ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কালাজ্বর নির্মূলে ৫ দেশের সমঝোতা স্মারক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৪
কালাজ্বর নির্মূলে ৫ দেশের সমঝোতা স্মারক ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: নিজ নিজ দেশ থেকে ভিসেরাল লেইশম্যানিয়াসি (কালাজ্বর) নির্মূলে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল ও থাইল্যান্ড। এ লক্ষ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি দেশ একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে।



জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে মঙ্গলবার সকালে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পাঁচটি দেশের মন্ত্রী নিজ নিজ দেশের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ১৪ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণঘাতি কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়।

স্বাক্ষর শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশে বর্তমানে ৯০ শতাংশ কালাজ্বর নির্মূল হয়েছে। এই স্মারক স্বাক্ষরের ফলে ৫টি দেশের সমন্বিত উদ্যোগে কালাজ্বর নির্মূল শতভাগ সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে এ রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় ভুটান ও থাইল্যান্ডেও এ রোগের ঝুঁকি রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রধান তিনটি ঝুঁকিপ্রবণ দেশের ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষের কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে এসব দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে। তাই শক্তিশালী জাতীয় উদ্যোগের পাশাপাশি এই রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

পাঁচটি দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো হবে, সম্পদ যোজনের পারস্পরিক সম্মতিভিত্তিক প্রক্রিয়া, তথ্যের আদান-প্রদান। অন্যান্য খাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, গবেষণা, সক্ষমতা তৈরি এবং পদ্ধতিগত সহযোগিতা।

কালাজ্বরে চিকিৎসা করা না হলে এটা আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিস্তেজ করে ফেলে এবং প্রায়শই প্রাণঘাতি হয়ে ওঠে।

বেলে মাছির মাধ্যমে এই রোগ সংক্রামিত হয়, যা ভেজা মাটি, গর্ত, মাটির দেয়ালের ফাটল অথবা ইঁদুরের গর্তে বংশবৃদ্ধি করে। তাই বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা গ্রামাঞ্চলের দরিদ্রতর জনগোষ্ঠীর মাঝে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। চিকিৎসা নেওয়ার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কাজকর্মে অসমর্থ হয়ে পড়ে। ফলে কালাজ্বর অপুষ্টি, ত্রুটিপূর্ণ বাসস্থান ও নিরক্ষতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে দারিদ্র্যচক্রকে আরো অবধারিত করে তোলে।

হু কালাজ্বর নির্মূল করা বলতে বোঝায়, এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাকে এমন একটি স্তরে কমিয়ে নিয়ে আসা যেখানে এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হবে না। এক্ষেত্রে লক্ষ্য হলো, জেলা অথবা উপজেলা পর্যায়ে প্রতি ১০০ মানুষের মধ্যে বছরে কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা একটিরও কমে নামিয়ে আনা।

হু এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, কালাজ্বর নির্মূল করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, এ রোগের চিকিৎসায় সুবিধাজনক রোগনির্ণয়ের সরঞ্জাম ও কার্যকর ওষুধ এখন আমাদের কাছে আছে। আক্রান্ত দেশগুলোতে এ রোগের ওষুধ ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত বিনামূল্যে সরবরাহের জন্য হু আলোচনার মাধ্যমে আশ্বস্ত হয়েছে এবং এটা পরবর্তী আরো পাঁচ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করার সম্ভাবনাও রয়েছে।

দ্রুততার সঙ্গে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাই এই রোগ নির্মূলের অন্যতম কৌশল।

বিশেষ করে কালাজ্বরের সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যেসব জনগোষ্ঠী আছে সেখানকার পরিবেশের উন্নয়ন, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও গবেষণা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করে শক্তিশালী রোগ ও ভেক্টর তত্ত্বাবধান এবং সমন্বিত ভেক্টর ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা।

কালাজ্বর নির্মূল করতে পারলে আক্রান্ত দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন ব্যবস্থা আরো জোরদার হবে।

হু এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ১১টি সদস্য রাষ্ট্র হলো- বাংলাদেশ, ভুটান, গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও পূর্ব তিমুর।

** ভারতের সঙ্গে সনাতন ওষুধের লেনদেন হবে

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।