ঢাকা, রবিবার, ২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ জুন ২০২৪, ০৮ জিলহজ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৫
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা শুরু ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল: হাসপাতাল প্রশাসনের মামলা দায়েরের আশ্বাস ও মৃতের স্বজনদের আটক করার পর কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে আটকে রাখা রোগীর তিন স্বজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে তারা কাজে যোগ দেন।



এর আগে সকাল ৮টার দিকে রোগীর মৃতুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় লেবার পেয়িং বেডের সামনে রোগীর স্বজন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।

এতে দুইজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. ফাহাব ও মো. মাহিয়ান, চিকিৎসক শিহাব উদ্দিন, একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স হাজী মমতাজ বেগম, মৃতের মা ও ভাইসহ পাঁচ জন আহত হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এলাকার উত্তর রাজপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফাইজুল মোল্লার স্ত্রী রিনা বেগম (২০) প্রসব পরবর্তী রক্ত ক্ষরণে ভুগছিলেন।

৬ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে গুরুতর অবস্থায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়।

এরপর থেকে চিকিৎসা শুরু হলে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৭টায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও রক্তশুন্যতার কারণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।

মৃতের ভাই ইঞ্জিনিয়ার মো. জাকারিয়া জানান, ৪ অক্টোবর মঠবাড়িয়া তার বোন সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেন। এরপর সেখানে শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে ৬ তারিখ সকালে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানে চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর থেকে তেমন ভাবে চিকিৎসকদের দেখা পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ বুধবার গভীর রাতে রোগী রিনা বেগমের শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকদের কাছে ছুটে যান তারা। কিন্তু কোনো চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি। সকাল পৌনে ৭টার দিকে রোগীর মৃত্যু হলে পরে সেখানে চিকিৎসকরা হাজির হন। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসকদের কথা কাটাকাটি হলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যান।

এর কিছুক্ষণ পরে ২০-২৫ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক এসে রোগীর স্বজনদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধর করে নিচতলার জরুরি বিভাগ সংলগ্ন সোয়াইনফ্লু ওয়ার্ডে আটকে রাখে।

ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, চিকিৎসকরা ওই রোগীর খোঁজ খবর প্রতিনিয়ত রেখেছেন। সকালে রোগীর অবস্থা এতটাই খারাপ ছিলো যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশুন্যতা দেখা দিলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

এরপর রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডে থাকা দুইজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. ফাহাব, মো, মাহিয়ান, ডা. শিহাব উদ্দিন, একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স হাজী মমতাজ বেগমের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে ওই চিকিৎসকরা আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে যায়।

এ খবর হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লে ইন্টার্নরা একত্রিত হয়ে ওই রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনদের মধ্য থেকে তিনজনকে ধরে নিয়ে জরুরি বিভাগের পাশে একটি কক্ষে বসিয়ে রাখে।

প্রতক্ষ্যদর্শী ও জরুরি বিভাগ সূত্র জানায়, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তালা বন্ধ করে সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটি থেকে ভর্তিসহ চিকিৎসা সেবার সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।

এ সময় ইন্টার্নরা হাসপাতালের ভেতরে বিক্ষোভ করে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, সিএদের সবসময় হাসপতালে অবস্থান করা, অক্সিজেন সংকট না থাকা, ওটির পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, চিকিৎসকদের বসার জায়গা সংকট নিরসন করাসহ ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।

ফলে বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমও ব্যাহত হয়।

সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সারফুজ্জামান রুবেল জানান, তারা ঘটনা শোনার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি শোনেন এবং ইন্টার্নদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে হাসপাতাল প্রশাসন থেকে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের এবং মৃতের তিন স্বজনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেলে তারা ধর্মঘট তুলে নেয়।

হাসপাতালের উপ পরিচালক শহীদুল ইসলাম জানান, তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের ঝামেলা হওয়ার কথা শুনে সেখানে গিয়েছেন। পরবর্তীতে ইন্টানরা ধর্মঘটের ডাক দিলে তাদের সঙ্গে কথা বলে হামলাকারীদের বিরুদ্দে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন জানান, এ ঘটনায় হাসপাতাল প্রশাসন মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এবং হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে পুলিশের হাতে সোপার্দ করেছে।

মামলার বাদী হওয়াকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতাল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হলে সেখানেও কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪/১৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৫
আরএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।