ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শিগগিরই জরুরি বিভাগ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত।
বুধবার দুপুরে নিওনেটাল (নবজাতক) ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (এনআইসিউ) সম্প্রসারণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান।
এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক বলেন, “সরকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে অর্থঘাটতির কারণে প্রয়োজনীয় লক্ষ্যে পৌঁছতে সময় লাগবে। ”
মন্ত্রী তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক পুনরায় চালুকরণসহ বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন। এনআইসিউ সম্প্রসারণ কার্যক্রমের জন্য বর্তমান প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে অনুসারে ২০০৭ সালে জীবিত নবজাতক (২৮ দিন পর্যন্ত) ও শিশু মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে যথাক্রমে ৪১ ও ৫২ জন। ২০১১ সালে এ হার হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩২ ও ৪৩ জনে। ২০১৫ সালের মধ্যে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল-এর স্বাস্থ্য বিষয়ক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে নবজাতককের মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২১ জনে কমিয়ে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাতক বিভাগের সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম এ লক্ষ্য পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, “বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন, মৃত্যু পথযাত্রী রোগীদের জন্য সেন্টার ফর প্যালিয়াটিভ কেয়ার, গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রোগীদের উন্নতমানের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়েছে। ”
তিনি বলেন, “শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিন ব্লকের নিচতলায় জরুরি বিভাগ ও সান্ধ্যকালীন অপারেশন থিয়েটার চালু করা হবে। ”
এনআইসিইউ সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্ল বলেন, “এনআইসিউ বেডের সংখ্যা ১৬ থেকে ৩১ এ উন্নীত করা হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১২টি ভাড়া বিছানা। বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিটি এনআইসিউ ইনকিউবেটর ভাড়া দৈনিক যেখানে ৫০০০ টাকা, সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি এনআইসিইউ বেডের ভাড়া মাত্র ৫০০ টাকা। ভেন্টিলেটরের ভাড়া অন্যান্য হাসাপাতালে যেখানে ১০ হাজার টাকা, সেখানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভেন্টিলেটরের দৈনিক ভাড়া মাত্র ১০০০ টাকা। রোগীদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করেই ভাড়ার এ হার নির্ধারণ করা হয়েছে। ”
তিনি বলেন, “স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাতক বিভাগে ২৪ ঘণ্টাই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ বিভাগে রয়েছে নিজস্ব ৩১ জন নার্স। বিভাগের চিকিৎসক ও নার্স সকলেই সেবার মনোভাব নিয়ে সারাদেশ থেকে আসা অসুস্থ নবজাতকদের জন্য নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ বিভাগটি থেকে প্রতি বছর প্রায় ৭ শ’ নবজাতককে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। ”
বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন থেকে প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার নবজাতককে এ বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ূন কবীর, ইউনিসেফ’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি প্যাসকেল ভিলেনিউব।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৩
এমএন/সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর