ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বিশ্বে শীর্ষ ‘মানুষ হত্যাকারী’ সংক্রামক রোগ যক্ষ্মা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
বিশ্বে শীর্ষ ‘মানুষ হত্যাকারী’ সংক্রামক রোগ যক্ষ্মা ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: যক্ষ্মা রোগকে বিশ্বের শীর্ষ মানুষ হত্যাকারী সংক্রামক রোগ হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি, এ রোগে প্রতিদিন ৪ হাজার ৫০০ জন প্রাণ হারায়। সুদীর্ঘকাল ধরে যক্ষ্মা বিশ্বব্যাপী অন্যতম প্রধান সংক্রামক রোগের স্থান ধরে রেখেছে। এ রোগে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। 

বিশেষ করে দরিদ্র এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সংক্রামক এ রোগটি ২০৩৫ সালের মধ্যে নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি (এ্যন্ড টিবি) কর্মকৌশল ঘোষণা করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-২০১৫ সালে যক্ষ্মাকে মহামারি হিসেবে উল্লেখ করে এ রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য কর্মকৌশল অনুমোদন করেছে। উচ্চাভিলাষী সেই কর্মকৌশল অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে যক্ষ্মারোগের মৃত্যুহার ৯৫ শতাংশ কমাতে হবে। পাশপাশি শনাক্তকরা যক্ষ্মা রোগীর হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।  

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে। সংস্থাটির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগী সর্বাধিক তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাদের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বে ১০ দশমিক ৪ মিলিয়ন লোক নতুন ভাবে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয় এবং ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটে থাকে উন্নয়নশীল দেশে, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে কর্মক্ষম নারী পুরুষই বেশি।  

দেশের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর লাখে ২২১ জন নতুন করে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৩৬ জন মারা যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৬ জন যক্ষ্মারোগী আছে। এর মধ্যে শিশু যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৩৫২ জন।

২০১৮ সালে যক্ষ্মা বিষয়ে নিউউয়র্কে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের ‘আন্ডার টু অ্যান্ড টিউবারক্লোসিস: এন আরজেন্ট গ্লোবাল রেসপন্স ইপিডেমিক’ শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যক্ষ্মা নির্মূলে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হন। সেই বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার ২০২২ সালের মধ্যে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার রোগীকে শনাক্ত এবং চিকিৎসার আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এরমধ্যে এক লাখ ১০ হাজার শিশু এবং ১৭ হাজার ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মারোগী অন্তর্ভূক্ত থাকবে। এছাড়া ৯ লাখ ৬৯ হাজার রোগীকে এ সময়ে যক্ষ্মা প্রতিরোধের আওতায় আনার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমবিডিসি) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি মনে করি, নির্ধারিত সময়েই আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো। কেননা প্রচলতি পদ্ধতির পাশপাশি বাংলাদেশ সরকার ১৯৩টি জিন এক্সপার্ট মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মাসহ সব ধরনের যক্ষ্মারোগী শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া কর্মসূচি সমন্বয়, পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার অংশীদারিত্বে নেওয়া কর্মসূচি সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাই আমি মনে করি, নির্ধারিত সময়ে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের পাশপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সক্ষম হবো।  

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোববার (২৪ মার্চ) বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ইটস টাইম’ অর্থাৎ যক্ষ্মা নির্মূলের এখনই সময়। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শনিবার (২৫ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।  

সেখানে জানানো হয়, যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে সরকার যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ ও প্রকোপের হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায়। এ লক্ষ্যে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ব্র্যাকসহ ২৫টি বেসরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।  

এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি ছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ চেষ্ট অ্যান্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশন মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে দু’দিন ব্যাপী ইনোগ্রাল সেশন এবং সায়েন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
এমএএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।