ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বেড়েছে হেপাটাইটিস বি’র প্রকোপ ও কবিরাজের কদর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
বেড়েছে হেপাটাইটিস বি’র প্রকোপ ও কবিরাজের কদর রাঙামাটি

রাঙামাটির বরকল উপজেলায় হেপাটাইসি বি ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ১২ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হঠাৎ করে রোগটি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার দূর্গম রেগেনাছড়ি গ্রামের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বলে জানা গেছে।

ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, আক্রান্তদের মধ্যে অনেকে স্থানীয় কবিরাজের ওষুধ খেয়ে ভালো হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। যাদের বেশিরভাগ দরিদ্র।

এছাড়া সচ্ছল ব্যক্তিরা উপজেলার বাইরে ভালো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছে। তবে ওই গ্রামের অনেকে এ রোগে আক্রান্ত হওয়া স্বত্ত্বেও লোক লজ্জার ভয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে  না।  


হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রেগেনাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ছায়া রানী চাকমা (৪৩)বাংলানিউজকে বলেন, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে বিছানায় শোবার পর শরীরে কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বর অনুভূত হয়। বমি বমি ভাব হলেও বমি হয় নি। সঙ্গে শরীরে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে গ্রামের এক কবিরাজের শরণাপন্ন হই।  

কবিরাজ দিয়ে কাজ না হওয়ায় জেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি জানতে পারেন হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত তারা ১২জন হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। আক্রান্তরা হলেন- রেগেনাছড়ি গ্রামের বিজু মনি চাকমা (৩৮), সুভাষ মিত্র চাকমা (৩৫), মিকো চাকমা (৩৫), কালোবরণ চাকমা (২৫),  উজ্জল কান্তি চাকমা (৪২), বুদ্ধ কুমার চাকমা (৩৫), বণিতা চাকমা (১৯), জুয়েল চাকমা (১৭), রূপাধন চাকমা (৩৬), কীর্তিমান চাকমা (১৯) এবং সুনীল চাকমা (৩২)।

এ বিষয়ে ওই গ্রামের রতন চাকমা জানান- গত বছর তার ছোট ভাই রিপন চাকমার মধ্যে প্রথম হেপাটাইটিস বি ভাইরাস জনিত রোগটি পরীক্ষায় ধরা পড়ে। এ রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে  চিকিৎসা করার পরেও তার ভাইকে  বাঁচানো যায়নি।

এরপর তার পরিবারের অন্য সদস্যদের জেলা সদরের ডায়াগোনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সুভাষ মিত্র চাকমাসহ তার মেয়ে বণিতা চাকমা ও ছেলে জুয়েল চাকমার হেপাটাইটিস বি পজিটিভি পাওয়া যায়। এতে তিনি ও তার পরিবারের মধ্যে পরিবারের আতঙ্ক সৃষ্ঠি হয়।

তাছাড়া বর্তমানে আক্রান্ত সন্তানদের চিকিৎসা করাতে সামান্য জুম চাষের সামান্য আয় দিয়ে কুলাতে পারছেন না।  

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মংক্যছিং সাগর  বাংলানিউজকে বলেন, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস জনিত রোগটি হওয়ার আগে টিকা দিতে হবে। রোগটি হওয়ার পরে টিকা দিলে কোন লাভ হবে না। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।  

ডা. সাগর আরও বলেন, এ রোগটি পজিটিভ হলেও আতঙ্কের কিছু নেই। দীর্ঘ চিকিৎসায় এ রোগ নির্মূল করা যায়। তবে তার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে ও পরার্মশ মেনে চলতে হবে।

সামগ্রিক বিষয়ে সিভিল সার্জন  ডা. শহীদ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত টিকা দেয়া, সচেতনতা ও পরার্মশ মেনে চললে সমস্যা হয় না। ওই গ্রামে একটি মেডিকেল টিম সার্ভের জন্য পাঠানো হবে। সার্ভে টিমের রিপোর্ট অনুসারে পরবর্তীতে যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে।     

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৮
এমএএম/ এসআইএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।