ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ওষুধ কোম্পানি থেকে ঘুষ নেন যারা (তালিকা-১)

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৩
ওষুধ কোম্পানি থেকে ঘুষ নেন যারা (তালিকা-১)

ঢাকা: ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ ও গিফট নিয়ে প্রেসক্রিপশনে রোগীদের ওইসব ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানিগুলো।



অনৈতিকভাবে নিজেদের ওষুধ বাজারজাতকরণে ডাক্তার ও ফার্মাসিস্টদের হাত করতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীর চেয়ে বেশি দেখা যায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের।

অনুসন্ধান চালিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো থেকে চিকিৎসকদের ঘুষ নেওয়ার দলিল পেয়েছে বাংলানিউজ। সেসব দলিলে উল্লেখ রয়েছে, কোম্পানিগুলো মেডিকেল প্রোমোশনাল অফিসারের মাধ্যমে কোনো চিকিৎসকে কতো টাকা মাসোহারা (ঘুষ) দেন।

বাংলানিউজের হাতে আসা তালিকায় রয়েছে রাজধানীসহ দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক ও কোয়াক চিকিৎসক এবং ফার্মাসির মালিকদের নাম।

মঙ্গলবার থেকে ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসকদের নাম প্রকাশ করছে বাংলানিউজ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম পর্যায়ে রংপুর বিভাগের রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার যেসব চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টরা ওষুধ কোম্পানিগুলো থেকে সম্প্রতি অর্থ নিয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে ৭৫ জনের কর্মসংস্থান এলাকা ও নাম প্রকাশ করা হলো।

ঘুষগ্রহীতা চিকিৎসক-ফার্মাসিস্টরা:
রংপুরের মিঠাপুকুরের বিসমিল্লাহ মেডিসিন কর্নারের মো. মাসুদ রানা, শলতার  হাটের আনিসুর রহমান, নগর হাটের চাওন ফার্মেসির আমিনুল ইসলাম, উপজেলার সুকুরহাটের কদমতলা বাজারের মিন্নাত হোসেন ওষুধ কোম্পানি থেকে অর্থ নিয়েছেন।

তবে মিঠাপুকুরের আজাদ পল্লী চিকিৎসালয়ের আবুল কালাম আজাদের নাম এ তালিকায় থাকলেও কোম্পানির কাছে অর্থ নেওয়ার মতো পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক হয়ে ওঠে নি।

এহেন অনৈতিক কাজের জন্য অর্থ নেওয়ার তালিকায় আরও রয়েছেন বদরগঞ্জ উপজেলার মোমিনপুর বাজারের সুধীর চৌধুরী দেবনাথ, আজাদ হোমিও হলের এম এ আজাদ, লালদিঘী বাজারের কাওসার আলী, বাঁধন ফার্মেসির রাসেল শাহ, উপজেলার পুরাতন বাজারেন মৌসুমী ফার্মেসীর মাকলুর রহমান, নওয়াব ফার্মেসির এম এ লতিফ।
 
রংপুরের শুটিবাড়ি এলাকার রহমতপুর বাজারের শিপন ফার্মাসির ডা. সোলায়মান, তেঁতুলিয়া বাজারে শাহজাহান, শাহ নূর ফার্মেসির শাহ নূর আলম, বায়ারাতি হাটের ডা. নন্দলাল বর্মন, বায়রাটি হাটের কলেজ রোডের মো. আনোয়ারুল ইসলাম ওষধু কোম্পানি থেকে অর্থ হাতিয়েছেন।

রংপুরের ঠাকুরবাড়ি বাজারের দেলোয়ার হোসাইন, এম/এস আলম ফার্মেসির সাইফুল আলম, পালিচোরা বাজারের শিহাব হোসেইন, রংপুর মডার্ন মোড়ের মো. আজিজুল হক, মিঠাপুকুরের শান্তা ফার্মেসির মো. শাখাওয়াত হোসেন, সালমারা বাজারের মো. সাইফুল ইসলামও অর্থ নিয়েছেন।
 
তালিকায় আরও রয়েছেন, পীরগঞ্জ হেলথ কমপ্লেক্সের ডা. আরমান আলী, বিনয় চন্দ্র, ঝোড়ার ঘাট বাজারের পীযুষ কুমার সরকার, ডক্টরস পয়েন্টের ডা. মো. ওবায়দুল আলম, আছিয়া কমপ্লেক্সের ডা. মিনিম পারভীন মিশু।
 
ভান্ডাবাড়ি বাজারের মোকাররম হোসেন, মো. ওয়াজেদ আলী তারা, মিঠাপুকুরের গোপালপুর ফার্মেসির সন্তোষ কুমার সরকার, পীরগঞ্জের রসুলপুর বাজারের তালুকদার ফার্মেসির দীজেন্দ্রনাথ তালুকদার, উজিরপাড়ার জিয়ন ফার্মেসির মো. ইব্রাহিম, গুজিপাড়া বন্দরের মোকসেদ আলী সরকার।

তালিকায় রেইনবো ক্লিনিকের আমিরুল ইসলামের নাম থাকলেও অর্থের লেনদেন হয়নি। অর্থের লেনদেন হয়েছে রংপুরের ধাপ মোড়ের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটোরিজ এর আব্দুস সাত্তার, স্টেশন রোডের এস কে সরকারের সঙ্গে।

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি থানা হেলথ কমপ্লেক্সের ডা. আবু বকর, একই থানার হসপিটাল গেটের ডা. মো. জহুরুল হক, থানা গেটের আদর্শ ফার্মেসির শাহ আলম, জামতলা মোড়ের সরকার ডেন্টাল কেয়ারের ডা. আমজাদ হোসেন, অন্ধরিজার বাজারের খবির হোসেন, ফুটানি বাজারের অনন্যা মেডিকেল স্টোরের আব্দুল লতিফের নাম পাওয়া গেছে ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ নেওয়া ব্যক্তিদের তালিকায়।

এ জেলার ফুলবাড়ির জনতা ফার্মেসির এরশাদুল হক, বর্দার হাটের জননী ফার্মেসির সাবের আলী, দোয়েল ফার্মেসির নজরুল ইসলাম, কালিরহাটের জেরিন মেডিকেল স্টোরের আবু বকর সিদ্দিক, ফুলবাড়ি সদর হেলথ কমপ্লেক্সের কৃষ্ণ কুমার পাল রয়েছেন তালিকায়।

তালিকায় রয়েছে নাগেশ্বরীর থানা হেলথ কমপ্লেক্সের ডা. উপেন্দ্র নাথ শীল, রুবেল ফার্মেসির রোকনুজ্জামান রুবেল, আমিনুর রহমান, নাগেশ্বরী মিনা মেডিকেল ফার্মেসির আমজাদ হোসেন, নাগেশ্বরী থানা হেলথ কমপ্লেক্সের ডা. আখতার বেগম তারা।

চিলমারির রানীগঞ্জ বাজারের মো. এরশাদুল হক, একই বাজারের মনসুর আলী বকুল, ফকিরের হাটের নিশাত ফার্মেসির শাহজাদা সুলতান, অজিত কুমার সরকার, উলিপুরের বজরা বাজারের বজরা ফার্মেসির জাহিদুল ইসলাম, মাদার ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড চিলড্রেন সেন্টারের সুদীপ কুমার বোস রয়েছেন এ তালিকায়।
 
তালিকায় রয়েছেন কুড়িগ্রামের সেবা ক্লিনিক এর ডা. অমিত কুমার বসু, মোগল হাট বাজারের উপসম ফার্মেসির ওমর ফারুক, রাজারহাট রোডের ত্রিমোহনী বাজারের রশিদুল ইসলাম, নান্দনিক বিশ্বস্ত চিকিৎসা সেবা’র ডা. এস এম আতাউর রহমান।
 
রাজারহাট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স এর ডা. আবু মোতালেব, রাজারহাটের কুড়ারপুরের আশরাফুল মেডিকেল হল এর আব্দুল আজিজ সরকার, পল্লী সেবা ফার্মেসির তরেন্দ্র নারায়ণ এর নামের পাশে চেক উল্লেখ থাকলেও টাকা গ্রহণের ব্যাপারে ‘না’ রিপোর্ট এসেছে। মধ্য বাজারের অরুণ মেডিকেল স্টোর, আদর্শ বাজারের বিসমিল্লাহ ফার্মেসির মো. হাবিবুর রহমানের নাম রয়েছে তালিকায়।
 
আরো রয়েছেন, চিলমারি থানা হেলথ কমপ্লেক্সের ডা. শামসুজ্জামান, ডা. জাহিদুর রহমান, থানা বাজারের বাদশা আব্দুল হাই এবং হেমন্ত কুমার বর্মন।
 
এসব চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টরা অনৈতিকভাবে অর্থ নিয়ে রোগী এবং ক্রেতাকে ওই কোম্পানির ওষুধের জন্যে পেসক্রাইব করেন এবংেওষুধ বিক্রি করেন।

যেহেতু চিকিৎসক ছাড়াও কোয়াক চিকিৎসক, পল্লী চিকিৎসক এবং ফার্মাসিস্ট রয়েছে তালিকায়, তাই সকলের নামের পূর্বে ‘ডা.’ পদবী উল্লেখ করা হয়নি। তবে কোম্পানি অর্থ প্রদানের তালিকায় সকলের নামের পূর্বেই ‘ডা.’ ব্যবহার করেছে।  

বুধবার প্রকাশ করা হবে আরো চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টদের নাম। আপনি বা আপনার চারপাশে চিকিৎসা সেবা পেতে হয়রানির শিকার হওয়ার কোনো অভিযোগ থাকলে জানাতে পারেন mazadul.noyon@gmail.com এই ঠিকানায়। অথবা ফোন করুন ০১৬৭৪১৭৪০৭০ এই নাম্বারে।

বাংলাদেশ সময়: ০২০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৩/আপডেট ১৬৩০ ঘণ্টা
এমএন/এসএফআই/এসআর/এমজেডআর/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।