ঢাকা: প্যারামেডিকেল শিক্ষার জন্য আলাদা বোর্ড গঠন করছে সরকার। চিকিৎসা সেবায় দক্ষ জনবল তৈরি এবং প্যারামেডিকেল শিক্ষায় সমন্বিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এ লক্ষে বাংলাদেশ প্যারামেডিক্যাল শিক্ষা বোর্ড আইনের খসড়াও প্রস্তুত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
গত ৬ মার্চ সিনিয়র সহকারী সচিব মাহফুজা আকতার স্বাক্ষরিত মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে প্রকাশিত খসড়া আইনটির ওপর বিশেষজ্ঞদের মতামত চাওয়া হয়েছে। আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে হবে। খসড়াটি প্রকাশ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা সেবায় দক্ষ জনবল তৈরি এবং প্যারামেডিকেল শিক্ষায় সমন্বিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং এ ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ আনতে ২০১৫ সালে এ উদ্যোগ নেয় সরকার।
এরই ধারাবাহিকতায় ‘বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল শিক্ষা বোর্ড আইন-২০১৫ খসড়া প্রস্তুত করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মেডিকেল শিক্ষা বোর্ড নামে একটি বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই বোর্ড হবে স্বাধীন ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। এই বোর্ডের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন করা এবং হস্তান্তর করার ক্ষমতা থাকবে।
বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল শিক্ষা বোর্ডের প্রধান হবেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান ছাড়াও সদস্য সচিবসহ অন্য সদস্যদের মধ্যে পদাধিকার বলে এবং সরকার মনোনীত সদস্য থাকবেন আরও ১৪ জন।
তিন বছর মেয়াদে বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ করবে সরকার। চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে। এছাড়া সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়মিত তিন বছরের অভিজ্ঞতা এবং প্রশাসনিক পদে দুই বছরের অভিজ্ঞতা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক পদে দুই বছরের অভিজ্ঞতাসহ ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এই বোর্ডে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা অনুষদের ডিন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার, ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব পদাধিকার বলে সদস্য থাকবেন।
এছাড়া সরকারি মেডিকেল কলেজের একজন অধ্যক্ষ, সরকারি ডেন্টাল কলেজের একজন অধ্যক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব, সরকারি হেলথ ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যক্ষ, সরকারি মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে একজন অধ্যক্ষ, বেসরকারি হেলথ ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যক্ষ, বেসরকারি মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে একজন অধ্যক্ষকে বোর্ডের সদ্স্য মনোনীত করবে সরকার।
আর সদস্য সচিব হবেন যিনি বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল শিক্ষা বোর্ডের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
বোর্ড পরিচালনায় কমিটি
প্যারামেডিকেল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বিভিন্ন কমিটির সভায় সভাপত্বি করবেন। এসব কমিটির মধ্যে রয়েছে- পরিচালনা বোর্ড, একাডেমিক কমিটি, সিলেকশন কমিটি, ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কমিটি, জনবল কাঠামো কমিটি প্রমোশন কমিটি এবং সময় সময় প্রয়োজনে গঠিত অন্যান্য কমিটি।
বোর্ডের তহবিল
এই বোর্ডের একটি তহবিল থাকবে। বাংলাদেশ প্যারামেডিক্যাল শিক্ষা বোর্ড তহল নামে এর নামকরণ হবে। ‘দ্য বেঙ্গল মেডিকেল কাউন্সিল (ইস্ট বেঙ্গল এমনমেন্ড) বিল ১৯৪৯’ এর অধীন উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ, এই আইনের অধিন নির্ধারিত অর্থ, বোর্ড কর্তৃক অর্জিত সম্পত্তি, সরকারের দেওয়া অনুদান, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের তহবিল বোর্ডের তহবিলে জমা হবে।
চেয়ারম্যান ও সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে এই তহবিলের অর্থ উত্তোলন করা যাবে। বোর্ডের তহবিল সংরক্ষণ হবে প্রচলিত আইনে।
বোর্ডের ক্ষমতা
এই বোর্ডে সব প্যারামেডিকেল ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট পরিচালনা, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সব ধরণের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। ডিপ্লোমা মেডিকেল ইনস্টিটিউটের স্বীকৃতি ও অনুমোদন দিতে পারবে।
প্রশ্ন ফাঁসে ১০ বছরের কারাদণ্ড
প্যারামেডিকেল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেলে এবং জড়িত থাকার অভিযোগ আদালতে প্রমাণ হলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে।
বাংলাদেশ সময় : ০৯৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬
এসএমএ/পিসি