খুলনা: খুলনায় তৃতীয় দিনের মতো চলা চিকিৎসকদের ধর্মঘটে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রাখায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারও রোগী এবং তাদের স্বজনেরা।
টানা ধর্মঘটের তৃতীয় দিন রোববারও (৬ মার্চ) খুলনা জেলা ও উপজেলার সব চিকিৎসক এ ধর্মঘট পালন করছেন।
খুলনার তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তি দাবিতে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) ধর্মঘট পালন শুরু করে খুলনার চিকিৎসকরা।
শুক্রবারের (৪ মার্চ) মধ্যে দোষীরা গ্রেফতার না হওয়ায় শনিবার (৫ মার্চ) থেকে আবারও ধর্মঘট শুরু করেন চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখা, প্রাইভেট মেডিকেল প্রাক্টিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমপিএ) ও প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিসিডিওএ) একযোগে এ ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছে।
খুলনা বিএমএ খুলনা সূত্রে জানা গেছে, তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত অবস্থায় চিকিৎসককে পিটিয়ে আহত করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম অহিদুজ্জামান।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. বাহারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, দায়িত্বরত অবস্থায় চিকিৎসককে মারধরে জড়িতরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের গ্রেফতারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না প্রশাসন। বরং আসামিরা ফোনে হুমকি দিচ্ছেন। এ কারণে চিকিৎসকেরা ধর্মঘট পালন করছেন।
বিশেষ বিবেচনায় ধর্মঘট চলাকালীন শুধু জরুরি সেবা চালু থাকবে বলেও জানান তিনি।
বাহারুল আলম বলেন, চিকিৎসকদের যেখানে নিজেদের নিরাপত্তা নেই। সেখানে তারা রোগীদের সেবা দেবেন কীভাবে। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে প্রশাসন রোগীদের জিম্মি করে সন্ত্রাসীকে নিরাপত্তা দিচ্ছে।
চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেফতার দাবিতে চিকিৎসকরা বিক্ষোভ সমাবেশ এবং সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু মারধরকারী ও তার সহযোগীরা গ্রেফতার না হওয়ায় চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে ফের কর্মসূচি দিয়েছেন।
বিএমএ সূত্রে জানা যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে রোগী দেখার জন্য তেরখাদা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামানের বাড়িতে যেতে বলেন কয়েকজন লোক।
হাসপাতাল ছেড়ে বাড়িতে যাওয়া সম্ভব নয় জানালে চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামানসহ বেশ কিছু লোক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে আহত অবস্থায় তাকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় চেয়ারম্যানকে আসামি করে মামলা করেছেন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। মামলার পরও প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করছে না।
যে কারণে বিএমএ’র শুক্রবার রাতে জরুরি সভা ডেকে শনি ও রোববার ধর্মঘটের ডাক দেয়। এর আগেও জরুরি সভা ডেকে বৃহস্পতিবার ধর্মঘট পালন করা হয়।
এদিকে, ধর্মঘটের ফলে খুলনার সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও স্বজননেরা। সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা।
রোববার সকালে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা সাইফুল্লা আকন বাংলানিউজকে বলেন, ধর্মঘটের কারণে শনিবার এসেছি, সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি। আজও হাসপাতাল বন্ধ।
আমারা এখন কোথায় যাব? আমাদের রোগীরা কি এখন সেবা না পেয়ে মারা যাবে? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা চিকিৎসকের ওপর হামলা করলে তাদের বিচার করবেন। সাধারণ রোগীদের জিম্মি করে কি লাভ।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বেলা সাড়ে ১১টা) ধর্মঘট চলছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৬
পিসি