ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চিংড়িতে জেলি আতঙ্কে মাছ ব্যবসায়ীরাও

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
চিংড়িতে জেলি আতঙ্কে মাছ ব্যবসায়ীরাও মাছে জেলি নেই দাবি ব্যবসায়ীদের, ছবি: ডিএইচ বাদল/ ভিডিও: শেখ জাহিদুজ্জামান

যাত্রাবাড়ী,মানিকনগর, দয়াগঞ্জ ও জুরাইন বাজার ঘুরে: শুধু ক্রেতা নয়, চিংড়িতে জেলি আতঙ্কে ভুগছেন রাজধানীর মাছ ব্যবসায়ীরাও। মাছটিতে ‍বিভিন্ন অপদ্রব্য পুশ ঠেকাতে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসনিক টিম। ফলে বাজারে যেন জেলি পুশ করা মাছ না ঢুকতে পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন মাছ ব্যবসায়ীরাও।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) যাত্রাবাড়ী,মানিকনগর, জুরাইন ও দয়াগঞ্জ বাজারে সরেজমিনে মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।  

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মাছ বাজারের পাইকারী মাছ ব্যবসায়ী সালাম মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, কিভাবে মাছে অপদ্রব্য পুশ করা হয় তা আমরা জানি না।

তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) যাত্রাবাড়ী মাছ বাজারে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক মাছ ব্যবসায়ীকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। তাই আমরা এখন জেলি আতঙ্কে রয়েছি।

চিংড়ি মাছে বিভিন্ন অপদ্রব্য পুশের কাজটি মূলত খুলনা ও বাগেরহাটের স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা করছেন বলেও জানান ঢাকার এই মাছ ব্যবসায়ী।
 
চিংড়ি মাছ কিনতে আসা তৌফিক বলেন, চিংড়ি মাছ কার না প্রিয় বলেন? কিন্তু কিছু অসাধু মাছ ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার  আশায় এই মাছটিতে বিভিন্ন অপদ্রব্য পুশ করছেন।   ফলে সবকিছু জেনেও আমাদের খেতে হচ্ছে। কেননা আমরা নিরুপায়। তবে জেলি পুশ করা মাছ দেখলেই চেনা যায়। কেননা এমন মাছের মাথা মোটা থাকে। ফলে মাথায় চাপ দিলে আঠা জাতীয় এক ধরনের পদার্থ এমনিতেই বের হয়ে আসে। তাই চিংড়ি মাছ নয়, যেকোনো মাছ কেনার আগে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।  চিংড়িতে জেলি আতঙ্কে মাছ ব্যবসায়ীরাও
 
দয়াগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো.শরীফ বলেন, বেশির ভাগ চিংড়ি মাছ খুলনা অঞ্চল থেকে আসে। আর খুলনা অঞ্চলের মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা চিংড়ি মাছ কেনন। তবে চিংড়ি মাছের মাথায় ও লেজে সুইয়ের মতো সিরিঞ্জ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে জেলি ঢুকানো হয়। যা সাধারণত লিচুর মতো আঠাযুক্ত এক ধরনের দ্রব্য। আর কোনো চিংড়িতে জেলি পুশ করলে চিংড়ির মাথা সাধারণত ভরাট থাকে। আর এই বিষয়টি লক্ষ্য রেখে তারা চিংড়ি মাছ কেনেন। তবে তিনি এটাও বলছেন, অধিকাংশ খুলনা ও বাগেরহাটের ঘেরের চিংড়িতে জেলি পুশ করা হয়। আর এই জেলি পুশের কাজটি করে থাকেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা।
 
চিংড়ি মাছে জেলি পুশের বিষয়ে জুরাইন  মাছ বাজারের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এটা আমরা করি না। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করছেন। যারা এমন জঘন্য কাজটি করে তারা মানুষের সাথে প্রতারণা করছেন। কিন্তু আমরা পারি না মানুষকে ধোঁকা দিতে। আবার ধরা খেলে জরিমানার সাথে জেলও রয়েছে। এখন হঠাৎ হঠাৎ প্রশাসন অভিযান চালায়। ফলে সতর্কতার সাথে ব্যবসা করতে হচ্ছে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড এ্যাকোয়া কালচার অনুষদের ডিন আহসান হাবীব বাংলানিউজকে বলেন, ওজন বাড়ানোর জন্য চিংড়ির পেটে ক্ষতিকারক জেলি পুশ করা হয়। এই জেলি চিংড়িতে পুশ করার ফলে মানবদেহে কি ধরনের ক্ষতি করতে পারে সেটা নিয়ে এখন আমাদের গবেষণা প্রয়োজন। কেননা জেলির উৎসে যদি হেবি মেটাল থাকে তাহলে সেটা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। শুধু তাই নয়, চিংড়িতে জেলি পুশ করে সেটা বিদেশে রপ্তানি করা হলে এতে যেমন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, তেমনিভাবে আবার আমরা অর্থনেতিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর ৫ হাজার কোটি টাকার মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে চিংড়ি। কিন্তু কিছু  অসাধু ব্যক্তি চিংড়িতে জেলিসহ তরল পদার্থ পুশ করে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি করতে চান। যা দণ্ডনীয় অপরাধ। অন্যদিকে এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে মৎস্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এছাড়া চিংড়িতে বিভিন্ন তরল পদার্থ পুশ রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। হাতনাতে অনেককে আটক করে জেল ও জরিমানাও করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, চিংড়ি পরীক্ষার জন্যে ঢাকা,চট্টগ্রাম,কক্সবাজার ও খুলনাতে উন্নত প্রযুক্তির ল্যাবরেটরি করা হয়েছে। এরপরও যদি কোনো চক্র মৎস্য সেক্টরকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করে তবে সেটা বরদাশত করা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

** ‘৬শ’র মাল সাড়ে ৩শ’তে লইবেন, জেলি তো থাকবোই’
** বাইছা লন, ক্যানসার ছাড়া লন
** সব বাজারেই জেলি চিংড়ি!
** কাপড়ের বিষাক্ত নীলে চকচকে চিংড়ি
** শক্ত খোলসেই পোয়াবারো চিংড়ি ভেজালিদের
** চিংড়ি ভীতিতে ক্রেতা-ভোক্তা!
** কিভাবে কী মেশে চিংড়িতে
** এ যেন টাকা দিয়ে মৃত্যু কেনা !
 ** মোসলেম চেনালেন ভেজাল চিংড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এসজে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।