ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

এইচআইভি ভাইরাস দিয়ে ক্যান্সার নিরাময়!

মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম শিপু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৩
এইচআইভি ভাইরাস দিয়ে ক্যান্সার নিরাময়!

ঢাকা: মাত্র সাত বছর বয়সী ছোট্ট মেয়েটির নাম এমিলি। পাঁচ বছর বয়স থেকেই আক্রান্ত হয় লিউকেমিয়া নামক মরণব্যাধীতে।

ডাক্তাররা তাকে সুস্থ করতে প্রথাগত সব চিকিৎসাই চেষ্টা করেছেন দিনের পর দিন। কিন্তু মেয়েটির অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে শেষ চিকিৎসা হিসেবে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন  (Bone Marrow Transplant)  করার মতো শারীরিক সক্ষমতা তার আর অবশিষ্ট থাকে না।

চিকিৎসকরা এমিলির মা-বাবাকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের মেয়েকে প্রচলিত কোনো চিকিৎসায়ই বাঁচানো সম্ভব নয়।

শেষ চেষ্টা হিসেবে ফিলাডেলফিয়া চিলড্রেন হসপিটালের ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞরা এমিলিকে সম্পূর্ণ নতুন ও ভয়ঙ্কর একটি চিকিৎসার ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি চান। এমন পরিস্থিতিতে এমিলির মা-বাবাকে নিতে হয় এক কঠিন সিদ্ধান্ত। তারা বুঝতে পারেন এই চিকিৎসায় মত না দিলেও এমিলিকে তারা বাঁচাতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত তারা চিকিৎসকদের অনুমতি দেন চিকিৎসা চালিয়ে যাবার।
 
সেদিন থেকে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা এমিলিকে নিয়ে কাজ শুরু করেন। তারা তার শরীর থেকে T-Cell(রোগ প্রতিরোধকারী দেহকোষ) সংগ্রহ করেন। তারপর সেই রোগপ্রতিরোধকারী দেহকোষগুলোতে তারা এইচআইভি ভাইরাস প্রয়োগ করেন। এই ভাইরাস মানুষের মরণব্যধি এইডসের জন্য দায়ী। কিন্তু এটাকে বিশেষজ্ঞরা জিনগত পরিবর্তন এনে তারপর এমিলির রক্তের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর সাথে বিক্রিয়া ঘটান। যার ফলশ্রুতিতে এমিলির শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোতে জিনগত পরিবর্তন আসে। কোষগুলো পুনরায় তার শরীরে প্রবেশ করানো হয় যা সম্পূর্ণরূপে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবনীয় পরিবর্তন করে।
 
বিপদ ঘটে তারপর। চিকিৎসকরা এই চিকিৎসার যতটুকু ক্ষতিকর প্রভাব আশা করেছিলেন, এমিলির অবস্থা তার তারচেয়ে অনেক বেশি খারাপ হতে থাকে। তাকে দ্রুত ইনটেনসিভ কেয়ারে ভর্তি করা হয়। সেইরাতে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এমিলির চিকিৎসক টিমের প্রধান ড. স্টিফান গ্রুপ হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো লোক না। তিনি এমিলিকে বর্তমান পরিস্থিতি চিন্তা করে নতুন কিছু ওষুধ দেন। কিছু সময়ের ভিতরেই তার জ্বর কমে যায়, ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে! তারপর চিকিৎসকদের চোখের সামনেই মিরাকল ঘটে। তিনি সপ্তাহের ভিতরেই এমিলি প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে।  

চিকিৎসকরা আরও কিছু টেস্ট করে নিশ্চিত হন যে তার শরীরে এখনও এইচআইভি দিয়ে পরিবর্তন করা রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো পূর্ণ উদ্যোমে কাজ করে যাচ্ছে।

আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে এই চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পূর্ণ হলেও ২০১২ সালের শেষের দিকে এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। এমিলির চিকিৎসার এই সাফল্যের মাধ্যমে লিউকেমিয়ার নামক ভয়ঙ্কর ক্যান্সারের চিকিৎসার এক নতুন দিগন্ত সূচিত করেছে যা আগামী দিনগুলোতে এই রোগের সহজ ও কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইন্টারনেট অবলম্বনে

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।