ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

মো. আজিবুর রহমান রাজিব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৩
ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

ঢাকা: আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অজ্ঞতার কারণে অনেক ডায়াবেটিস রোগীকেই বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

ডায়াবেটিস হলে করণীয় ও এর পথ্য সংশ্লিষ্ট প্রভৃতি বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের এনডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. ফারুক পাঠান। ডায়াবেটিসের ওপর তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মো. আজিবুর রহমান রাজিব।

রাজিব : বাবা মায়ের ডায়‍াবেটিস থাকলে তার প্রভাব কি সন্তানের ওপর পড়ে অর্থাৎ সন্তানেরও কি ডায়াবেটিস হতে পারে, এমনকি ওজন কম হলেও? কিভাবে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?

ডা. ফারুক: ভালো প্রশ্ন করেছেন! হ্যাঁ, যদি বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস থাকে তাহলে ওজন কম হলেও সন্তানের ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে ডায়াবেটিস হলে নিজের সচেতনতা বাড়াতে হবে। শরীরের ওজন বাড়তে দেওয়া যাবে না। যেসব খাবার খেলে ওজন বাড়ে সেসব পরিহার করতে হবে।

অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেডযুক্ত চাল, গম, আলু, ভুট্টা প্রভৃতি থেকে তৈরি খাবারে ওজন বাড়ে। চর্বি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, চকোলেট, আইসক্রিম এবং মিষ্টি খেলেও ওজন বাড়তে পারে। এছাড়া, শারীরিক পরিশ্রম কম করলেও ওজন বাড়তে পারে।

তবে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে, সুষম খাদ্য খেতে হবে, হাইক্যালরিযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে, প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘণ্টা নিয়ম করে হাঁটতে হবে। বেশি পরিমাণ শাকসবজি, টক জাতীয় ফল  এবং সুষম খাদ্য খেতে হবে। বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে বছরে ১ থেকে ২ বার ডায়বেটিস পরীক্ষা করাতে হবে।

রাজিব : ইনস্যুলিন নেওয়া কি ক্ষতিকর না উপকারি? এ বিষয়ে কিছু বলুন!

ডা. ফারুক: বয়স ২৫ বছর বা তার বেশি হওয়াটা কোন বিষয় নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অল্প বয়সী ডায়াবেটিস রোগীদের প্যানক্রিয়েস থেকে ইনস্যুলিন পরিমাণ মত নিঃসরণ হয় না। তাই যখন ঔষধ দিয়ে রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না তখন ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনস্যুলিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

ইনস্যুলিন আমাদের শরীরের একটি অতি প্রয়োজনীয় হরমোন। আমাদের শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে যখন হরমোন তৈরিতে ব্যর্থ হয় তখন ইনস্যুলিন দিয়ে তা পূরণের চেষ্টা করা হয়। এ কারণে ইনস্যুলিন সারা জীবনই নিতে হবে। তাছাড়া, ইনস্যুলিন যেহেতু কোন ঔষুধ নয় এ কারণে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনস্যুলিন অনেক পুরাতন চিকিৎসা এবং সুগার নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে শক্তিশালী।

অনেক সময় ট্যাবলেট নিয়মিত খাওয়ার পর আর কাজ করে না, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে প্যানক্রিয়েস’র কার্য ক্ষমতা কমে যায়। প্যানক্রিয়েস রোগীর শরীরে হয়তো আরও কয়েক দশক ভালো থাকতো, কিন্তু নিয়মিত ঔষুধ খাওয়ার কারণে পাঁচ বছরেই  ইনস্যুলিন তৈরির কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এটি। তখন অবশ্যই ইনস্যুলিন নিতে হয়। তাই শুরু থেকেই ইনস্যুলিন ব্যবহার করা ভাল। এতে প্যানক্রিয়েস’র উপর চাপ কমে এবং এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় না।

রাজিব : ডায়‍াবেটিস রোগীর বেশি বয়সে শরীর র্দুবল থাকলে কোনো ভিটামিন জাতীয় ঔষুধ বা স্যালাইন খাওয়ানো যাবে কি?

ডা. ফারুক : এক্ষেত্রে প্রথমত, রোগীর শারীরিক দুর্বলতা নির্ণয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ভিটামিনের অভাব আছে কিনা, রক্ত শূন্যতা আছে কিনা, ইলোকট্রোলাইটের অসমাঞ্জস্য আছে কিনা তা দেখতে হবে। এসব নির্ণয়ের পর সে অনুসারে চিকিৎসা  করলে শারীরিক দুর্বলতা কেটে যাবে।

তৃতীয়ত, ভিটামিন বা স্যালাইন খেলে ডায়াবেটিস  বাড়বেও না কমবেও না। তাই ভিটামিন খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া প্রচুর শাক সবজি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং  শরীরে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ হয়। এছাড়া, পানি জাতীয় সবজিতে সুগার থাকে না এবং এতে প্রচুর ভিটামিন থাকে। যেমন লাউ, কুমড়া, পটল, করলা, চিচিঙ্গা। এগুলো খেলে ভিটামিনের অভাব পূরণ হয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৩
এইচএ/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।