ঢাকা: বুক-পেট জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিফা ও রিফাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন চিকিৎসকরা। তারা জানিয়েছেন, ৮২ চিকিৎসকের সমন্বয়ে টানা ১০ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিফা-রিফাকে আলাদা করা হয়।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ঢামেক হাসপাতালের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের ইউনিট-৪ এর প্রধান অধ্যাপক ডা. সাহানূর ইসলাম। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শিফা ও রিফা বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার (২৫) ও বাদশা মিয়া (৩০) দম্পতির সন্তান। গত বছরের ৭ জুন তাদের জন্ম হয়।
হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহানূর ইসলাম বলেন, গত ১৪ জুন বরগুনার বেতাগীর এ দম্পতি বুক-পেট জোড়া লাগানো শিশু দুটিকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২১ জুন হাসপাতালে শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে শিশু দুটিকে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক মাস পর তাদের আসতে বলা হয়। এক মাস পর আবার জোড়া দুই শিশুকে ভর্তি করা হয় এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে পুষ্টিজনিত সমস্যার সমাধান দিয়ে এক মাস পর পুনরায় দেখা করতে বলা হয়। তাদের ছয় মাস পর অস্ত্রোপচারের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
ডা. সাহানূর আরও বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর ১০ ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করা হয় জোড়া দুই শিশুকে। পরে দুজনকে আইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস (ভেন্টিলেটর) দিয়ে রাখা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে ও ৯ সেপ্টেম্বর শিফাকে ভেন্টিলেটরমুক্ত করা হয়। এর মধ্যে রিফা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও শিফা অসুস্থ ছিল। তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে শিফার পিত্তনালীর সংযোগ খুলে যাওয়ায় আবার অস্ত্রোপচার করা হয়। শিফা বর্তমানে আইসিইউতে আছে। শিফাকে আজকে কেবিনে দেওয়া হতে পারে, তবে তার ঝুঁকি রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে আরও অস্ত্রোপচার লাগবে তার।
এই চিকিৎসক জানান, জোড়া শিশু দুটিকে আলাদা করা এবং এখন পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ বহন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমাজ সেবা দপ্তর, আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃকক্ষ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বিএসএমএমইউ, বারডেম হাসপাতাল, ট্রান্সফিউশান মেডিসিন, ল্যাবরেটরি মেডিসিন এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক ও তার বাবা-মা।
ডা. সাহানূর বলেন, অর্থায়ন, জন্মগত ত্রুটিগুলো শনাক্তকরণ, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি—কখনো কখনো এমন অবস্থায় পড়তে হয় যে দুজনের কাউকে রক্ষা করা যায় না। কখনো একজনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। শিফার সমস্যা ছিল জন্মগত হৃদরোগ; হৃৎপিন্ডের পর্দা শেয়ারিং, যকৃত শেয়ারিং, সাধারণ যকৃতনালী, পোর্টাল শিরা, ডিওডেনাম, ম্যালরোটেশান। আর রিফার ছিল হৃৎপিন্ডের পর্দা, যকৃত, কমন যকৃত, পোর্টাল শিরা, ডিওডেনাম শেয়ারিং। এমন অবস্থায়ও অস্ত্রোপচার পরবর্তী ফলাফল ভালো ছিল। ওরা ভালো থাকুক সবার প্রচেষ্টায়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ওই সময় আন্দোলনের কারণে দেশের অবস্থা ভয়াবহ ছিল। এর মধ্যেও ডা. সাহানূর এই শিশুদের নিয়ে ছুটেছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লম্বা সময় নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এত চিকিৎসকের অক্লান্ত পরিশ্রম-ভালোবাসা কারণে জোড়া শিশু শিফা-রিফাকে সফলভাবে আলাদা করা সম্ভব হয়েছে।
শিফা-রিফার বাবা বাদশা মিয়া বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে চিকিৎসকসহ সবার সহযোগিতা পেয়েছি। সবার কাছ থেকে আর্থিকভাবে সহায়তা পেয়েছি। হাসপাতালের পরিচালক স্যারসহ সব ম্যাডাম-স্যারদের কাছে কৃতজ্ঞ।
আরও পড়ুন: ঢামেকে আলাদা হলো জোড়া শিশু শিফা ও রিফা
বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪
এজেডএস/এইচএ/