ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

স্তন ক্যান্সার রোধে ভীতি নয়, দরকার সচেতনতা

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
স্তন ক্যান্সার রোধে ভীতি নয়, দরকার সচেতনতা

ঢাকা: স্তন ক্যান্সার রোধে দরকার সচেতনতা। আর সেটা শুরু করতে হবে নিজের স্বাস্থ্য সচেতনতা থেকেই। পাশাপাশি পারিবারিক সচেতনতাও জরুরি।

ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি হয় কুসংস্কার থেকে। এর জন্য অনেকেই সঠিক চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নিতে যান।

এতে আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়েন রোগীরা। প্রতিবছর ১২ হাজার ৭৬৪ নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউন কার্যালয়ে নারী সাংবাদিকদের জন্য ‘স্তন ক্যান্সার সেলফ স্ক্রিনিং’ কর্মশালায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।  

বাংলা ট্রিবিউন ও রোটারি ক্লাব অব ঢাকা ম্যাভেরিকস যৌথভাবে কর্মশালাটির আয়োজন করে।

রোটারি ক্লাব অব ঢাকা ম্যাভেরিকস আয়োজিত তৃতীয় আন্তর্জাতিক ক্যান্সার মেডিক্যাল মিশন ২০১৯ এর অংশ হিসেবে এ কর্মশালাটি পরিচালিত হয়েছে।  

ওয়ার্ল্ড হেলথ, পোর্টল্যান্ড মেইনের সৌজন্যে কর্মশালাটি পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা তিনজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ।  

২০১৭ সাল থেকে রোটারি ক্লাব অব ঢাকা ম্যাভেরিকস এ মিশন আয়োজন করে আসছে। এ বছর ১২-২৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দলটি কর্মশালা পরিচালনা করবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট অব পার্টনার্স ওয়ার্ল্ড হেলথ এর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ ম্যাকক্যালান, ক্যান্সার সার্জন ডাক্তার সুজানে হোয়েক্সট্রা, ফিজিও থেরাপিস্ট মেরি বার্গ।  

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রোটারিয়ান ও পুষ্টিবিদ সুষ্মিতা খান।  

এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- রোটারি ম্যাভেরিকসের ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক শামস রাশেদ জয়।

কর্মশালার শুরুতেই জুলফিকার রাসেল রোটারি ম্যাভেরিকসের সদস্য ও আসা চিকিৎসকদের বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমরা সবাই জানি, প্রতি বছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উদযাপন করা হয়। পুরো মাসজুড়েই চলে সচেতনতা বিষয়ক কার্যক্রম। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সারা বিশ্বে স্তন ক্যান্সারে নারী মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।  

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) সর্বশেষ প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ হাজার ৭৬৪ নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮৪৪ জন মারা যান। তাই আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা। সে কারণেই বাংলা ট্রিবিউন রোটারি ক্লাব অব ঢাকা ম্যাভেরিকসের সঙ্গে যৌথভাবে নারী সাংবাদিকদের জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করেছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজনের মধ্যদিয়ে বাংলা ট্রিবিউন সর্বস্তরে ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে বলে তিনি জানান।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ ম্যাকক্যালান বলেন, ক্যান্সারের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, স্তনের সমস্যা হচ্ছে জেনেও অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যান না। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যান না মায়েরা। বিশেষ করে যাদের বিয়ের যোগ্য মেয়ে আছেন। গ্রামের নারীরা মনে করেন, তাদের যদি স্তনে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে তাদের মেয়েদের বিয়েই হবে না। অনেকে আবার মনে করেন, এ ধরনের অসুখের কারণে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। এ আশঙ্কাগুলোর কারণে অনেকেই একেবারে শেষ মুহূর্তে চিকিৎসকের কাছে যান। তখন আর কিছুই করার থাকে না।  

তিনি বলেন, স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি সচেতনতা। এ বিষয়ে জানা, শিক্ষিত হওয়া। নিজের জানার পাশাপাশি জানাতে হবে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। তাই নিজেদের স্তন নিজেদেরই পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষা করার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। সেই পদ্ধতে যে কেউ ঘরে বসেই নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করতে পারবেন। এ পরীক্ষাটি স্তন পরীক্ষার একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো ধরনের লাম্প বা গোটার মত কিছু হাতে যদি বাধে, তাহলেই যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও কাছে গিয়ে এর সঠিক রোগ নির্ধারণ করা যাবে না। তাই চিকিৎসকের কাছেই যেতে হবে।

ডা. সুজানে হোয়েক্সট্রা বলেন, সাধারণত ৩০ বছর পর কোনো মেয়ে যদি তার প্রথম বাচ্চা না নেয়, অথবা কারও যদি ৩০ বছর পরেও বাচ্চা না হয়, সেই মেয়েটি স্তন ক্যান্সারের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।  

এছাড়া বাচ্চা হওয়ার পর বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, হরমোনের সমস্যা থাকলে হরমোনাল কোনো ওষুধ নিয়মিত খেলে, মানসিক চাপ, ধূমপান করা, অতিরিক্ত ওজন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে কাজ করা, সুষম খাদ্য গ্রহণ না করা এবং অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে স্তন ক্যান্সারে ঝুঁকে পড়ে মেয়েরা।  

সুজানে বলেন, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে হলে ওজন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে, খেতে হবে সুষম খাদ্য।  

তিনি বলেন, সুষম খাদ্য বলতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফল, সবজি, শস্য, আমিষ এবং দুগ্ধজাতীয় খাওয়ার থাকতেই হবে।  

সুজানে বলেন, এ কাজগুলো নিয়মিত করা হলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যায়।

কর্মশালায় জানানো হয়, পারিবারিক ইতিহাস থাকলেও যেমন স্তন ক্যান্সার হতে পারে, তেমনি ইতিহাস না থাকলেও হতে পারে। ক্যান্সার নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে বেশ কিছু ভীতি আছে যা ঠিক নয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সাল ভালো হয়। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। প্রতিমাসে নিজেদের স্তন নিজেদের পরীক্ষা করে দেখা, কোনো সন্দেহ তৈরি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, মেমোগ্রাফি করা, বিশেষ করে ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৯
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।