ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সিএইচসিপিরা অবৈধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করছেন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
সিএইচসিপিরা অবৈধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করছেন বক্তব্য রাখছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: দেশের চিকিৎসা খাতে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) অবৈধভাবে রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। তাদের রাখা হয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য। অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করতে পারেন শুধু চিকিৎসকরাই। আমাদের এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। 

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে অধিক কার্যকরী ও মানসম্পন্ন করা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।  

তিনি বলেন, দেশের শিশু-কিশোরদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষিত করতে হবে।

যদিও আমাদের প্রাইমারি হেলথ কেয়ার ব্যবস্থাপনা অন্য দেশের থেকে যথেষ্ট উন্নত। রোগ প্রতিরোধ শুরু হয় এ প্রাইমারি হেলথ কেয়ার থেকে। যার মাধ্যমে দেশের জনগণ নিজেরাই নিজেদের সেবা করতে পারে। এ সেবা কার্যক্রমকেও ঢেলে সাজাতে হবে। কেননা, দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে।  

নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশে নন-কমিউনিকেবল রোগ বাড়ছে। এজন্য আমাদের জীবনযাত্রার মান পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। কেননা, আমরা এ ধরনের রোগ প্রতিরোধে এখনো প্রস্তুত নই। তাই, এটাকেও প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের অন্তর্গত করতে হবে।  

চিকিৎসকদের মেডিক্যাল চর্চা বিষেয়ে তিনি বলেন, আমাদের রেফারেল সিস্টেম এখনো দুর্বল। চিকিৎসকদের এক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সময় কমাতে হবে। সরকারি হাসপাতালে তাদের বেশি সময় দিতে হবে। দুই ধরনের প্র্যাকটিস বিশ্বের অন্য দেশে নেই। এক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বেতন বাড়ানোর ভাবা হচ্ছে।  

দেশের ৫০ শতাংশ চিকিৎসা প্রাইভেট সেক্টরে হলেও সেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় বেসরকারি খাতের বড় অবদান থাকলেও, আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। অনেক সমস্যার কথা শুনি। কিন্তু, সমাধান করতে পারি না। কেননা, আমাদের সে চর্চা নেই। আমাদের ক্ষমতা আছে, দুর্নীতিগ্রস্ত যেকোনো হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার। কিন্তু, আমরা তা করতে পারছি না, চিকিৎসকদের সংযুক্তি বা যারা এ দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের সদিচ্ছার অভাবে।  

দেশে চিকিৎসকদের অনুপাত ঠিক নেই উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের অ্যানেসথেসিস্টের অনেক অভাব রয়েছে। অথচ, এ ধরনের চিকিৎসকদের খুব প্রয়োজন। দেখা যায়, আমাদের কার্ডিওলজিস্ট অনেক থাকলেও, কার্ডিয়াক সার্জন নেই। এমনকি কার্ডিয়াক নার্সও নেই। আমাদের পেডিয়াট্রিক সার্জনের অভাব রয়েছে। এসব অভাব পূরণ করতে হবে। আমরা ইমার্জেন্সি চিকিৎসকদের পদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে পদ সৃষ্টি করা ছাড়াও চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের অনেক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে রয়েছে, যাদের কোনো হাসপাতাল নেই। রোগী না দেখেই তারা চিকিৎসক হয়ে যাচ্ছেন। এগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। নইলে এ ধরনের কোনো সমস্যার সমাধান করা হবে না।  

স্বাস্থ্য খাতে বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, বাজেটে মেইনটেন্যান্সের জন্য মাত্র ছয় থেকে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু, এ বরাদ্দ প্রয়োজন ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। বাজেটের দিকে আমরা আরও নজর বাড়াব। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা করে বাজেটের বিষয় নির্ধারণ করব।  

জাহিদ মালেক বলেন, দেশের এনজিওগুলো স্বাস্থ্য খাতে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তারা নিজেরাও কাজ করছে না, আমাদেরও করতে দিচ্ছে না। এতে আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। এক্ষেত্রে নজরদারি বাড়াচ্ছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাইরে কর্মকর্তাদের সংস্পর্শ বেশি। এটা অবশ্যই কমাতে হবে।  

দেশে গড় আয়ুর পাশাপাশি রোগের হারও বাড়ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের গবেষণা আরও বাড়াতে হবে। আমাদের গবেষণা খুব কম, এ সংক্রান্ত বাজেটও কম। রোগ নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা চেইন অব কমান্ড আরও ভালো করতে হবে। এছাড়া, নেতৃত্বের দিকেও নজর দিতে হবে। সব পর্যায়ের নেতৃত্ব ঠিক হলেই সেবাদানে আমরা বদ্ধপরিকর হতে পারব। এক্ষেত্রে, দায়িত্ব হস্তান্তর করা যাবে না, নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফায়েজ, ইউএনএফপিএর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডা. এস এ জে মো. মুসা, অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ইকনোমিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ হামিদ, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ ইকবাল আনোয়ার, অধ্যাপক ডা. মো. লিয়াকত আলী, ডা. মো. আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।  

সেমিনারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক পাঁচটি জাতীয় গাইডলাইনের মোড়ক উন্মোচন করেন। গাইডলাইনগুলো হলো- ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং অব পেশেন্ট সেফটি, ন্যাশনাল গাইডলাইন অব ইনফেকশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল, অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল স্টেয়ার্ডশিপ কিউআই ফ্রেমওয়ার্ক, ন্যাশনাল আর এমএনসিএএইচ কিউআই ফ্রেমওয়ার্ক, ন্যাশনাল আইসিইউ কিউআই ফ্রেমওয়ার্ক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
এমএএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।