ঢাকা: পুষ্টিগুণ সম্পন্ন গাভির শাল দুধ এবার এইডস এর জন্য দায়ী এইচআইভি ভাইরাস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। অস্ট্রেলীয় গবেষকরা গবেষণা চালিয়ে এই আশার কথা জানিয়েছেন।
জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে এই খবর দিয়েছে।
ডয়েচে ভেলের তথ্যমতে, গোটা বিশ্বে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ মিলিয়ন। গত এক বছরে বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১০৩ জন আর মারা গেছেন ৬৫ জন।
বিশ্ব এইডস দিবসে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক৷
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে এইচআইভি সংক্রমণ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইপিএস। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার কম থাকলেও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন এটি ধীরে ধীরে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আশার কথা হচ্ছে, এইডস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার কমাতে বিজ্ঞানীদের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে৷ এই নিয়ে গবেষণা চলছে, আসছে সফলতা।
অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, অ্যান্টিবডি উৎপাদনে গাভির দুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা এইচআইভি সংক্রমণ রোধে সহায়ক হবে।
এই আন্টিবডি হচ্ছে রক্তে উৎপন্ন পদার্থ বিশেষ যা ক্ষতিকর জীবাণু প্রতিরোধ বা ধ্বংস করে।
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক পাল গর্ভবতী গাভির উপরে তাদের গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তাঁরা গাভির ‘শাল দুধ’ পরীক্ষা করেছেন। স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং নারীর গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে এই দুধ উৎপন্ন হয়৷
গবেষক দলের প্রধান এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডামিয়ান পার্সেল বলেন, শাল দুধে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষমতা গর্ভবতী গাভির রয়েছে৷ তবে শাল দুধের পর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপে যে দুধ গাভি উৎপন্ন করে তাতে অ্যান্টিবডির মাত্রা কম থাকে৷
পার্সেল বলেন, বাছুর যদি জন্মের পরপরই এই শালদুধ না পায়, তাহলে সেটি সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে এবং সাধারণত মারা যায়৷
এইচআইভি ভাইরাসের বিভিন্ন গোত্র রয়েছে৷ পার্সেলের ভাষায়, ‘‘প্রত্যেকটি গোত্রের এইচআইভি ভাইরাসের এত জিনগত রূপান্তর আছে, যা এই পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে৷ তিনি বলেন, খুব কম মানুষের দেহই এসব গোত্র শনাক্ত এবং প্রতিরোধে সক্ষম আন্টিবডি তৈরি করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের ভাষ্য হচ্ছে, গাভির দেহে এইচআইভি সংক্রমণ সম্ভব নয়। এজন্য তারা গাভির শাল দুধ ব্যবহার করে এইচআইভি প্রতিরোধক তৈরি করতে চাচ্ছেন৷ এক্ষেত্রে তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইমিউরনের সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কার দিয়ে ক্রিম বা জেল তৈরির দিকেই মনোযোগী হচ্ছেন৷ এই ক্রিম যোনিতে ব্যবহারের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ আরেও সহজ হবে৷ এছাড়া গর্ভনিরোধক রিংয়েও এটি যোগ করা যেতে পারে, যা দীর্ঘ সময় ধরে এইচআইভি প্রতিরোধক প্রোটিন মানবদেহে সরবরাহ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন তারা৷
গাভির শাল দুধ ব্যবহার করে এসব পণ্য তৈরিতে খরচও হবে কম৷
গবেষক দলের সদস্য মারিট ক্রামস্কি এই বিষয়ে বলেন, গাভির শাল দুধে থাকা অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে সত্যিকার অর্থেই খুব কম খরচে অনেক বেশি পরিমাণ প্রতিরোধক তৈরি সম্ভব৷ আমরা আশা করছি, সবশেষে আমরা এমন একটি পণ্য তৈরিতে সক্ষম হব, যেটি দামে সস্তা হবে৷
মরনব্যাধি এইডস নিয়ে মানুষের চিন্তার কোন অন্ত নেই৷ গরুর দুধ গবেষণার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে এটি হবে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১২
এমআইএইচ/সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান, নিউজরুম এডিটর