ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস হোমিওপ্যাথিক ওষুধ, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস বুধবার (১০ এপ্রিল)। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের জন্মদিনে পৃথিবীব্যাপী এই দিবসটি পালন করা হয়। ২০০৩ সালে বিশ্বব্যাপী হোমিওপ্যাথি দিবস পালন শুরু হলেও বাংলাদেশে হচ্ছে ২০১৪ থেকে।

জানা গেছে, বিজ্ঞানী হ্যানিম্যান ১৭৯৬ সালে ‘হোমিওপ্যাথি’ নামক একটি চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। হ্যানিম্যানই প্রথম বলেন, ভেষজ বস্তুকে ওষুধ হতে হবে তার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার গুণে।

সাধারণ ভেষজ গুণাবলি থাকলেই কোনো বস্তু ওষুধ হিসেবে স্বীকৃত হবে না, যতোক্ষণ না তার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার বিকাশ ঘটানো হয়।

একটি বস্তুর অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার উন্নয়ন ঘটিয়ে যখন তা সুস্থ মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে এবং তার ঔষধি গুণাবলির প্রকাশ দেখা যাবে, তখন তাকে ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এভাবে কোনো বস্তুর অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডাইনামাইজেশন বা পোটেন্টাইজেশন। হোমিওপ্যাথিতে ওষুধ হচ্ছে শক্তির আধার। কোনো ওষুধ বস্তুর অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার উন্নয়ন ঘটিয়ে যখন শক্তিকরণ করা হবে, তখন তা ওষুধে রূপান্তরিত হবে। এ ওষুধ যখন রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হবে, তখন তা আরোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এভাবে অনেক সাধারণ ভেষজ গুণাবলিহীন বস্তুও হোমিওপ্যাথিতে ওষুধে রূপান্তরিত হয়ে রোগীর জন্য আরোগ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ অ্যালোপ্যাথিক ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের দেশীয় ওষুধ শিল্পে বিপ্লব চলমান রয়েছে। দেশের চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদন হয় এবং বিশ্বের প্রায় ১১৩টি দেশে রফতানি হয়। এতো কিছুর পরও দেশে প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাপদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার উপরে এবং আন্তর্জাতিক বাজার ৬৫০ কোটি টাকারও বেশি। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৯ শতাংশের উপরে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমানে সরকারি তালিকাভুক্ত ২৬৯টিরও বেশি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা রয়েছে। যারা দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করে আসছে। এর মধ্যে জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনকারী অ্যালোপ্যাথিক ৯০০টি, ইউনানি ২৬৮টি, আয়ুর্বেদিক ২০১টি, হোমিওপ্যাথিক ও বায়োকেমি ৭৯টি এবং হারবালের নয়টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অর্থাৎ অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য চিকিৎসাপদ্ধতিরও প্রসার বাড়ছে।

এই চিকিৎসাপদ্ধতির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের অনেক মানুষ এখনও দরিদ্র। বিভিন্ন রোগ, যেমন- কিডনির সমস্যা দূর করতে সর্বশেষ পদ্ধতি অপারেশনের মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা। যা অনেক ব্যয়বহুল। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে শুধুমাত্র ওষুধ দিয়ে তা দূর করা সম্ভব হয়েছে। এই চিকিৎসার খরচও খুব কম। সব মিলিয়ে দেশের এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী মূলত অ্যালোপ্যাথি বাদ দিয়ে হোমিওপ্যাথিসহ অন্যান্য চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। আর চিকিৎসকদের মতে, রোগী চিকিৎসা নিয়ে মানসিকভাবে সন্তুষ্ট থাকলে রোগমুক্তির পথ অত্যন্ত সহজ হয়। শুধুমাত্র কম খরচের দরুণ এই চিকিৎসা নিয়ে মানসিক প্রশান্তির মাধ্যমে রোগমুক্তি হচ্ছে।

এছাড়া মানুষের গোপনাঙ্গের সমস্যা বা যৌন সমস্যা দূরীকরণে হোমিওপ্যাথি ও হারবাল-ইউনানির সাফল্য অ্যালোপ্যাথির চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে মানসিক প্রশান্তির কথা উল্লেখ করে চিকিৎসকরা বলেন, যৌন সমস্যার বেশিরভাগই মানসিক সমস্যা। এক্ষেত্রে রোগীরা লজ্জাবোধ করে চিকিৎসকদের কাছে আসতে চান না। তারা হয় নিজে জেনে ওষুধ কিনে খান বা এসব হোমিওপ্যাথি ও হারবাল-ইউনানি কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। এক্ষেত্রে অজস্র হয়রানির স্বীকারও হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

দিবসটি পালনে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং সারাদেশের হোমিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলো কেক কাটা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

দিবস পালনের তাৎপর্য জানিয়ে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, হ্যানিম্যান একজন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী। বিশ্বব্যাপী তার জন্মদিন পালিত হয়। তার জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতেই বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস পালন করা হয়।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের পক্ষ থেকে বুধবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
এমএএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।