ঢাকা, রবিবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ঢাকায় এসেছে চিকুনগুনিয়া

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৪
ঢাকায় এসেছে চিকুনগুনিয়া

ঢাকা: রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত ভয়ঙ্কর চিকুনগুনিয়া রোগ। এডিস অ্যালবোপিকটাস ও এডিস এজেপটি প্রজাতির মশার কামড় থেকে এ রোগের উৎপত্তি।



রাজধানীর প্রায় ৩৩ শতাংশ লোক এ রোগে কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত বলে এক সমীক্ষায় জানিয়েছে মহাখালীর জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
 
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাস বাহিত রোগ। জীবনের জন্য এ রোগ সরাসরি হুমকি নয়, কিন্তু আক্রান্ত হলে নানা শারীরিক
অসঙ্গতি দেখা দেয়।
 
বুধবার সকালে ‘ভেক্টর বর্ণ ডিজিজ’ এর উপর এক ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে আইইডিসিআর এর পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান জানান, ২০০৫ সালে ভারতে এ রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ১৪ লক্ষ মানুষ আক্রান্তের খবর সংগ্রহ করা হয় সে সময়। সম্প্রতি আমেরিকাতেও প্রবেশ করেছে এ রোগ।
 
রোগের লক্ষণ হিসেবে তিনি বলেন, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাথা ব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত ও পায়ের গিঁটে এবং আঙ্গুলের গিঁটে ব্যথা, ফোসকা পড়া এবং শরীর বেঁকে যেতে পারে।

এ ভাইরাস মশা থেকে মানুষের শরীরে আসে, আবার আক্রান্ত মানুষকে কামড় দিলে মশাও আক্রান্ত হয় এবং বাহক হিসেবে আবার মানবদেহে প্রবেশ করায়। তবে এ ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না বলে জানান তিনি।

শুধু মাত্র নারী এডিস মশার কামড়েই এ রোগ হতে পারে। সাধারণত কামড় খাওয়ার ৫ দিন পর থেকে শরীরে লক্ষণগুলো ফুটে উঠে বলে জানান মাহমুদুর রহমান।
 
ভৌগলিকভাবে দেখা যায়, ভাইরাসজনিত এ রোগ রাজশাহীর সীমান্তবর্তী অঞ্চল পবা,চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারোঘড়িয়া, শিবগঞ্জ, পাবনার সাথিয়া এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও দোহার এই পথে প্রবেশ করেছে।
 
তিনি বলেন, ঢাকায় এর আগে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া যেত কম। বছরে দুই থেকে তিনজন। তবে হয়তো অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হতো, কিন্তু বুঝে ওঠার আগে সেরেও যেতো।
 
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর সূত্রাপুর, ধানমন্ডি, মতিঝিল এবং মহাখালী এলাকার ৬২১ জন ব্যক্তির রক্ত স্যাম্পল হিসেবে নেয়া হয়। প্রতি ১০ বাড়িতে একজনের স্যাম্পল নেয়া হয়, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৬০ বছর।
 
সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড হেলথ প্রোটেকশন’ ইউনিটের সহায়তায় এ সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়।

দেশে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ওপর পরিচালিত সবচেয়ে বড় সমীক্ষা এটি। ডেঙ্গু সমীক্ষার ফল পরবর্তীতে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
 
ড.মাহমুদুর রহমান জানান, সমীক্ষায় দেখা গেছে স্যাম্পল নেয়া ৬০১ জনের মধ্যে ২০৭ জনই এই রোগে আক্রান্ত। যা মোট স্যাম্পলের ৩৩ শতাংশ। এছাড়াও ১৬ জনকে পাওয়া গেছে যারা এ রোগে পূর্বে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
 
তিনি বলেন, এ সমীক্ষার ফলে এখন আমরা নিশ্চিত যে চিকুনগুনিয়া রাজধানীতে প্রবেশ করেছে। এবং বেশ ভালভাবেই বিরাজ করছে।
 
তিনি বলেন, ২০০৫ সালে ভারতে ভয়াবহ রূপে দেখা দিলে বাংলাদেশে এ সমীক্ষা চালায় আইইডিসিআর। তবে সে সময় চিকুনগুনিয়ার কোন স্যাম্পল পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত পাওয়া যায় ২০০৮ সালে রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
 
মাহমুদুর রহমান জানান, আপাতত এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই। জ্বর এবং মাথাব্যথার চিকিৎসাতেই এ রোগ সেরে উঠে। তবে মশার কামড় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
 
সমীক্ষায় অংশ নেয়া ডা. শারমিন বলেন, ঢাকায় আক্রান্তদের মধ্যে শরীর বেঁকে যাওয়ার লক্ষণ অনেক কম দেখেছি আমরা। আবার চাপাঁইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে দেখেছিলাম প্রত্যেক আক্রান্তরই শরীর বেঁকে গেছে।

তাঞ্জানিয়া এবং মোজাম্বিকে বসবাস ম্যাকওনেড উপজাতির মানুষের। চিকুনগুনিয়া নামটি এসেছে এই ম্যাকওনেড ভাষা থেকে। এর মানে 'যা বাঁকিয়ে
দেয়'। এ জ্বরে এত বেশি শরীর ব্যথা হয় যে রোগী ব্যথায় বেঁকে যায়। তা থেকেই উৎপত্তি চিকুনগুনিয়া নামের।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।