ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘ঢাকা জেনারেল হাসপাতাল’র বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪
‘ঢাকা জেনারেল হাসপাতাল’র বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

ঢাকা: পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ‘ঢাকা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে।

বলা হচ্ছে, চিকিৎসাসেবার নামে বছরের পর বছর ধরে এটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল। সেখানে ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে রোগীর মৃত্যু, নারী রোগীর বন্ধ্যাত্বের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অনেক ভুক্তভোগীর দাবি। এ ধরনের বিস্তর অভিযোগ পেয়ে শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেক ছাত্র-জনতা সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাসপাতালটিতে অবস্থান নেন।  

নাজিম উদ্দিন রোডের ৫১ নাম্বার বাড়ির নিচতলা ও দোতলায় গড়ে তোলা হয়েছে হাসপাতালটি। সেই প্রতিষ্ঠানের সামনে ও ভেতরে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সহযোগিতায় ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, বাড়িটি রড-সিমেন্টের তৈরি হলেও ভেতরে ঝুপড়ি ঘরের মতো কয়েকটি ছোট ছোট রুম নিয়ে বানানো হয়েছে হাসপাতাল। রুমগুলো প্রচণ্ড নোংরা ও ধূলিময়। দেখলেই মনে হবে, হাসপাতাল নিজেই যেন রোগাটে।

শিক্ষার্থীরা ছোট একটি রুম দেখিয়ে বলেন, এটি পরিচালকের রুম। সেখানে দেখা যায়, একটি গণমাধ্যমের ক্যামেরা ও কতিপয় ভূঁইফোড় অনলাইন পোর্টালের বুম। সেই রুমের ওপরে একটি ছবি দেখা যায়, যেখানে পরিচালক হিসেবে নাম দেখা যায় ‘সাংবাদিক হাফেজ মহিউদ্দিন’।

কয়েকজন বলেন, অখ্যাত ও ভুঁইফোড় গণমাধ্যমকে সামনে রেখে ভয়-ভীতি দেখিয়ে চিকিৎসাসেবার নামে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। এই হাসপাতালের কিছু দালাল আছেন। তারা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী বাগিয়ে আনতেন। এক্ষেত্রে গ্রামগঞ্জ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা সহজ-সরল রোগীদের টার্গেট করা হতো। এই রোগীদের দিনের পর দিন চিকিৎসার নামে আটকে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করাই ছিল প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে গড়ে ওঠা চক্রের কাজ।

হাসপাতালটিতে ঊর্ধ্বতন কাউকে পাওয়া যায়নি। এজন্য অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্যও মেলেনি। তবে একজন নার্স ও একজন ওয়ার্ড বয়কে পাওয়া যায়। তারা বলেন, ‘আমরা এখানে চাকরি করি’। শিক্ষার্থীরা ‘এইচএম শামসুদ্দিন’ নামে একজনকে আটক করেন।

শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থী মো. শাকিল সাংবাদিকদের সেখানে বলেন, ‘আমরা সংবাদ পাই গতকাল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দালালের মারফতে ঢাকা জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে আসা সোনিয়া নামে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ভুল চিকিৎসায় তার পেটের সন্তানসহ মারা গেছেন। ভুল চিকিৎসার কারণে তার অবস্থা যখন খারাপ হয়ে যায়, তখনই তাকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি মারা যান। পরে লাশ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বাসায় চলে যান। এছাড়া এখানে ভুল চিকিৎসায় সারা জীবনের জন্য বন্ধ্যাত্বের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক নারী। এমন শত শত অভিযোগ পেয়ে আমরা আজকে ছাত্র-জনতা প্রতিষ্ঠানটিতে এসে দেখতে পারি যে, অভিযোগগুলা সঠিক, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক নেই। ’

শাকিল আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় তলায় ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরে কয়েকজন রোগীকে আটকে রাখা হয়েছে। মনে হচ্ছে এটিও একটি আয়না ঘর। এখানে রোগীদের জিম্মি করে টাকা কামানোই লক্ষ্য ছিল এই ভুয়া প্রতিষ্ঠানের কাজ। আমরা সেনাবাহিনী ও পুলিশকে খবর দিয়েছি। ওনারা এলেই আমরা এই হাসপাতালটি তাদের কাছে বুঝিয়ে দেব। এছাড়া শামসুদ্দিন নামে একজনকে আমরা আটক করেছি, তিনি এক সময় বলছেন ডাইরেক্টর আবার বলছেন চেয়ারম্যান। এই হাসপাতালের সামনে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের ব্যানার, কিন্তু ভেতরে খুনি আওয়ামী লীগের কান্ডারী। পাশাপাশি টিভির ক্যামেরাসহ মিডিয়ার বুম দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, মিডিয়ার নাম ব্যবহার করে তারা ধান্দাবাজি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে বছরের পর বছর অসহায় রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছিল। ’ 

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে পেটে ব্যথার কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন রাহেলা নামে এক মধ্যবয়সী নারী। সরলমনা এ নারীও দালালের খপ্পরে পড়ে ঢাকা জেনারেল হাসপাতালে আসতে বাধ্য হন। তাকে দ্বিতীয় তলায় একটি রুমে বন্দী অবস্থায় পাওয়া যায়।

তার মেয়ে রাশেদা বলেন, ‘গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কয়েকজন নারী আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। তারপর থেকে আমরা এখানে বন্দী। একের পর এক পরীক্ষা করে চিকিৎসা করাবে বলে তারা জানিয়েছে। ’

সেখানে থাকা অপর এক রোগী বলেন, ‘গতকাল রাতে সোনিয়া নামে পাঁচ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী এই হাসপাতালে আসেন। ওই নারীর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। চিকিৎসক জানান, তার পেটের বাচ্চাকে রক্ষা করতে গেলে সোনিয়া মারা যাবেন। আর সোনিয়াকে বাঁচাতে গেলে বাচ্চা মারা যাবে। তখন ওই নারীর স্বামী ডাক্তারদের জানান, তাদের আরও দুই সন্তান আছে। সোনিয়াকেই বাঁচানো হোক। পরে চিকিৎসকরা ব্যথা তুলতে ওষুধ সেবন করান। এরপর পেটের বাচ্চার কিছু অংশ বের হয়, বাকি কিছু অংশ পেটের ভেতরে থেকে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। পরে শুনেছি সোনিয়াও মারা গেছেন। ’

এ বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, খবর পেয়ে নাজিম উদ্দিন রোডের সেই হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪
এজেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।