মেহেরপুর: গত এক সপ্তাহ ধরে মেহেরপুর জেলা জুড়ে বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি।
বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। পেটের পীড়া, ঠান্ডা জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়া নিউমোনিয়া পানি শূন্যতা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, বাড়ছে হিট স্ট্রোকের রোগী। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট।
সোমবার (২৩ এপ্রিল) মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে রোগীরা বেড না পেয়ে মেঝেতে শুইয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দিন ও রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শুধু মানুষ নয়, প্রাণীকুলেও হাঁসফাঁস অবস্থা। এই গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এছাড়া প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতেও নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার সাজ্জাদ বলেন, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৩১৩ জন রোগী। এদের মধ্যে ২২৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। ইতোমধ্যে ২১০ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মেডিসিন ও গাইনি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৫০ নারী। শিশু ওয়ার্ড ভর্তি হয়েছে ২৪০ জন। ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৫৫ জন শিশু। এছাড়া উন্নত চিকিৎসা নিতে অন্যত্রে রেফার্ড করা হয়েছে ১০ জনকে বাকিদের হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুরুষ বিভাগে ভর্তি হন ৩৫০ জন রোগী। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩১১ জন রোগী। এছাড়া মারা গেছে ছয়জন রোগী। এছাড়া সার্জারি বিভাগে ভর্তি হন ৫০ জন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আব্দুল্লাহ মারুফ বলেন, এক সপ্তাহে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ১১২ জন, নারী ১৪৬ জন ও পুরুষ ৯৪ জন। ভর্তিকৃত এসব রোগীরা অধিকাংশই চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রোগীদের মধ্যে বৃদ্ধ ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক আহসান হাবিব জানান, গত এক সপ্তাহে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক রোগী।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার মোবাইল ফোনে বলেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকরা কাজ করছেন। বেডের সমস্যা থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট নেই।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। এখন তা অতি তীব্র তাপদাহে রূপ নিয়েছে। এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
এসএম