কুমিল্লা: কুমিল্লায় শেখ ফরিদ (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মুখমণ্ডল অস্বাভাবিক হয়ে গেছে।
অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফলে ২৫ বছর বয়সে প্রথমে শেখ ফরিদের নাকের মাংস বৃদ্ধি পায়।
ফরিদ এই জেলার চান্দিনা উপজেলার দুই নম্বর বাতাগাছি ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।
তিনি সাতদিন ধরে নগরের কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে আসার পর বিষয়টি জনগণের গোচরে আসে।
কৃষি পেশায় নিয়োজিত ফরিদ ২২ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের তিন বছরের মাথায় বিরল এ রোগ দেখা দেওয়ার পর স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান বাবার বাড়িতে। বিয়ের তিন বছরের মাথায় সংসার জীবনের ইতি ঘটে তার। তাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো সন্তান নেই।
বিরল এ রোগে ফরিদের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। তাই তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন। রোগ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ফরিদ নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। কৃষি জমিতে যাওয়াও বন্ধ করে দেন। বিগত পাঁচ/ছয় বছরে বাড়ি থেকে বাইরে যাননি। আত্মীয়-স্বজনকেও তেমন দেখা দেন না তিনি। নিরবে নিভৃতে বাড়ির একটি কক্ষেই কাটিয়ে দিচ্ছেন বছরের পর বছর।
বিগত ১০ বছর ধরে অনেক চিকিৎসা করানো হলেও কোনো কাজ হয়নি। বরং দিন দিন সমস্যা বেড়েছে। তবু আশা ছাড়ছে না ফরিদের পরিবার।
ফরিদের ছোট ভাই নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, অস্বাভাবিক মুখমণ্ডলের জন্য তার ভাই কারো সঙ্গে মিশতে চান না। তিনি একা ঘরে থাকতে পছন্দ করেন। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। তারপরও তারা চেষ্টা করছেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিবার সচ্ছল নয়। এ অবস্থায় সরকার যদি ভাইয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়, তাহলে আমরা উপকৃত হবো।
এ রোগের ব্যাপারে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মির্জা মু. তাইয়েবুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শেখ ফরিদের রোগটি খুবই বিরল। তিনি সাতদিন আগে আমার কাছে এসেছেন। আমি কিছু মেডিকেল পরীক্ষা করেছি। এটি কী ধরনের রোগ বা কেন এ রোগ হয় তা এখনই বলতে পারছি না। বুধবার (২৭ এপ্রিল) ফরিদের মুখের টিস্যু নিয়ে বায়োপসি করতে দেবো। বায়োপসিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা কুমিল্লা ও ঢাকার পাশাপাশি প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানো হবে।
তিনি আরো জানান, খাবার খাওয়ার সুবিধার্থে মঙ্গলবার রাতে তার মুখগহ্বর অস্ত্রপচার করে একটু বড় করা হয়েছে। বায়োপসির ফলাফল সাতদিন পর পাওয়া যাবে। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী অস্ত্রপচার করবো। দেখা যাক কি হয়। এ বিরল রোগ দেখা দেওয়ার আগে ফরিদ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পিজি হাসপাতাল) দুই বছরের জায়গায় পাঁচ বছর ধরে টিবি রোগের ওষুধ সেবন করেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
এসআই