ঢাকা: জীবন জীবিকার প্রয়োজনে অফিস বা ব্যবসা ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকতে হয় আমাদের অনেককেই।
কিন্তু এই দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকার দরুন আমাদের ভুগতে হয় অনেক সমস্যায়।
অনেকের জন্যই এটা এক ধরণের অভিশাপ, এ সমস্যার কারণে অনেকে এমনকি পেশা পরিবর্তন করতেও বাধ্য হন।
আজকে আমরা মূলত আলোচনা করব, এ ধরণের কোমর বা ঘাড়ের ব্যথার কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে।
স্বাভাবিক ভাবেই আমরা যখন চেয়ারে বসি তখন কিছুটা সামনের দিকেই ঝুঁকে বসি। আমাদের কোমরের যে মেরুদণ্ড, তা কিন্তু সরল রেখার মত সমান বা সোজা নয়। মেরুদণ্ড অনেকগুলো ছোট ছোট হাড়ের সমন্বয়ে তৈরি। এই হাড়গুলোর মাঝখানে আবার রয়েছে নরম জেলির মত ডিস্ক যা হাড়গুলোর অভ্যন্তরীণ ঝাঁকুনি প্রতিহত করে ও পুরো মেরুদণ্ডকে নমনীয় করে।
আমরা যখন দীর্ঘক্ষণ সামনের দিকে ঝুঁকে বসে থাকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডের এই ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, একই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের আশেপাশের মাংসপেশী ও লিগামেন্টের ওপর।
ডিস্কগুলো যেহেতু নরম, তাই তারা এই অস্বাভাবিক চাপের দরুন আস্তে আস্তে স্ফীত হয়ে মেরুদণ্ডের ভেতর থেকে শরীরের বিভিন্ন দিকে যে নার্ভগুলো চলে গেছে, তাদের গায়ে চাপ দেয়। এ কারণেই আমরা মূলত ব্যথা অনুভব করি। এই চাপের তারতম্য বা তীব্রতার ওপর ব্যথার ধরণও নির্ভর করে। চাপ যত বেশি হবে, ব্যথার তীব্রতাও তত বেশি হবে, সেই সাথে কোমর থেকে ব্যথা ছড়িয়ে পড়বে আরও দূর অবধি। এমনকি অনেক সময় এই ব্যথা পায়েও অনুভূত হতে পারে।
এখন আমরা আলোচনা করবো এ ধরণের ব্যথা থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করা যায় তার উপায় নিয়ে।
উন্নত দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের এ ধরণের সমস্যা থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের অ্যাডজাস্টেবল চেয়ারের ব্যবস্থা করে থাকে। এই চেয়ারগুলো মেরুদণ্ডের আকৃতি ঠিক রেখে আসনগ্রহণকারীদের বসতে সাহায্য করে। তবে বাংলাদেশে এই চেয়ারগুলো সহজলভ্য নয়, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোও এর ব্যয় বহন করতে ইচ্ছুক নয়।
তবে সাধারণ চেয়ারেও কিছু বিশেষ ধরণের কুশন ব্যাবহার করে মেরুদণ্ডকে সোজা রেখে কোমর ও ঘাড়কে ব্যথা থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
নিচের ছবির মত করে চেয়ারটিকে অ্যাডজাস্ট করে নিলে এ ধরণের ব্যথা থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন।
এখন আলোচনা করব, যাদের ইতিমধ্যেই কোমর অথবা ঘাড়ে ব্যথা চলে এসেছে তারা কি করবেন।
প্রথমত, কোনোভাবেই সামনের ঝুঁকে বসবেন না। সামনের দিকে ঝোঁকা বন্ধ করতে চাইলেও অনেক সময় কাজের চাপে আমাদের মনে থাকে না সোজা হয়ে বসার কথা। এর জন্য আমরা একটি বিশেষ কুশন চেয়ারের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারি। এগুলকে বলা হয় লাম্বার রোল।
নিচের ডান পাশের ছবির মত করে এগুলো ব্যবহার করলে কোমর আপনা থেকেই সোজা থাকবে। যখন আপনি সামনের দিকে ঝুঁকতে চাইবেন তখন এই লাম্বার রোল আপনাকে বাধা দেবে।
চেষ্টা করবেন ২-৩ ঘণ্টা চেয়ারে বসে টানা কাজ করার পর ১০-১৫ মিনিটের হাঁটাচলা করে নিতে। অনেক সময় ব্যথা বেশি হয়ে গেলে আপনাকে ফিজিওথেরাপিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি আপনার সমস্যার কারণ ও ধরণ দেখে বিভিন্ন থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ (সাধারণ এক্সারসাইজ নয়) দেবেন, যাতে আপনার মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলো আগের জায়গাতেই ফিরে আসে। প্রয়োজন হলে মেরুদণ্ডের হাড়ে বিশেষ ধরনের ম্যানিপুলেশনের (হাই ভেলোসিটি, লো-আমপ্লিচ্যুড থ্রাস্ট) মাধ্যমে ডিস্ক গুলোকে পূর্বের অবস্থানে নিয়ে আসা হয়, তবে এর জন্য ম্যানিপুলেটিভ ফিজিওথেরাপিতে দক্ষ কারও কাছ থেকেই এটা গ্রহণ করতে হবে।
শেষ কথা হচ্ছে, বেশিদিন কর্মক্ষম থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই সামনে দিকে ঝুঁকে বসে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সবসময় কোমরের স্বাভাবিক বক্রতা বজায় রেখে বসতে হবে। প্রয়োজনে লাম্বার রোল ব্যবহার করতে হবে যেন ব্যথা তৈরি হতে না পারে।
লেখকের পরিচয়: ডাঃ ওসমান গনি, এম এস সি (নিউরো রিহ্যাব, ইউকে), ডিপ্লোমা ইন অর্থপেডিক মেডিসিন (বেলজিয়াম) বি, পি, টি (ডি, ইউ)। তিনি একজন নিউরো রিহ্যাব ও পেইন স্পেশালিষ্ট ফিজিওথেরাপিস্ট।
প্রয়োজনে যোগাযোগ: 01931405986।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১২
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর