ঢাকা, রবিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আবেগী ও যুক্তিবাদীর মস্তিষ্কের গঠনই আলাদা!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
আবেগী ও যুক্তিবাদীর মস্তিষ্কের গঠনই আলাদা!

ঢাকা: মস্তিষ্কের গঠনই বলে দেবে, কে আবেগী আর কে যুক্তিবাদী!

এক গবেষণায় জানা গেছে, মস্তিস্কের নির্দিষ্ট এলাকার গঠন ভিন্ন হওয়ার কারণেই একজন ব্যক্তি আবেগী কিংবা যুক্তিবাদী হিসেবে গড়ে ওঠেন।

মস্তিষ্কে থাকা গে ম্যাটারই (ধূসর পদার্থ) বলে দেবে, কে বেশি আবেগী আর কে বেশি যুক্তিবাদী! এ ছাড়া মস্তিষ্কের গঠনগত ভিন্নতার কারণেও মানুষ আবেগী বা যুক্তিবাদী হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন।



মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট একটি এলাকার গভীরতাই নির্ধারণ করে কে আবেগী আর কে যুক্তিবাদী হিসেবে গড়ে উঠবেন।

রবার্ট ইরেসের নেতৃত্বে মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব সাইকোলজিক্যাল সায়েন্সের একদল গবেষক গবেষণা চালিয়ে দেখেন, মস্তিষ্কে থাকা ধূসর পদার্থের (গ্রে মেটার) ঘনত্বের সঙ্গে কগনিটিভ (জ্ঞানের রাজ্য/বোধ) ও অ্যাফেক্টিভ এমপ্যাথির (মানসিক আবেগ-সহানুভূতির ক্ষমতা) একটা সম্পর্ক আছে।

গবেষক দল প্রধান ইরেস বলেন, যাদের অ্যাফেক্টি এমপ্যাথি (অন্যের প্রতি সহানুভূতি/ব্যক্তি আচরণ) বেশি, তারা যখন কোনো ভীতিকর ছায়াছবি দেখেন, তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের সতর্কভাব তৈরি হয়। যখন তারা দুঃখের দৃশ্য দেখেন, তখন তারা কাঁদতে শুরু করেন।

রবার্ট ইরেস বলছেন, যারা বেশি আবেগী কিংবা যুক্তিবাদী, তাদের মনোবিদেরা কাউন্সিলিং দিয়ে থাকেন।

রবার্ট ইরেসের নেতৃত্বে গবেষকেরা গ্রে ম্যাটার বেশি, এমন ১৭৬ জন ব্যক্তির ওপর ভক্সেল-বেজড মরফোমেট্রি (ভিবিএম) পদ্ধতিতে পরীক্ষা চালান। এ সময় তাদের কগনিটিভ (জ্ঞানস্তর/বোধ) অ্যামপেথির (আবেগ আর সহানুভূতি) সঙ্গে অ্যাফেক্টিভ (ব্যক্তি আচরণ) বা আবেগীয় অ্যামপেথির তুলনা করা হয়।

পরীক্ষায় গবেষকরা দেখেন যে, যাদের অ্যাফেক্টিভ অ্যামপেথি বেশি, তাদের মস্তিষ্কে গ্রে ম্যাটারের গভীরতাও বেশি। তাদের মধ্য মস্তিষ্কের ডানদিকে ইনসুলাতে বিশেষ অঞ্চল আছে, যাতে গ্রে ম্যাটারের গভীরতা বেশি দেখা যায়।

এ ছাড়া যাদের কগনিটিভ এমপ্যাথি বেশি, তাদের মিডসিনগুলেট কর্টেক্সে গভীরতা দেখা যায়। এটি কোর্পাস কল্লোসামের ওপরে, যা মস্তিষ্কের দুটি হেমিস্ফেয়ারের মধ্যে সংযোগ ঘটায়।

এমপ্যাথিতে বেশকিছু ভাগ (কম্পোনেট) থাকে, যা অ্যাফেক্টিং ও কগনিটিভকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে থাকে। এ  কম্পোনেন্ট নিউরাল ও গঠনগত সংযুক্তি ঘটিয়ে থাকে। অ্যামপ্যাথিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে থাকে বলেও গবেষণায় বলা হয়েছে।

গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলে জানানো হয়, এমপ্যাথির উন্নয়ন ঘটাতে হলে কয়েক ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার হয়। যদি কেউ এর ব্যবহার না ঘটায়, তাহলে কারো কারো মধ্যে পরবর্তীতে এর ঘাটতি হতে পারে।

গবেষকদের প্রধান রবার্ট ইরেস বলেন, প্রতিদিন মানুষের উচিত তার মধ্যকার এমপ্যাথির ব্যবহার করা।   তা নাহলে তাদের কগনিটিভি (জ্ঞানস্তর/বোধ) সামাজিক পরিবেশ দিয়ে নির্ধারিত হতে পারে।

তিনি বলেন,  যোগাযোগের জন্য, সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এবং অন্যদের ভাবনা সম্পর্কে নিজের মধ্যে বিচার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এটি দরকার।

তবে এই গবেষণা আরো কয়েকটি প্রশ্নের অবতারণা করেছে। তা হলো-  আরো বেশি এমপ্যাথি হওয়ার জন্য নিজেদের প্রশিক্ষণের দরকার আছে কি? এ ছাড়া চাইলেই কি মস্তিষ্কের ওই অংশ বড় করা সম্ভব? অথবা আমরা যদি ব্যবহার না করি, তাহলে কি সত্যি আমাদের এমপ্যাথির ঘাটতি হবে?

রবার্ট ইরেস বলেন, এসবের জন্য আমাদের ভবিষ্যতে আরো পরীক্ষা চালাতে হবে। পরীক্ষায় দেখতে হবে যে, সত্যি এ রকম পরিবর্তন আনা সম্ভব কিনা!

তিনি বলেন, মস্তিষ্কের গঠনগত কিংবা এর কোনো ক্ষতি হলে এমপ্যাথি সম্পর্কিত বিষয়গুলো কোনো ভূমিকা রাখে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।