ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সফল ডটস পদ্ধতি

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৪
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সফল ডটস পদ্ধতি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেশে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় ‍গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ব্র্যাক এর ডটস পদ্ধতি। ব্রাকের এই পদ্ধতির কারণে দেশের যক্ষ্মা রোগ পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।



স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির(এনটিপি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর সারাদেশে দেড় লাখেরও বেশি যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়। তবে ডটস পদ্ধতির চিকিৎসায় ৯২ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।

সম্প্রতি মেহেরপুর জেলায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ব্র্যাকের ডটস কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সেবন করানোর দায়িত্ব পালন করছেন স্বাস্থ্য সেবিকারা। মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার হিজলবাড়িয়া গ্রামের ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবিকা রাফিজা খাতুন। প্রতিদিন সকালে ডটস এর ওষুধ নিয়ে রোগী আব্দুর রশিদের বাড়িতে আসেন তিনি।

গাংনী জেলায় তিন থানায় রাফিজা বেগমের মতো ২৫৪ জন সেবিকা সর্বদা নিয়োজিত আছেন যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের ডটস কর্মসূচির সেবা পৌঁছে দিতে।
সেবিকা রাফিজা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের খালি পেটে তিনটি করে টুএফডিসি ঔষধ খাওয়াতে হয়। এর আগে প্রথম পর্যায়ে ২ মাস ফোরএফডিসি ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়।

যক্ষ্মা আক্রান্ত আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে কাঁশিতে রক্ত ধরা পড়ে। পরে ব্র্যাকের সহায়তায় তিন মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শরীরের অবস্থাও এখন ভালো।
 
ব্র্যাকের জেলা ম্যানেজার রবিউল ইসলাম বলেন, যক্ষ্মা নিরাময় কার্যক্রম শুরুর পর থেকে মেহেরপুর জেলায় ৫ হাজার ৫৪৩ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে ৬০ জন যক্ষ্মা রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ব্র্যাক। বর্তমানে ৫৩৮ জন যক্ষ্মা রোগীকে ব্রাকের মাধ্যমে ডটস সেবা দেয়া হচ্ছে।

বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় এমডিআর রোগীর সংখ্যা ৫ জন। মুজিবনগর থানার নাজিরকোনা গ্রামের জাহাঙ্গীর মেহেরপুরের প্রথম এমডিআর রোগী। ভারতের মুম্বাই থেকে এই জীবানুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। পরবর্তীতে একই গ্রামে আরো চার জন এমডিআর এ আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে ৫ জনই ব্র্যাকের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

একজন রোগী বলেন, ৯ মাস ধরে ব্র্যাকের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন অনেক ভাল আছি। মেহেরপুর ব্র্যাক অফিস থেকে পাওয়া ওষুধ ৩ মাস ধরে খাচ্ছি।
এমডিআর রোগীকে প্রতিদিন ভরা পেটে ২০টা করে ট্যাবলেট খেতে হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মেহেরপুর জেলায় যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত সন্দেহজনক রোগী ছিলেন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ৫৫১ জন এবং ৯ জন ছেলে শিশু। এছাড়া প্রাপ্ত বয়স্ক ৩৭৮ জন নারী ও মেয়ে শিশুদের ১৪ জন সন্দেহজনক ছিলেন। এর মধ্যে ১০০ জন পুরুষ ও ৪১ জন মহিলাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।

স্বাস্থ্য সেবিকাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডটস কর্মসূচির আওতায় কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। একজন যক্ষ্মা রোগীকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সেবিকার বাড়িতে আসতে হয়। রোগী আসার পর স্বাস্থ্য সেবিকা তাকে সেবনবিধি অনুযায়ী ওষুধ খাইয়ে দেন। যদি কোনো কারণে রোগী সেবিকার বাড়িতে হাজির না হয়, তবে সেবিকা রোগীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ওষুধ খাইয়ে দেন।

তবে রোগীকে নিয়ে উদ্ভূত কোনো সমস্যার সমাধান সেবিকার পক্ষে দেয়া সম্ভব না হলে তিনি নিকটস্থ ব্র্যাক অফিস বা পিওকে অবহিত করেন। এছাড়া কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া গেলে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৮৪ সালে প্রথম দেশের উপজেলাগুলোতে সমাজভিত্তিক যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শুরু করে ব্র্যাক।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে দেশে বর্তমানে প্রতি লাখে ৪১১ জন মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতি বছর নতুনভাবে আক্রান্ত হন প্রতি লাখে ২৫ জন। তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিয়ে শতকরা ৯০ ভাগ রোগীই সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
 
ব্র্যাকের দেয়া তথ্যমতে, সারাদেশে সরকারিভাবে ৮৫০টি ডটস সেন্টার রয়েছে। সেন্টারগুলোতে প্রত্যেক রোগীর জন্যে খরচ হয় প্রায় ৩২ হাজার টাকা। বাংলাদেশে যক্ষ্মার প্রার্দুভাব ও মৃত্যুহার ২০১৫ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনাই এ কর্মসূচির লক্ষ্য।

বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।