ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

৩৮ দিন কারাবাসের পরও চাকরি বহাল!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৪
৩৮ দিন কারাবাসের পরও চাকরি বহাল!

লালমনিরহাট: ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ে ৩৮ দিন কারাবাস করেও চাকরি বহাল থাকায় স্থানীয়দের গণপিটিশনে তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।  

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সচিব বরাবর স্থানীয়রা ডেপুটি স্পিকারের সুপারিশসহ গণপিটিশন করেন।

 

বুধবার (২০ মার্চ) দিনভর তদন্ত করেন তদন্ত দলের প্রধান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দীপংকর রায়।

অভিযোগে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও দুর্গাপুর উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলে সরকার। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকদের সহায়তা করতে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ২০১১ সালের মে মাসে আদিতমারী উপজেলায়  যোগদান করে এখনো কর্মরত রয়েছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ওমর ফারুক। তিনি যোগদানের পর নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে খুলে বসেন নিজস্ব চেম্বার। মেয়ের নামে গড়ে তোলেন তানিশা মেডিকেল সেন্টার।  

অভিযোগ ওঠে, হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা নিতে এলে তাদের নিজের চেম্বারে ডাকেন স্যাকমো ওমর ফারুক। চেম্বারে রোগী নিতে রয়েছে তার বিশাল দালাল চক্র। যারা নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে রোগীদের পাঠান এবং পেশী শক্তি দিয়ে স্যাকমো ওমর ফারুককে পাহারা দেন। গত ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্যাকমো ওমর ফারুকের নিজস্ব চেম্বার তানিশা মেডিকেল সেন্টারে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে নানান অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর কর্তৃপক্ষ স্যাকমো ওমর ফারুককে সাময়িক বরখাস্ত করেন।  

ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপিল করেন সাজাপ্রাপ্ত স্যাকমো ওমর ফারুক। আদালত তার ৩৮ দিনের কারাবাসকে সাজা হিসেবে গণ্য করে আপিল মঞ্জুর করেন। এরপর এ দুই রায়ের বিরুদ্ধে  জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল (নম্বর ৪৫/২০১৭) করেন তিনি। সেখানে আপিল না মঞ্জুর করে আগের রায় বহাল রাখেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত।  

সর্বশেষ হাইকোর্টে ক্রিমিনাল রিভিশন নম্বর ১৬১৪/২০১৭ দায়ের করেন স্যাকমো ওমর ফারুক। পরে হাইকোর্টের একক বেঞ্চে খালাস পান তিনি। মামলা থেকে খালাস পেয়ে পুনরায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। স্বাস্থ্য বিভাগে বিশাল ক্ষমতাধর এ স্যাকমো মুহূর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কিছু ম্যানেজ করে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে নেন। একই সঙ্গে ৩৮ দিন কারাবাস করা সময়ের বেতন ভাতাদিও তুলে নেন তিনি।  

সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে নিয়ে পুনরায় বেস্ট পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার নাম দিয়ে তিনি চালু করেছেন আগের ব্যবসা। স্থানীয়রা বিভিন্ন দপ্তরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও তাকে বদলি করাতে পারেননি। ক্ষমতার প্রভাবে সবাইকে ম্যানেজ করে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। একই কর্মস্থলে যুগপূর্তি হলেও বদলি করাতে পারেননি কেউ।  

অবশেষে স্থানীয়রা স্যাকমো ওমর ফারুকের নানান অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচিকিৎসার চিত্র তুলে ধরে তার বদলি দাবি করে স্বাস্থ্য সচিব বরাবর গণপিটিশন করেন। সেই গণপিটিশনে বদলির সুপারিশ করেছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামছুল হক টুকু। সেই অভিযোগের তদন্তে নেমে পড়েন সিভিল সার্জনের গঠন করা দুই সদস্যের তদন্ত দল। বুধবার দিনভর বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত দলের প্রধান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.দীপংকর রায়।  

স্থানীয়দের দাবি, তদন্ত দলের সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তার নিজস্ব দালালদের বুধবার দিনভর হাসপাতাল চত্বরে বসিয়ে রাখেন স্যাকমো ওমর ফারুক। তদন্ত দল যাতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে না পারে এবং সাধারণ মানুষ দালালদের ভয়ে তদন্ত দলকে যাতে স্যাকমোর বিরুদ্ধে কোনো তথ্য না দেন সে ব্যবস্থা করেন তিনি। সব মিলে এ অভিযোগও খেয়ে ফেলতে ওপর মহলকে ম্যানেজ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।  

ভাদাই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, তদন্ত দল আসবে জেনে তদন্ত দলের সামনে দালালদের রেখেছিলেন স্যাকমো ওমর ফারুক। হাসপাতাল চত্বর ছিল স্যাকমোর দালালে ভরা। সাধারণ মানুষ ভিড়তে পারেননি তদন্ত দলের সামনে।

অভিযুক্ত স্যাকমো ওমর ফারুক বলেন, বিগত সময়েও আমার বিরুদ্ধে এমন বেনামি অভিযোগ এসেছেছিল। তখনও কিছু করতে পারেনি, এখনও পারবে না। তাই তদন্ত দলের সামনেই আসেনি অভিযোগকারীরা।  

তদন্ত দলের প্রধান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দীপংকর রায় বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা তদন্ত করছি। স্যাকমোর মামলা ও রায়ের বিষয়টি আদালতের কাগজেই প্রমাণিত। দীর্ঘ এক যুগ একই স্টেশনে থাকা স্যাকমোকে বদলি করাতে গণপিটিশনে ডেপুটি স্পিকার স্যারের সুপারিশ রয়েছে। যা আরও ভাবিয়ে তুলছে। আমরা সব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তদন্ত করছি। খুব দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।