ঢাকা: ম্যাগি নুডলসে সিসাকাণ্ডের পর দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে নতুন করে বিপাকে পড়েছে নেসলে। সুইস ফুড জায়ান্ট নেসলের ভারতীয় শাখার তৈরি ম্যাগি নুডলসে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর ভাবমূর্তি নিয়ে মারাত্মক সংকটে পড়ে কোম্পানিটি।
যেমন মিরপুর-১ নাম্বারের বাসিন্দা মিসেস এলিজা জানান, তার বাচ্চার জন্য এক সঙ্গে কয়েকটি গুঁড়া দুধ ন্যান-১ কেনা হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু দুধের কৌটা যে নষ্ট তা খালি চোখে বোঝার কোনো উপায় নেই। বাচ্চাকে ফিডারের সাহায্যে খাওয়ানোর পর অনবরত বমি করতে থাকে। এর পর পেট ব্যথাসহ জ্বর শুরু হয়। পরে একটা কৌটা ফেরত দেয়া হয়।
একই অভিযোগ মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা হাওলাদার ইমরানের। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার ভাইপোর জন্য একটি নামিদামি সুপার শপ থেকে ন্যান-১ এর একটি গুঁড়া দুধের কৌটা কিনি। দুধ উৎপাদনের তারিখ ওভার হয়নি। কিন্তু দুধ ফিডারে দেয়ার পর দানা দানা হয়ে যায়। এরপর ফেরত দিতে গিয়ে সুপারশপটির কাছ থেকে হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক বার্গেনিং করার পর ৮৩০ টাকার মধ্য থেকে কিছু অর্থ ফেরত আনি। এর পর থেকে নেসলের ন্যান-১ কেনা বাদ দিয়েছি।
নগরীতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ক্রেতা নেসলের গুঁড়াদুধে ক্ষুব্ধ হয়ে সুপারশপে ফেরত দিচ্ছেন। শিশুদের নানা রোগ থেকে রক্ষা করতেই নেসলের গুঁড়া দুধ কেনা থেকে বিরতও থাকছেন। এমনকি যেসব ক্রেতা নেসলের গুঁড়া দুধ কিনেছেন তারা সুপারশপে ফেরত দিয়ে যাচ্ছেন।
যেমন মোহাম্মদপুর রিং রোডের আজমিরী বাজার সুপারশপে ক্রেতারা নেসলের ন্যান-১ ফেরত দিয়ে যাচ্ছেন।
আজমিরী বাজার সুপারশপের সুপার ভাইজার শ্রীতি মারিয়া সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ক্রেতা নেসলের ন্যান-১ গুঁড়াদুধ ফেরত দিয়ে গেছে। নেসলের ন্যান-১ খেয়ে বাচ্চারা বমি করছে বলেও অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
মোহাম্মদপুরে জনসেবা ফার্মেসির এক কর্মকর্তা নেসলের ন্যান-১ গুঁড়াদুধের বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, আগে নেসলের গুঁড়াদুধে ব্যাপক ক্রেতা চাহিদা ছিল। কিন্তু বারবার ক্রেতা অভিযোগ পাওয়ায় এই শিশু খাদ্য আর বিক্রি করি না। এখন ন্যান-১ এর বদলে অন্য দুধ বিক্রি করি।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযোগ কেন্দ্রে গুঁড়াদুধ নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ জমা পড়তে শুরু করেছে। অভিযোগ এসেছে ন্যান ও ল্যাকটোজেন গুঁড়াদুধেরও।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, গুঁড়াদুধ নিয়ে ক্রেতা অভিযোগ বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে নেসলের গুঁড়াদুধ অন্যতম।
বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের (বিএমএস) চেয়ারপার্সন ড. এসকে রায় বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মায়েদের গুঁড়োদুধ ব্যবহারে প্রলুব্ধ করা হলে মিডিয়ার নামে মামলা করতে হবে। প্রয়োজনে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করতে হবে। ফার্মেসি ও হাসপাতালের কাছে গুঁড়োদুধ বিক্রি রোধে নজরদারি বাড়াতে হবে।
ব্র্যাকের গবেষক ফাহমিদা আক্তার বলেন, গুঁড়োদুধ পানে নবজাতক শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। গুঁড়োদুধ খাওয়ানোর ফলে শিশু ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।
নবজাত শিশু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, বিলিয়ন ডলার খরচ করে গবেষণায় প্রমাণিত, একমাত্র মায়ের বুকের দুধই পারে শিশুকে রক্ষা করতে। শিশুকে রক্ষা করতে হলে গুঁড়োদুধ বয়কট করতে হবে।
প্রসূতি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর টিএ চৌধুরী বলেন, টেলিভিশনে সিগারেটের বিজ্ঞাপন যদি বন্ধ হতে পারে তবে গুঁড়োদুধের কেন নয়? সিগারেটের মতো গুঁড়োদুধের বিজ্ঞাপনও দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৬
এমআইএস/জেডএম