ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মানবকল্যাণে চক্ষুদান ও কর্নিয়া সংগ্রহ

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৪
মানবকল্যাণে চক্ষুদান ও কর্নিয়া সংগ্রহ

ঢাকা: যার চোখে আলো নেই, সে পৃথিবীর সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত। বেঁচে থেকেও পৃথিবীটাকে নরক মনে করেন।

একটি চোখ বা কর্নিয়া একজন মানুষের অন্ধত্ব ঘোচাতে পারে।

ফিরিয়ে দিতে পারে একজন মানুষের সারাজীবনের লালিত স্বপ্ন। একজনের দৃষ্টি নিয়ে অন্য জন ফিরে পাবে তার দৃষ্টি এ সুযোগ তৈরি করেছে সন্ধানী।

‘চোখ বেঁচে থাক ওই চোখের আলোয়, ধমনীতে রক্তের ঋণ’ এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে ৩৭বছর ধরে মহৎ কাজটি করে যাচ্ছে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি।

অন্ধত্ব ও ক্ষীণদৃষ্টি সম্পর্কিত জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে অন্ধ মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৭ লাখ। প্রায় চৌদ্দ লাখ ‍মানুষ কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বের শিকার। প্রতি বছরে নতুন করে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ অন্ধত্ব বরণ করছে।

আর ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই অন্ধত্বের মূল কারণ চোখের ছানি পড়া। দৃষ্টিহীন মানুষের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। এদের মধ্যে ৯০ ভাগ দরিদ্র, যাদের চিকিৎসা নেওয়ার কোনো সাধ্য নেই। মৃত মানুষের চোখ ও কর্নিয়া সংগ্রহ করে কাজ করে যাচ্ছে সন্ধানী।

সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি সূত্রে জানা গেছে, মরণোত্তর চক্ষু ও কর্নিয়াদান প্রথম অবস্থায় মানুষের মাঝে সাড়া জাগাতে পারেনি। বর্তমানে মানুষের মাঝে মরণোত্তর চক্ষু ও কর্নিয়া দানে সচেতনতা বেড়েছে।

১৯৮৭ সালে দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা গড়ে তোলে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি। বর্তমানে ৮টি মেডিকেল কলেজসহ মোট নয়টি চক্ষু ব্যাংক রয়েছে।



এসব হাসপাতালে মরণোত্তর চক্ষু ও কর্নিয়াদানে উদ্ভূদ্ধ করতে মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ সমিতির লোকজন কাজ করে যাচ্ছে। তবে মৃত্যুর পর চক্ষুদান ও কর্নিয়া সংগ্রহ খুব দূরুহ কাজ।

আরো জানা গেছে, সন্ধানী তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অঙ্গীকারপত্র বিতরণ করে থাকে। মাঝে মাঝে রাজপথেও অঙ্গীকারপত্র বিতরণ করা হয়। সমিতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেই মৃত ব্যক্তির চোখ ও কর্নিয়া নেওয়া হয়।

কিন্তু বেশিরভাগ কর্নিয়াই আসে বেওয়ারিশ লাশ থেকে। চক্ষুদান সমিতি Grief Counselig পদ্ধতি ব্যবহার করে কর্নিয়া ও চক্ষু সংগ্রহ করে। সমিতি নিজস্ব চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এসব সংগ্রহ করে।

জানা গেছে, জাতীয় চক্ষুদান সমিতিতে এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ২৭৫জন অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। এরমধ্যে ৩ হাজার ৭৭০টি কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়েছে। তারমধ্যে ৩ হাজার ২৪০টি কর্নিয়া সংযোজন করা হয়েছে। বর্তমানে বয়স্কদের চেয়ে যুবকরা কর্নিয়া ও চক্ষুদানে বেশি উৎসাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে, মানবকল্যাণে এ কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মানবদেহ অঙ্গ-প্রতঙ্গ সংযোজন আইন-১৯৯৯ সংশোধনের মাধ্যমে। ১৯৭৫ সালের The Blind Relief (Donation of Eye) Ordinance এর ৬ (২) ধারা অনুসারে মৃত্যুর ‍আধ ঘণ্টা পর চোখ সংগ্রহের বিধান ছিল।

কিন্তু মানবদেহ অঙ্গ-প্রতঙ্গ সংযোজন আইন-১৯৯৯ সংশোধন ধারা (৪) এর উপধারা ৪(গ) অনুযারী মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি কেহ মৃতদেহ দাবি না করে তাহলে কর্তৃপক্ষের অনুমিত সাপেক্ষে অঙ্গ-প্রতঙ্গ সংগ্রহের বিধান রয়েছে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে মৃত্যুর ৬ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই চোখ ও কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হবে। আইনের ৪ (গ) ধারা সংশোধন হলে মানবকল্যাণে সন্ধানী কাজ করতে পারবে বলে জানা গেছে।

আরো জানা গেছে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি শাখা অফিস রয়েছে। জাতীয় অন্ধ বিজ্ঞান হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে এর শাখা রয়েছে। এ শাখা থেকে অন্ধ বিজ্ঞান হাসপাতাল ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে মৃত মানুষের চক্ষু ও কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়।

জাতীয় অন্ধ বিজ্ঞান হাসপাতালে সমিতির দায়িত্বে থাকা ফয়সাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬টি কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়েছে।

অন্ধ বিজ্ঞান হাসপাতালে বহু রোগিকে কর্নিয়া ও চোখ দান করা হয়েছে। প্রতিদিন মেডিকেল ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমরাও মানুষকে মরণোত্তর চক্ষু ও কর্নিয়া দানে উৎসাহিত করে থাকি। মানুষ মরে গেলে মৃত মানুষের স্বজনদের বুঝিয়ে কর্নিয়া ও চোখ সংগ্রহ করা খুবই কষ্টকর।

মানুষ মরে গেলে তো চোখ আর কর্নিয়া কোনো কাজে আসে না। একজনের একটি চোখ বা কর্নিয়া একজন মানুষকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারে। চক্ষু ও কর্ণিয়া দানে সবাই এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ফয়সালের সহকর্মী হোসনে শাহিদা আক্তার সাথী বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ আগ্রহী হয়ে চক্ষু ও কর্নিয়া দান করে। সচেতনতা, প্রচারণা না থাকায় বাংলাদেশে মানুষ দিতে আগ্রহী হয় না।

তিনি বলেন, কেউ কর্নিয়া দিতে চাইলে আবেদনকারি রোগীও দানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্নিয়া দান করতে পারে। এক্ষেত্রে কুসংস্কার ও ভীতি থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সবার প্রচেষ্টা ও সচেতনতায় দৃষ্টি ফিরে পাবে অসংখ্য হতভাগ্য মানুষ। ফিরে পাবে স্বাভাবিক জীবন, দেখতে পাবে পৃথিবীর রুপ, রঙ ও আলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।