ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘আমরা মানুষ অইলে তো হাসপাতাল-ডাক্তার থাকতো’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
‘আমরা মানুষ অইলে তো হাসপাতাল-ডাক্তার থাকতো’

মানিকগঞ্জ: ‘আমরা যারা চরে বাস করি তারা কি মানুষ? মানুষ অইলে তো হাসপাতাল থাকতো, ডাক্তার থাকতো! আমাগো এহেনে কিছুই নাই। আমাগো আছে খালি এক আল্লাহ।’

বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হরিহরদিয়া এলাকার বদু মিয়ার স্ত্রী হনুফা বেগম।  

হনুফা বেগম বলেন, ‘কাইল এক ঘন্টা নৌকা বাইয়ে (চালিয়ে) নাতিকে নিয়া আইছি হাসপাতালে (কমিউনিটি ক্লিনিক) তাও দেহি ডাক্তার নাই, তাই আইজ আবার আইলেম।

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজার। এ বিশাল জনসংখ্যার স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই চরাঞ্চলে। যাও একটি বা দু’টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে সেগুলোও অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। এতে চরাঞ্চলের মানুষ মৌলিক চাহিদা স্বাস্থ্যসেবা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, লেছড়াগঞ্জ চরাঞ্চলের মানুষ রোগে আক্রান্ত হলেও স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে যেতে চায় না। কেননা, সেখানে গেলে অধিকাংশ সময়ই তা বন্ধ থাকে। এসব ক্লিনিকে আসতে হয় হাঁটু পানি অতিক্রম করে। চরগুলোতে স্বাস্থ্য সেবার তেমন সুয়োগ না থাকায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় অধিকাংশ রোগীকে উপজেলা হাসপাতালে পৌঁছার আগেই মারাত্মক জটিলতায় পড়তে হয়। এছাড়া চরাঞ্চলে দুই একটি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও এগুলোর অবস্থা করুন। চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা না থাকায় এগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারি স্বাস্থ্য কর্মীদের চরাঞ্চলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রয়েছে অনীহা। চরের নারী ও শিশুদের নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলেও তা জানানোর মতো কাউকে পান না তারা।

পানি বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।  ছবি: বাংলানিউজ

হরিহরদিয়া এলাকার নুকু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাগো হাসপাতালে ডাক্তার আসে না। আসলেও হবিদ হবিদ চইলে যায়। জ্বরের জইন্যে যে বরি দেয়, প্যাট খারাপ অইলেও একই বরি দেয়। ওনারা যে ক্যেমতে ডাক্তার অইলো?’

হরিহরদিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিবিএইচসি সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন আসি এবং রোগীদের ওষুধ দেই। হঠাৎ পানি বাড়ার কারণে অনেক সময় আসতে দেরি হয়। এ সময়টাতে অনেক ঘুরে যেতে পারে। ’

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বাংলানিউজকে বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা তা করছি। যদি কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান না করে, তবে সেসব কমিউনিটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।