ঢাকা: ‘সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করুন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন’- প্রতিপাদ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার (০৭ এপ্রিল) উদযাপিত হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে প্রতি বছরের ০৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপিত হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
বুধবার (০৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরেন।
বর্তমান সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের জনসংখ্যার বিরাট অংশ অর্থাৎ ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বের জনগোষ্ঠী ডায়াবেটিসের শিকার। এ বৃহৎ উপার্জনক্ষম জনগোষ্ঠী জাতীয় আয়ের অংশীদার। ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা এবং প্রতিকূল আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে এ জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে অনেকাংশে দূরে থাকছে। অপরিণত বয়সে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের অনেকের মৃত্যু হচ্ছে, আবার অনেকে অক্ষমতার কারণে অন্যের বোঝা হয়ে বেঁচে আছেন। এ ব্যাপারে যথাযথ জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি।
ডায়াবেটিস বর্তমান বিশ্বের সর্বাপেক্ষা গুরুতর রোগগুলোর মধ্যে একটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, পৃথিবীতে প্রায় ৩৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। ২০১২ সালে ডায়াবেটিসের কারণে ১৫ লাখ মানুষ মারা যান। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ডায়াবেটিসে মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ মানুষের মৃত্যুর সপ্তম কারণ হবে ডায়াবেটিস। উন্নত দেশে সাধারণত অবসরের পরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে এ রোগে আক্রান্তের বয়স ৩৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের মতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ছিলেন ৭১ লাখ।
উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রম, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ, মানসিক প্রশান্তি, ধুমপান বর্জন, নিয়মিত ওষুধ সেবন, শরীর পরীক্ষা, ব্লাড গ্লুকোজ পরীক্ষা, রক্তচাপ পরীক্ষা, দৃষ্টিশক্তির পরির্বতন সম্পর্কিত চেক-আপ ইত্যাদির মাধ্যমে ডায়াবেটিসজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
তবে রোগী ও তার স্বজনদের রোগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও দায়িত্বশীল আচরণ একান্ত কাম্য। ডায়াবেটিস এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা করা বাঞ্ছনীয়।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সেমিনার আয়োজন, স্যুভেনির প্রকাশ, ডায়াবেটিস নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদর্শনী, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, সড়কদ্বীপ সজ্জিতকরণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, জারিগান, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ডায়াবেটিসজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, একটি বৈষম্যহীন স্বাস্থ্য পরিসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিনামূল্যে আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ‘শেখ হাসিনা হেলথ কেয়ার কর্মসূচি’ শুরু করেছি। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, কালিহাতি ও মধুপুরে পাইলট প্রকল্প চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্যসচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক দীন মোহাম্মদ নুরুল হকসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর