ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ভোলা সদর হাসপাতালে ৭ মাস ধরে এনেসথেসিস্ট নেই

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৪
ভোলা সদর হাসপাতালে ৭ মাস ধরে এনেসথেসিস্ট নেই

ভোলা: ভোলা সদর হাসপাতালে সাত মাস ধরে এনেসথেসিস্ট না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশনসহ জটিল ও কঠিন অপারেশন বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে দরিদ্র রোগীরা।



জেলার ২০ লাখ মানুষ এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার ওপর নির্ভরশীল। এনেসথেসিস্টের অভাবে অপারেশন বন্ধ থাকায় জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে ৫০ শয্যা দিয়ে ভোলা সদর হাসপতালের যাত্রা শুরু হলেও ১৯৯৬ সালে তা ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়।
 
কিন্তু প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই চিকিৎসক সংকটসহ নানা সমস্যা লেগে রয়েছে এ হাসপাতালে। বিশেষ করে গুরুপ্তপূর্ণ এনেসথেসিস্ট পদটি শূন্য থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
 
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যে এ পদে কেউ যোগদান করলেও কিছুদিন পর তারা সেচ্ছায় বদলি হয়ে অন্য হাসপাতালে চলে যান। ফলে বেশিরভাগ সময়ই পদটি শূন্য থাকে। গত বছরের জুলাই মাস থেকে ভোলা সদর হাসপাতালে কোনো এনেসথেসিস্ট নেই। এতে বন্ধ রয়েছে মেজর অপারেশন।

এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রহিমা বেগম বলেন, গর্ভবতী নারীদের মধ্যে যাদের সিজারিয়ান অপারেশন করতে হয় তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন। সরকারি হাসপাতালে অপারেশন বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে বেশি টাকায় ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের। আর জটিল অপারেশ করতে হচ্ছে ভোলার বাইরে গিয়ে। এতে আশঙ্কাজনক রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়ছে।

এক রোগীর স্বজন আসমা বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী এলেও তাদের অন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিকে স্থানান্তর করা হয়। এ কারণে দরিদ্র রোগীরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছে।

ভোলা প্রেসক্লাব সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সামস-উল-আলম মিঠু বাংলানিউজকে জানান, ভোলার ২০ লাখ মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র ভোলা সদর হাসপাতাল। এ হাসপাতালে দিনের পর দিন কোনো অপারেশন হয় না একজন এনেসথেসিস্টের অভাবে।

তিনি বলেন, ভোলাবাসীর জন্য বড় সমস্যা হলো, এ জেলা নদী বেষ্টিত। আমরা লক্ষ্য করছি, হাসপাতালে এনেসথেসিস্ট না থাকায় রোগীরা অন্যত্র চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাই এ সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি, হাসপাতালে যেন একজন এনেসথেসিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিষয়টি স্বীকার করে ভোলা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাজিদুল ইসলাম বলেন, ছোট ছোট অপারেশন হলেও মেজর অপারেশন হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করতে হচ্ছে।

ভোলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. নিত্যানন্দ চৌধুরী বলেন, অপারেশন থিয়েটারে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা স্বত্ত্বেও তা ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে এনেসথেসিস্ট এলেও তারা বেশি দিন ভোলায় থাকছেন না। এজন্য মেজর অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, গত বছরের জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত এনেসথেসিস্ট পদটি শূন্য রয়েছে।

সিভিন সার্জন অফিস সূত্র জানায়, ভোলা সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ চলছে। এ হাসপাতালে চিকিৎসকের ২২টি পদের বিপরীতে মাত্র ১০ জন চিকিৎসক রয়েছে।   চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। শুধু সদর হাসপতালই নয়, চিকিৎসক সংকট রয়েছে জেলার ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থাও বেহাল।

ভোলার সিভিল সার্জন ডা. ফরিদ আহমেদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এনেসথেসিস্ট চিকিৎসক লাগবে বলে জানানো হয়েছে। খুব শিগগিরই এখানে একজন এনেসথেসিস্ট নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।