ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ছয় নিত্যাভ্যাসে সজীব জীবন

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৪
ছয় নিত্যাভ্যাসে সজীব জীবন ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: গোটা ছয় অভ্যাসেই ওজন বশে থাকবে। শরীর থাকবে ফিট।

টানা কাজ, লাগাতার সফর, ভীড়ঠেলে পথচলা কিংবা দীর্ঘ যানজটেও ক্লান্ত হবেন না। ভাবছেন কোনও টনিকের কথা হচ্ছে! না.. টনিক নয় স্রেফ কিছু নিত্যাভ্যাস।

কাজে-কর্মে অনিয়মের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেও বেখেয়ালি-বেপরোয়া অনেকে। চর্বি, চিনি, নুন, তেলজবজরে খাবারতো আছেই, তার সাথে আছে জীবন-যাত্রায় চরম অনিয়ম। যখন যেমন, তখন তেমনে অভ্যস্ততা! আর এর অবধারিত ফল মেদভুঁড়ি, থলথলে বপু। উচ্চরক্তচাপ, বহুমুত্র, হৃদরোগসহ মরণব্যাধিগুলোর আবাস সে শরীরে। এর পরিণতি আর কী হতে পারে? মাঝপথে থমকে যাবে জীবন।

তবে সুখবর হচ্ছে, এইসব চ্যালেঞ্জের মুখেও কেউ একজন তার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন আর পেতে পারে সুস্বাস্থ্যের জীবন। আগেই বলেছি সে জন্য প্রয়োজন গোটা ছয়েক নিত্যাভ্যাস। ওই অভ্যাসগুলোই আপনাকে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত করবে। এমন সব খাবার যা প্রাকৃতিক, খনিজ ও নানা খাদ্যগুনে ভরপুর। যা শরীর ও মনকে রাখে চনমনে।

আরও দারুণ ব্যাপার হচ্ছে অভ্যাসগুলো খুব সাধারণ ও গ্রহণযোগ্য। আসলে যেটা করতে হবে তা হচ্ছে কিছু পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, শরীরটাকে সচল রাখতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিতে হবে সঙ্গে বিশ্রাম, একটু ব্যায়াম ও ধ্যান আর সচেতন শ্বাস-প্রশ্বাস।

ডায়েট ও পুষ্টি একসাথে চলে। ডায়েট করে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস করাই সেরা নীতি। সে খাবারে ভারসাম্য থাকবে যদি হয় ফলমুল, সব্জি, সালাদ, ডাল, শস্যকণা, শস্যদানা, বাদাম, পাতা, বীজ, কর্ম চর্বিযুক্ত দুধ।
 
এই খাবারগুলো বিষাক্ততা লাঘব, নিরাময়, আর খাদ্যগুণ পুনুরুদ্ধারের উপাদান সম্মৃদ্ধ আর একই সঙ্গে পুষ্টিগুণে ভরপুর।

শারিরিক যে কোনও কসরত যেমন হাঁটা, সাঁতার, যোগব্যায়াম, ব্যায়াম মানুষকে শক্তি দেয়, উজ্জিবিত করে। এতে অক্সিজেনের ঘাটতি কমে, শরীরে তৈরি হয় বাড়তি উদ্যম। শরীর ঝরঝরে রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর বিপাকতন্ত্রকে কার্যকর রাখে।

তাহলে তুলে ধরা যাক স্বাস্থ্যবিদদের দেওয়া ছয়টি নিত্যাভ্যাসের কথা। যে অভ্যাস উপরের সবগুলো দিকই চলে আসবে নিজের দখলে। আর এ জন্য ঘরের ‍বাইরে যেতে হবে না, প্রয়োজন হবে না বাড়তি কোনও উপকরণ বা উপাদানের। চাই কি আপনি যখন ভ্রমণে, তখনও সহজেই অভ্যাসগুলোর চর্চা করে যেতে পারবেন।

১. প্রথমেই জাঙ্কফুডের অভ্যাসটা ঝেড়ে ফেলুন। পরিবর্তে নিশ্চিত করুন সকালের নাস্তাটি আপনি ভরপেট খেয়েছেন। আর কাজে যখন বের হচ্ছেন হাতে একটা ছোট্ট বাটিতে কিছু ফল নিয়ে বের হন যাতে সুযোগ মতো খেয়ে নিতে পারেন। গোটা দিনের খাবার থেকে ভাজা-পোড়া, বায়বায়িত (গ্যাসউদ্রেককারী) পানীয়, মিল্কশেক, ফলের জুস, মিষ্টান্ন বা যে কোনও ধরনের মিষ্টি পরিহার করে চলতে হবে।

২. শুকনো ফল হাতের কাছেই ‍রাখুন। এগুলো পুষ্টিকর এবং আপনি খেলে ক্ষুধাভাব থেকে দূরে থাকবেন। কাঠবাদাম, আখরোট, কাজুবাদাম, খেজুর, ডুমুর হতে পারে এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

৩. ঘাড় ঘুরানো, কাঁধ ঝাঁকানো, বাহু-পা ঝাড়ানো ভীষণ কাজে দেয়। গাড়ি থেকে নামলেন একটু থেমে কাজগুলো করে নিতে পারেন। বসে দীর্ঘ মিটিং করলেন, দাঁড়িয়েই সেরে নিতে পারেন ৩০ সেকেন্ডের চর্চাগুলো। বিমানযাত্রায় সিট বেল্ট খুলে একবার সেরে নিতে পারেন। এই কসরতগুলো সামান্য কিন্তু আপনার শরীরে রক্ত-চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অসামান্য অবদান রাখে। শরীরের কোষগুলোকে সচল করতে কাঁধ ঝাঁকানি বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।
 
৪. প্রতিদিন অল্প একটু হলেও হাঁটুন। এটা খুবই ফলদায়ক। আপনি যদি ব্যায়ামাগারে গিয়ে শরীর চর্চা করতে নাও পারেন, হাঁটার ওই টুকু অভ্যাস আপনাকে বিপদমুক্ত রাখবে। আর হাঁটতে তো আপনি চাইলেই পারেন। যেকোনো স্থানে যে কোনো সময়ে এজন্য কেবল মনস্থির করাটাই কাজ।

হাঁটার একটাা বাড়তি সুবিধা হচ্ছে মাটির খুব কাছাকাছি যাওয়া যায় কিংবা প্রকৃতিকেও অনুভব করা যায়। এতে মনটা ফুরফুরে হয় এবং মনের ওপর চাপ কমে আসে। একটা ছোট্ট টিপস হচ্ছে- সুযোগ থাকলে লিফটে না চেপে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করুন।

৫. আরও আছে কিছু ছোট ছোট শারীরিক কসরত। যেমন- প-ঝাড়া, আসন গেড়ে বসা, ঝুঁকে পড়া, চেয়ার ডন (চেয়ারে ভর দিয়ে শরীর ওঠানামা করানো), বুক ডন, সিট আপ (ঘাঁড় চেপে পীঠ ওঠা-নামা) আর কিছু বিশেষ ধরনের যোগ ব্যায়াম যেমন সুর্যনমস্কার, ভুজঙ্গাসন, ধনুরাসন, সেতুবন্ধাসন ও নৌকাসন যা সহসেই নিজের শয়নকক্ষেই সেরে নেওয়া সম্ভব।

এগুলো আপনার শরীরকে ঝরঝরে রাখে, উদ্যম ও শক্তি অটুট রাখে আর শরীরের কোষগুলো সচল রাখে।

আরেক ধরনের শরীর চর্চা হচ্ছে প্রনায়ম বা শ্বাসক্রিয়া। যেমন জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়া। নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে এ কাজটি করতে পারলে আপনার শরীর জড়তামুক্ত থাকবে আর মনের দিকথেকে থাকবেন চাপমুক্ত।

৬. পানি বা পানিজাতীয় খাবার খান প্রচুর পরিমানে। এতে আপনার শরীর শুষ্কতামুক্ত থাকবে। হতে পারে স্রেফ সাদা পানি, সবুজ চা কিংবা ডাবের পানি। সামর্থ অনুযায়ী পান করুন। সুস্থ থাকবেন।

স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও শক্ত-সামর্থ থাকার জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন কেবলই একটি সঠিক পরিকল্পনা আর তা নিয়মিত সে পরিকল্পনা-মাফিক জীবন-যাপন। আর স্বাস্থ্যকর মন ও মননশীলতার জন্যও এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
 
উপরের অভ্যাসগুলো নিত্যাভ্যাসে পরিণত করুন। আর সেটাই হোক আপনার সুন্দর জীবনের মূলমন্ত্র।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।