকি রোগীরা জরুরি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নিউরো ইমার্জেন্সি কক্ষে প্রায় সময়ই দেখা যায়, মাথায় আঘাত নিয়ে ৪ থেকে ৫ জন রোগী একসঙ্গেই এসেছেন চিকিৎসা নিতে। আর এতো ছোট কক্ষে একসঙ্গে পাঁচজন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। একজন একজন করে দেওয়া হয়।

এভাবে একটি জাতীয় হাসপাতালের জরুরি রোগীরা  ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নিউরো ইমারজেন্সি কক্ষটি এতো ছোট হওয়ার কারণ:

সূত্র জানায়, নিউরো ইমারজেন্সির কক্ষটি বর্তমানের চাইতে বড় ছিল। চিকিৎসক ও নার্সদের বসার জন্য কক্ষের ভেতরে পার্টিশন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভেতরে আরও একটি পার্টিশন দিয়ে নতুন করে বানানো হয়েছে রোগীদের জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা তথা মিনি অস্ত্রোপচার কক্ষ। আগের একটি কক্ষ ছিল যেটা সিনিয়র চিকিৎসকদের বসার স্থান করেছে কর্তৃপক্ষ।

একটি কক্ষের ভেতরে দুটি পার্টিশনের কারণে রোগীদের স্থান একদম ছোট হয়ে গেছে। দুজন রোগী প্রবেশ করলেই আর জায়গা থাকে না, বাকি রোগীরা কক্ষের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন।

সূত্রটি আরও জানান, রোগীদের অস্ত্রোপচার করা হয় ভর্তির পরে হাসপাতালের ভেতরে আলাদা ওটিতে। কিন্তু নিউরো ইমারজেন্সি কক্ষে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। মাথার রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয় পাশাপাশি নিউরো সার্জারি জরুরি রোগীদেরও দেখা হয়।

এছাড়া হাসপাতালে নিউরো সার্জারির বেশ কয়েকটা ওয়ার্ড আছে। সেই ওয়ার্ডগুলোতে সব সময় রোগীতে পূর্ণ থাকে। নিউরো সার্জারি রোগীদের চাপ প্রচুর ওয়ার্ডে তো জায়গা পাওয়াই যায় না। পাশাপাশি ফ্লোরে,ঢাল সিঁড়িতে রোগীদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।  

সূত্রটি দাবি করে, নিউ সার্জারি বিভাগটা আলাদা ভবন করা উচিত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আজকেও নিউরো ইমারজেন্সি নিয়ে হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের এখানে নিউরো সার্জারি রোগীর চাপ প্রচুর। আমার ভাবছি, কর্তৃপক্ষ আমাদের হাসপাতালের নতুন ভবনে যেতে পাশে যে পুরাতন একটি পিজিক্যান্টিন আছে যেটা পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়েছে। সেটাকে ভেঙে যদি কর্তৃপক্ষ আমাদের নিউরো ইমারজেন্সি জন্য প্রস্তুত করে দেয় তাহলে রোগীর চাপ সামলে নেওয়া যাবে। আর ভবনটি প্রস্তুত করতে বেশি সময়ও লাগবে না।

আনুমানিক এক মাসের মতো দায়িত্ব বুঝে নেওয়া ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার  জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিজেই নিউরো ইমারজেন্সি ৯৮ নম্বর কক্ষে যাব ও পর্যবেক্ষণ করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪
এজেডএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।