ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মনোরোগ চিকিৎসকের সংকট!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৭
মনোরোগ চিকিৎসকের সংকট!

ঢাকা: দেশে মানসিক রোগীর প্রকৃত কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালিত দুই গবেষণা অনুযায়ী, ১৬ কোটি মানুষের দেশে কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা রয়েছে এমন লোকের সংখ্যা সোয়া ২ কোটির বেশি। অথচ মনোরোগ চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র দুই থেকে আড়াইশ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশের সবচেয়ে পুরনো পাবনার মানসিক হাসপাতালটিতে রয়েছে জনবলের সংকট। সেখানে চিকিৎসকরাও এখন যেতে চাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, পাবনার মানসিক হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। হাসপাতালটিও পুরনো হয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি চিকিৎসক নিয়োগ ও সংস্কার করে হাসপাতালটিকে আধুনিক করতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। দেশভেদে শতকরা ৩ থেকে ১৭ জন মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক জরিপ মতে, বাংলাদেশের শতকরা ৪ দশমিক ৬ শতাংশ নারী-পুরুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত। যে কোনো বয়সে এমনকি শিশুদের মধ্যেও এটি দেখা দিতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে বিষণ্নতার লক্ষণ প্রথমবারের মতো দেখা যায়।

জরিপে বলা হয়, ১৫ থেকে ১৮ বছর ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এর ঝুঁকি কিছুটা বেশি। যারা ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, মৃগীসহ দীর্ঘেমেয়াদী রোগে ভুগছেন তাদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেক বেশি। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, একাকিত্ব, আর্থিক ক্ষতি, পারিবারিক ও সামাজিক সর্ম্পকের সমস্যা, বিবাহবিচ্ছেদ, প্রবাস জীবন, অভিবাসন, মাদকসেবন ও নারীদের গর্ভকালীন ও প্রসবপরবর্তী সমস্যার কারণেও এটি হতে পারে।

ঢাকায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসকসংখ্যা ৪০ এর চেয়ে কিছু বেশি। তবে রোগীর সংখ্যার তুলনায় তা নগণ্য বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ২০০৩ সালে ১৮ বছরের নিচে এবং ২০১১ সালে ১৮ বছরের উপরের মানুষের ওপর দুটি গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণায় দেখা যায়, ১৮ বছরের উপরে ১৬ শতাংশ মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে ১৬ জনেরই কোনো না কোনো মানসিক রোগ/সমস্যা আছে। আর ২০০৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে মানসিক রোগীর সংখ্যা ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে ১৮ জন মানসিক রোগে আক্রান্ত। এ দুই গবেষণা অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে মানসিক রোগীর সংখ্যা সোয়া ২ কোটির বেশি।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে বলেন, দেশে মানসিক রোগের চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা ২০০ থেকে ২৫০ হবে। মোট জনসংখ্যা ও রোগীর তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জেলা পর্যায়ে একজন করে মানসিক রোগের কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ধারণা করছে ২০৩০ সাল নাগাদ বিষন্নতা হয়ে উঠবে তৃতীয় ইর্মাজিং রোগ, সেহেতু আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে তা মোকাবেলার জন্যে।

মোহিত কামাল বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে মানসিক রোগ ধরা পড়লে সাইকো থেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। যে কোনো কারণেই মানসিক রোগ হতে পারে। শতকরা ৯৯ ভাগ মানসিক রোগীই ভালো হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যা থাকার পরও রোগীরা আর মানোচিকিৎসকের কাছে আসতে চায় না। দেখা যায়, অন্য ডাক্তাররা যখন সুস্থ করতে পারেন না, তখন শেষে পর্যায়ে আসেন মানোচিকিৎসকের কাছে। শুরুতেই মানসিক রোগের চিকিৎসা করা গেলে সে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগতে থাকলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। কাজেই মানসিক রোগ সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৭
এমএন/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।