ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কৈশোরবান্ধব কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে কিশোরীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
কৈশোরবান্ধব কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে কিশোরীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিচ্ছে কিশোরীরা

ভোলা: স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ভোলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চালু করা হয়েছে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা।

এর মাধ্যমে সর্বস্তরের কিশোর-কিশোরীরা এ কর্নারে এসে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, আয়রন ট্যাবলেট খাবার নিয়ম, পিরিয়ডকালীন পরিচর্যা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বাল্যবিয়ের কুফলসহ নানা বিষয় সেবা পেয়ে থাকে। ইতোমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে ভোলা সদর, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার তৃণমূলের কিশোর-কিশোরীরা।

পর্যায়ক্রমে যা অন্যান্য উপজেলায়ও চালু করা হবে। এখানে সেবা নিতে আশা অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য বলে জানা যায়। এ কর্নার পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করছেন ইউনিসেফ বাংলাদেশ।

সরেজমিন জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের ১ নং ওয়ার্ডের ফারজানা বেগম (১৪)। এ বছর অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উঠেছে। নিয়মিত স্কুলে যেত। হঠাৎ সে পিরিয়ডকালীন নানা সমস্যায় পড়ে। ফলে তার সাময়িক স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি কিশোরী ক্লাবে যেই মেয়ে নিয়মিত অংশ নিয়ে কিশোরীদের মাতিয়ে রাখতো সেই মেয়ের ক্লাবে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের মাঠকর্মী ইয়াছমিন আক্তারের সহায়তায় তাকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে পিরিয়ড চলাকালীন পরিচর্যা ও আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হয়।  

ফারজানা বলে, আমি এসময়ের যত্ন সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না। ফলে পিরিয়ড চলাকালে নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম। এমনকি ভয়ে মাকেও জানাইনি। তাই দিনে দিনে অসুস্থ হতে থাকি। মনে হতো বড় কোনো রোগে আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু কিশোরী কর্নারে গিয়ে যখন এসময়ের করণীয় ও বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে পরার্মশ পেয়েছি এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ বোধ করছি।

শুধু ফারজানা নয় এই কিশোরী সেবা কেন্দ্রে সেবা নিতে আশা রতনপুর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিমা, সালমা, ফাতেমা, লিপি, লিজাসহ আরো অনেকেই জানায়, তারা এ ইউনিয়নে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতো। কিন্তু এখানে যে কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য একটি কর্নার রয়েছে তা তারা জানতো না। এখন জানার পরে নিয়মিত এখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।  
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে কিশোরীরা
শিবপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সেলিনা আক্তার জানায়, কিশোরীরা আগে এখানে কম আসতো। বর্তমানে কিশোরী কর্নার হওয়ায় তাদের সেবা নেওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে নিয়মিত ১০-২০ জন সেবা নিচ্ছে। কিশোরীদের আমরা স্যানিটারি প্যাডের ব্যাবহার, বয়ঃসন্ধি সময়ের খাবার-দাবার, বয়ঃসন্ধিকাল ও কৈশোরের ঝুঁকি, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়, বয়সন্ধিকাল ও শরীরের পরিবর্তন, ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে আমরা কিশোরীদের সচেতন করে থাকি।

শিবপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. মোসলেউদ্দিন মসু বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিশোরী কর্নার হওয়াতে কিশোরীরা এখানে নিয়মিত সেবা নিচ্ছে। ফলে এলাকায় অসুস্থ কিশোর-কিশোরীর হার কমে যাচ্ছে। তবে এতো কিছুর মধ্যে সমস্যা হলো এখানে ওষুধ সরবরাহ কম। ফলে অনেকেই সেবা নিতে এসে ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।

ইউনিসেফের বরিশাল বিভাগের প্রধান এ এইচ তৌফিক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে মোট জনসংখার প্রায় এক-চতুর্থাংশ কিশোর-কিশোরী। এদের মধ্যে কৈশোরকালে সন্তান জন্মদানের হার এখনো অনেক বেশি। মোট বার্ষিক জন্মের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সন্তান জন্ম দিচ্ছে কিশোরী মায়েরা। এদের শিক্ষা, জীবন-দক্ষতা ও স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। আর এর জন্য সবার আগে চাই সচেতনতা। তাই আমরা কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ভোলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করেছি। কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, এর মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা তাদের বয়সন্ধিঃকালের নানা বিষয় সর্ম্পকে পরার্মশ পাবে।
 
ভোলা জেলা সিভিল সার্জেন রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল একজন কিশোর-কিশোরীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এ সময় কিশোর-কিশোরীরা যাতে ভুল পথে পা না বাড়ায় তার জন্য আমাদের কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।

এখানে আমরা বাল্যবিয়ে ও মাদকের কুফল সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আসছি। বর্তমানে ৩টি উপজেলায় এর কার্যক্রম চালু রয়েছে।
ভবিষ্যতে ভোলার ৭ উপজেলায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।