ঢাকা: তিন পা নিয়ে জন্ম নিয়েছিল চৈতি। ঢাকায় অস্ত্রোপচার করে অতিরিক্ত পা’টি কেটে ফেলা হয়।
চৈতির হতদরিদ্র বাবা-মায়ের ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ সম্ভব না হওয়ায় একটি এনজিও সম্পূর্ণ খরচ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় নিচ্ছে তাকে।
গত বছরের ১৭ মার্চ গাজীপুরের একটি হাসপাতালে জন্ম নেয় চৈতি। প্রথম সন্তান মৃত জন্ম নেওয়ায় এবার চৈতির জন্য বাবা-মা ছিলেন উদগ্রিব। তবে মা-বাবার এ আনন্দ চৈতির জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বিষাদে পরিণত হয়। কেননা, স্বাভাবিক দু’টি পা ছাড়াও পেটের নিচ থেকে আরো একটি পা নিয়ে জন্ম নেয় সে।
ফলে চৈতির জন্ম খুশির পরিবর্তে বাবা-মায়ের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জন্মের পর থেকে পেটের নিচে অস্বাভাবিক পায়ের কারণে প্রস্রাব-পায়খানা করতে পারতো না চৈতি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেটের নিচ থেকে ছোট পা’টি আলাদা করা হয় তার। পেটের কাটা অংশে কলোস্টোমি ব্যাগ লাগানো হয়েছে। এতে করে প্রস্রাব-পায়খানা করতে পারে সে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আরেকটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেলভিক বোন (শ্রোণি হাড়) অপারেটের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ অপারেশনটি সফল হয়নি। এর ফলে শ্রোণি হাড় তার শরীরে নানা সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এতে চোখের রোগ, পায়খানার রাস্তা-জরায়ুতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় তার চিকিৎসা দেশের বাইরে করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ড ইউনিট-২ এর চিকিৎসক ড. জাফর বলেন, শিশুটির শরীরে মায়ের পেটে নষ্ট হওয়া জমজ শিশুর একটি পা যুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে শিশুটির দু’টি অপারেশন হয়েছে। পা আলাদা করা হয়েছে। এখন প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তাসহ বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। একটি বেসরকারি এনজিও তাকে বাইরে চিকিৎসা করানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
এতে করে চৈতির সুস্থ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গরিব বাবা-মায়ের ব্যয়বহুল এ চিকিৎসার খরচ চালানোর সামর্থ্য না থাকায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বেসরকারি এনজিও অ্যাসাইনটিং অ্যাকশন ফর চেঞ্জিং অব লাইভলিহুডস (আঁচল ট্রাস্ট)। অ্যাবনরমাল শিশুদের সাহায়্যকারী সংস্থাটি শিশুটিকে সুস্থ স্বাভাবিক করার জন্য উন্নত চিকিৎসা দিতে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শিশুটির চিকিৎসার মানবিক কারণে ভিসা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাস।
আগামী ২৭ জুলাই শিশু চৈতির মা তাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
আঁচল ট্রাস্ট্রের চেয়ারম্যান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ড গঠন করে মেলবোর্নের হাসপাতালে চৈতির চিকিৎসা করানো হবে। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাস, রোগী কল্যাণ সমিতি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আমাদের অনেক সহায়তা করেছে। আশা করি, শিশুটি সুস্থ স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসবে’।
চৈতির বাবা আসাদ ফকির পেশায় একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, মেয়েকে নিয়ে অনেক বিপদে ছিলাম। এনজিও আঁচল চিকিৎসার জন্য মেয়ে ও তার মাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাচ্ছে। এখন আল্লাহের রহমতে যদি সুস্থ হয়’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
এমসি/এএসআর