ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

অবকাঠামো না থাকলেও কেনা হয়েছে আইসিইউ যন্ত্রপাতি!

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৪ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৩
অবকাঠামো না থাকলেও কেনা হয়েছে আইসিইউ যন্ত্রপাতি!

ঢাকা: অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই ৬০ কোটি টাকার চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কিনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ক্রয় প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। আর মঙ্গলবার সকালে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আইসিইউ ও পেশেন্ট বেড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক।

তবে জেলা পর্যায়ে যেসব হাসপাতালে আইসিইউ সরঞ্জাম বিতরণ করা হচ্ছে, সেই হাসপাতালগুলোতে নেই কোন অবকাঠামো। যন্ত্রপাতি চালানোর জন্যে চিকিৎসক ও নার্স বা স্টাফদের দেওয়া হয়নি প্রশিক্ষণ। বিগত দিনগুলোর মতোই সিএমএসডি এর কেনা এসব যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে মোট নয় ধরনের যন্ত্রপাতি বিতরণ করার উদ্যেগ নিয়েছে সরকার। এসব যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৬০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ২ হাজার ৩৮৮টি পেশেন্ট বেড বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ২৫টি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ১৭০ টি ইসিজি মেশিন সিক্স চ্যানেল, ২৫ টি পালস্ অক্সিমিটার, ৫০ টি আইসিইউ বেড, ৪৫ টি সি আর্ম মেশিন, ৫০ টি আইসিইউ ভ্যান্টিলেটর, কার্ডিয়াক চিকিৎসার জন্যে ৫০ টি মাল্টি প্যারামিটার পেশেন্ট মনিটর এবং ৫০ টি সিরিঞ্জ পাম্প বিতরণ করা হচ্ছে।

দেশের ৫০ টি জেলা হাসপাতালে একটি করে আইসিইউ বেড এবং সে অনুপাতে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ঔষধাগার এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন।
তিনি বলেন, “চলতি জুন মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে যন্ত্রপাতি সরকারের কাছে চলে আসবে এবং আগামী ২ মাসের মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৌছে দেওয়া হবে। ”

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিতরণ কার্যযক্রমের উদ্বোধন হলেও হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সেট আপ বসানোর মতো অবকাঠামো এখনো তৈরি করা হয়নি।

সকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলার সিভিল সার্জনের হাতে বিতরণের সরঞ্জাম তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিকেলে গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এখনো অবকাঠামো নেই। হাসপাতালে নতুন করে স্থান নির্ধারণ করতে হবে আইসিইউ’ এর জন্যে। যন্ত্রপাতি চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চিকিৎসক ও স্টাফদের এখনো সরকার থেকে কোন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। তবে দু’সপ্তাহের একটি প্রশিক্ষণ হলেই এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার সহজ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ জেড আতিক বলেন, শুধু যন্ত্রপাতি দিলেই হবে না। সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রপাতি চালনার কৌশলের ওপর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

নতুন করে এসব হাসপাতালের আইসিইউ ব্যাবস্থা চালু করা হলেও, যেসব জেলা হাসপাতালে এখন আইসিইউ রয়েছে তাদের অনেকগুলোই এখন যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঝিনাইদহ জেলার সিভিল সার্জন নাসরিন সুলতানা মঙ্গলবার বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, “এখানে ২ থেকে ৩টা আইসিইউ রয়েছে। কিন্তু যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু এখানে নতুন কিছু পাঠানো হবে বলে জানতে পারিনি এখনো। ”

এদিকে অনুষ্ঠান করে ২ হাজার ৩৮৮টি পেশেন্ট বেড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্ধোধন করা হলেও এখনো জেলা সিভিল সার্জনরাই জানেন না এসব উদ্যেগের কথা।
 
মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম ও চাপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, সরকারের এ উদ্যেগ সর্ম্পকে তাদের ধারণা নেই বলে জানান। প্রত্যেকেই বলেছেন, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কোন ধরনের তথ্য দেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, “এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি কোন কোন জেলায় পাঠানো হবে। ”

তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

মঙ্গলবারের উদ্বোধণী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক বলেছেন, “বিভিন্ন অযুহাতে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি বিকল করে ব্যক্তিগত ব্যবসার সুবিধার তথ্য পেলেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে গরীব মানুষ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে পারে না তারা যাতে উপজেলায় চিকিৎসা সেবা পায় তা নিশ্চিত করার সরকারের উদ্যোগ যেন কোনোভাবেই ব্যহত না হয় সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। ”

তিনি বলেন, “প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সঠিক ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়াই সরকারের মূল লক্ষ্য। এলক্ষ্যে সরকার উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের উপরও গুরুত্বারোপ করেছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিকল যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে সেগুলোর দ্রুত মেরামতের জন্য একটি সেল গঠন করা হচ্ছে। ”
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, ১৮, ২০১৩
এমএন/তানিম কবির, নিউজরুম এডিটর/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।