ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

নাটোরে অন্তঃসত্ত্বার রেডিওলজি পরীক্ষার ভুল রিপোর্ট, তদন্ত কমিটি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
নাটোরে অন্তঃসত্ত্বার রেডিওলজি পরীক্ষার ভুল রিপোর্ট, তদন্ত কমিটি

নাটোর: নাটোরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গর্ভবতী মায়ের রেডিওলজি পরীক্ষার ভুল রিপোর্টে ভোগান্তির স্বীকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন।

রোববার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে সিভিল সার্জন ডা. মো. মশিউর রহমান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

তদন্ত কমিটিতে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. তাসলিমা বেগমকে সভাপতি, একই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ভুঁইয়া ও রেডিওলজিস্ট ডা. তাসনীম আলমকে সদস্য এবং নাটোর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রাসেলকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন বলেন, স্বাস্থ্যসেবা অত্যন্ত সেনসিটিভ। বিষয়টি যেহেতু মানুষের জীবন নিয়ে, সেহেতু আমরা সবসময়ই আশা করি যে ডাক্তাররা তাদের সর্বোচ্চ ভালোটা দিয়ে চেষ্টা করবে এবং সেই লক্ষ্যেই সবাই কাজ করবে।

জানা যায়, সম্প্রতি নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী রায়পুর এলাকার বাবুল হোসাইনের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা (২৩) গর্ভবতী অবস্থায় নাটোরের সততা স্পেশালাইজড হাসপাতালের রেডিওলজি পরীক্ষা-পরবর্তী বিভ্রান্তিকর ও হতাশাজনক চিকিৎসা-পরামর্শ পেয়ে চরম ভোগান্তির স্বীকার হন। এই ভোগান্তি কাটিয়ে উঠে ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও আর কেউ যেন এমন ভোগান্তির স্বীকার না হয় সেজন্য প্রতিকার চেয়ে সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এতে সিভিল সার্জন ডা. মো. মশিউর রহমান চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে চিঠি ইস্যু করেছেন।

ভুক্তভোগী মেহেরুন্নেছার স্বামী মো. বাবুল হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী মেহেরুন্নেছাকে নাটোরের সততা স্পেশালাইজড হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট (গাইনি অ্যান্ড অবস্) ডা. আকলিমা খাতুনের শরণাপন্ন হন। এরপর একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ডা. আকলিমা খাতুনের পরামর্শ অনুযায়ী উক্ত হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের রেডিওলজিস্ট ডা. উম্মুল খায়ের ফাতেমার কাছে তার স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করানো হয়।

পরীক্ষার রিপোর্টে গর্ভের বাচ্চার মাথায় মাইল্ড আকারে পানি জমা থাকতে দেখে ডা. আকলিমা ছয় সপ্তাহ সময় অপেক্ষা করতে বলেন। ছয় সপ্তাহ পর ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সততা হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে আলট্রাসনোগ্রাম করা হলে রিপোর্টে পুনরায় পানি জমা হয়ে আছে বলে জানান ডা. আকলিমা খাতুন।

ভুক্তভোগী বাবুল অভিযোগ করে আরও জানান, এই রিপোর্ট দেখে ডা. আকলিমা খাতুন তাকে তার স্ত্রীর গর্ভে থাকা ৩৩ সপ্তাহের পরিণত বাচ্চা নষ্ট করতে বলেন এমনকি এই বাচ্চা যদি ভূমিষ্ঠ হয় তাহলে বিকলাঙ্গ (বুদ্ধি প্রতিবন্ধী) হয়ে জন্মাবে বলেও উল্লেখ করেন। ডা. আকলিমার এমন কথা শুনে বাবুলের স্ত্রী মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়েন।

পরবর্তীতে কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে বাবুল হোসাইন তার ঢাকাস্থ কর্মস্থল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. মাসুদুর রহমানকে বিষয়টি জানান। মাসুদুর রহমানের পরামর্শে বাবুল তার স্ত্রী ও গর্ভের সন্তানের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকাস্থ বারডেম মহিলা ও শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (গাইনি অ্যান্ড অবস্) ডা. রোনা লায়লার শরণাপন্ন হন।

২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ডা. রোনা লায়লার পরামর্শে বারডেমের রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামসি আরা বেগমের কাছে বাবুল তার স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাম করান। যার রিপোর্টে দেখা যায় গর্ভের বাচ্চার উল্টো পজিশন ব্যতীত অন্য সবকিছু পুরোপুরি নরম্যাল আছে।

ফলে ডা. রোনা লায়লা বাবুলকে দুশ্চিন্তা না করে স্ত্রীকে নাটোরে নিয়ে যেতে বলেন এবং গর্ভের বাচ্চার পজিশন ঠিক হলো কি না তা দেখার জন্য গত ১৬ মার্চ আরও একটা আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখতে বলেন। এই খবরে বাবুল, তার স্ত্রী ও পরিবারের সব সদস্য দুশ্চিন্তামুক্ত হন এবং নাটোরে ফিরে আসেন। এরপর ১৬ মার্চ নাটোরের আইডিয়াল ডায়াগনস্টিকে ডা. আব্দুস সামাদের তত্ত্বাবধানে বাবুলের স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয়।

এই রিপোর্টে গর্ভের বাচ্চার পজিশন ডেলিভারি হওয়ার উপযোগী বলে নিশ্চিত করেন এবং প্রসবের অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন ডা. আব্দুস সামাদ। এরপর একই বছরের গত ২৮ মার্চ  রাত ৯টা ১০ মিনিটে নাটোরের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বাবুলের স্ত্রী একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।

সততা হাসপাতালের ভুল রিপোর্ট ও ডা. আকলিমা খাতুনের অসৎ পরামর্শের ব্যাপারে বাবুলের স্ত্রী মেহেরুন্নেছা বাংলানিউজকে জানান, একজন ডাক্তারের মুখ থেকে ৩৩ সপ্তাহ বয়সী একটা গর্ভের বাচ্চা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে নষ্ট করে দেওয়ার কথা শুনে তিনি প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলেন। তার গর্ভের সন্তান যদি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বা অস্বাভাবিকভাবেও জন্ম নেয় তবুও তিনি তার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করতে পারেন না বলে দাবি করেন মেহেরুন্নেছা।

এ বিষয় নিয়ে ডা. আকলিমা খাতুনের কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি। কয়েক বার টেলিফোন করেও তিনি ফোন ধরেননি।

সততা হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের রেডিওলজিস্ট ডা. উম্মুল খায়ের ফাতেমা ভুক্তভোগীর অভিযোগকে নাকচ করে দিয়ে নিশ্চিতভাবে দাবি করেন, তার দেওয়া রিপোর্টে কোনো ভুলই নেই। এটা পুরোদমে চক্রান্ত। আপনার রিপোর্ট অনুযায়ী এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে বাচ্চা নষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা গাইনোকোলজিস্ট বলতে পারবেন, আমি কিছু বলতে পারবো না।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নাটোর সততা স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আওয়াল রাজা বলেন, আমরা যারা স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, তারা কিন্তু একটা মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সেক্ষেত্রে ডাক্তার বা যারাই এই স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে জড়িত তারা সবাই আমাদের মেশিন বা ইকুইপমেন্ট গুলো মানসম্পন্নভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। অভিযোগকারীর অভিযোগ সঠিক নয়।

তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিস থেকে তাকে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা হাসপাতাল ও হাসপাতালের মেশিনপত্র পরীক্ষা করে দেখবেন এবং তদন্ত করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।