ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্ভব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্ভব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের সেমিনারে অতিথিরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, সরকার মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বদলাচ্ছে সংস্কৃতি ও আমাদের জীবনধারা।

আর সেই সঙ্গে বাড়ছে মানসিক জটিলতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে গণ্য করার আহবান জানিয়েছেন। বর্তমান সরকার মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ও মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অধিকার বা সুযোগের সমতা বিধানে বদ্ধপরিকর। এজন্য ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন সংশোধন এবং ২০১৮ সালে মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, যে কোনো সমস্যা হলে তা দূর করার চেয়ে আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ কাজে সবার সহযোগিতা চান প্রতিমন্ত্রী।

সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হচ্ছে।

সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব কামরুন নাহার।

তিনি বলেন, কোনো দেশের জনগোষ্ঠী কতটা সক্রিয় ও উৎপাদনশীল হবে, তা নির্ভর করে তাদের শারীরিক, মানসিক এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার সুষ্ঠু সমন্বয়ের ওপর। বর্তমান সরকার আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

কামরুন নাহার অবলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ও সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা পরিবর্তনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

সেমিনারের বিশেষ অতিথি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, এসব পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের হতাশা ও অস্থিরতা দূর করে তাদের মেধা ও মননকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সহায়তা করবে।  

সেমিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক ড আবুল হোসেন বলেন, শারীরিক শাস্তির মতো মানসিক স্বাস্থ্যেরও পরিচর্যা প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে, বিশেষ করে নারী-শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয়, বিভাগীয় এমনকি জেলা পর্যায়ে ন্যাশনাল-রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার স্থাপন করেছে।

সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পর্ক আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারপারসন মোছাম্মৎ নাজমা খাতুন। তিনি প্রথমে মানসিক স্বাস্থ্যের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা তুলে ধরেন। নাজমা খাতুন বলেন, বর্তমান বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় আট লাখ নারী ও পুরুষ আত্মহত্যা করছে। বিশ্বজুড়ে এই হার বেড়ে যাওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মহত্যা প্রতিরোধের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে আসছে। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. জহির উদ্দিন বলেন, মানসিক চাপ, প্রতিযোগিতামূলক আচরণ, যথাযথ বিনোদনের অভাব, পারিবারিক অশান্তি ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে যেমন বাধা হিসেবে কাজ করছে, ঠিক তেমনি বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি ও আত্বহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
এমআইএইচ/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।